ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

আদালতের নির্দেশে আমিই বৈধ মেয়র: বুলবুল

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৭
আদালতের নির্দেশে আমিই বৈধ মেয়র: বুলবুল রাসিক কার্যালয়ে নিজ কক্ষে মেয়র বুলবুল

রাজশাহী: মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে দিনভর চলে নাটকীয়তা। শেষ পর্যন্ত বেলা ৩টা ৫ মিনিটে নগর ভবনে মেয়রের কক্ষের সদর দরজা খুলে দেওয়া হয়। ৩টা ১০ মিনিটে টানা ২৩ মাস পর চেয়ারে বসেন রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।

কিন্তু বিধিবাম! চেয়ারে বসার পর জানতে পারেন ১০ মিনিট আগেই তার বরখাস্তের ফ্যাক্স নগর ভবনে পৌঁছে গেছে।

রোববার (০২ এপ্রিল) দুপুরে দায়িত্ব নেওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে ফের এভাবেই বরখাস্ত হন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।

এ সময় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বরখাস্তের কথা উল্লেখ করে বুলবুল বলেন, “আইনের মধ্যে দিয়েই আমার বরখাস্তের আদেশ সর্বোচ্চ আদালতে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাই আমার বিরুদ্ধে রাজশাহী শহরে যদি রাজনৈতিক বা সামাজিক কারণে ৫০টি মামলাও হয় সেজন্য আমাকে বরখাস্ত করা যাবে না। ”

“সুপ্রিম কোর্ট যেই অর্ডার বা যেই আদেশ দিয়েছেন বা যে সাজেশন দিয়েছেন, তাতে আগামী নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আমাকে আর বরখাস্ত করা যাবে না। আদালতের নির্দেশের পরে সরকারের গণতন্ত্র পরিপন্থি যেই কর্মকাণ্ড সেগুলো আর ঘটতে পারে না। আমি স্থানীয় সরকারের এই বিভাগকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। কিন্তু বর্তমান যে অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছে তা দেশের জন্য অশনি সংকেত। ”

রাসিক মেয়র আরও বলেন, “আদালতের নির্দেশে আমিই বৈধ মেয়র। আজকে অসৎ ও দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তার কারণে যেসব কর্মকাণ্ড করা হয়েছে তা দুঃখজনক, ন্যক্কারজনক। আমি সকাল ১০টা থেকে এখানে বসে রয়েছি। কিন্তু আমার যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের দোচালা ভূমিকা আমি দেখতে পেয়েছি। ”

“আজকে সরকারি এই সেবা প্রতিষ্ঠানকে চোরের আখড়া তৈরি করে ফেলা হয়েছে। গত দুই বছর এই সকল কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে যেই কাউন্সিলর দায়িত্বে ছিলেন আমি বসেই দেখতে পেয়েছি তার নামে দুর্নীতির অভিযোগ। তাহলে সহজেই বোঝা যায় গত দুই বছরে সিটি করপোরেশনের সেবা থেকে জনগণ বঞ্চিত হয়েছে। সাধারণ জনগণের সেবাপ্রাপ্তির জায়গাটি অবমূল্যায়িত হয়েছে। ”

“তাই আমি বলতে চাই আজকে যারা এই অনিয়ম দুর্নীতি ও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত আছেন আগামী দিনে জনগণের কাছে তার কৈফিয়ত দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশবলে আমি এখন থেকে মেয়র। আদালত থেকে পরিবর্তী কোনো নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আমি নিয়মিত অফিস ও দায়িত্ব পালন করবো। ”

বুলবুল বলেন, “এখানে কাল থেকে যদি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর অসদাচারণ দেখি তাহলে আমি তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো। তবে আশা করছি সবাই আমাকে সহযোগিতা করবেন। ”

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পাঠানো ফ্যাক্স সম্পর্কে মেয়র বলেন, “আমার কাছে কোনো ফ্যাক্স আসেনি। এটা আদালতের কোনো আদেশ নয়। এটা ষড়যন্ত্রমূলক ফ্যাক্স। এর আইনগত বৈধতা নেই। ”

এর পর মেয়র বেলা সাড়ে ৩টার দিকে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে তার কক্ষ থেকে বের হন। পরে নিচে নেমে সিটি করপোরেশনের গাড়িতে নগর ভবন থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। তবে শপথের পর জাতীয় পতাকা না পাওয়ায় বরখাস্তের আগে করপোরেশনের ওই গাড়ি ব্যবহার করেননি বুলবুল।
 
এদিকে, টানা ২৩ মাস পর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রের চেয়ারে বসতে না বসতেই ফ্যাক্সযোগে ফের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ আসে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, “মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের বিরুদ্ধে মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১, রাজশাহীর মামলা নং- ১৩৬/১৫ (বোয়ালিয়া থানার মামলা নং-১৭, ৮ ফেব্রুয়ারি-২০১৫) অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করেছ।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ (২০০৯ সালের ৬০ নং আইন) এর ১২ এর উপধারা (১)-এ সিটি করপোরেশনের মেয়রের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালতের গ্রহীত হলে সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে তাকে সাময়িক বরখাস্তের বিধান রয়েছে। ”

সেহেতু প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই আদেশে।

জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন বলেন, “ফ্যাক্স এসেছে আপনারাও দেখেছেন, আমিও দেখেছি। আর মেয়র মহোদয় কী বলেছেন সেটাও শুনেছেন। তবে এখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মানাটাই তাদের কর্তব্য। এরপরও উদ্ভুত পরিস্থিতে এখন কীভাবে কী করা যায় সেই ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। ”

এর আগে ২০১৫ সালের ৭ মে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরে ২০১৬ সালের ১০ মার্চ উচ্চ আদালত তার বরখাস্ত আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন। গত ২৭ মার্চ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মাহমুদুল আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এরপরই রোববার সকাল ১০টায় দায়িত্ব নিতে নগর ভবনে যান মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। গিয়ে দেখেন, তার কক্ষটি তালাবদ্ধ। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে নগর ভবনে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়রের একান্ত সচিবের কক্ষে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। পরে নগর ভবনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সময় নগর ভবন থেকে নেতা-কর্মীদের বের করে দেয় পুলিশ।

মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ২০১৩ সালের ১৫ জুনের সিটি নির্বাচনে ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। ওই বছরের ২১ জুলাই তিনি মেয়র হিসেবে শপথ নেন। পরে ১৮ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের ১৫ জুন তার পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৭
এসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।