বৃহস্পতিবার (০১ নভেম্বর) রাতে গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং এ কথা জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এ সংলাপ সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১০টার কিছু পরে শেষ হয়।
সাড়ে তিন ঘণ্টার এই সংলাপে নির্বাচনকালীন সরকার, খালেদা জিয়ার মুক্তি, রাজনৈতিক মামলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
সাত দফা দাবির মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এক নম্বর দাবি ছিল – ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদাসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে। ’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মূল দাবি ‘সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন’ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন ওবাদুল কাদের বলেন, আমরা সংবিধানের বাইরে যাবো না। আমরা একটা কথা বলেছি- নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) চিঠিতেও বিষয়টি উল্লেখ করেছেন সংবিধান সম্মত সকল বিষয়ে আলোচনা হবে। আমরা সংবিধানের বাইরে যেতে পারি না। এ কথা তাদের স্পষ্ট বলে দিয়েছি।
পড়ুন>> সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা, তবে সংবিধানের বাইরে কিছু নয়
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ঐক্য ফ্রন্ট নেতাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়েছেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনে দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। সিডিউল ঘোষণার পর সব দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। সরকার হস্তক্ষেপ করবে না। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কোন কারণ নাই।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেছেন, এটা আইনের ব্যাপার, আদালতের বিষয়। আইন আদালতের কোনো বিষয় সংলাপের মধ্যে আসতে পারে না। আর এই মামলা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দেওয়া। এই মামলা আমি ফাইল করিনি। আর তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা তো বিএনপিরই ছিলো।
আরও পড়ুন>>
** সংলাপ শেষ
কাদের বলেন, আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা ছিল। সেগুলো তদন্ত করে রিপোর্ট হয়েছে, কোনো মামলা প্রত্যাহার হয়নি।
রাজনৈতিক মামলা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক মামলার বিষয়টি তারা তুলে ধরেছেন। এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল, কামাল হোসেনকে প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের মামলার তালিকা দিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।
সভা-সমাবেশ বিষয়ে তিনি বলেন, সভা-সমাবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। তবে রাস্তা বন্ধ না করে মাঠে করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
লেভেল প্লেইং ফিল্ড ও বিদেশি পর্যটক প্রসঙ্গে সংলাপের আলোচনা তুলে ধরে কাদের বলেন, লেভেল প্লেইং ফিল্ড, বিদেশি পর্যবেক্ষকের দাবি ছিল তাদের। আমরা এসব বিষয়ে একমত হয়েছি। এ ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা থাকবে।
ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের বলেছেন, ইভিএম আধুনিক পদ্ধতি, সাপোর্ট করি। তবে এবার ইভিএম হয়তো নির্বাচন কমিশন সীমিতভাবে ব্যবহার করবে। এতে আমাদের সমর্থন থাকবে।
বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ড. কামাল হোসেনকে আমাদের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আপনিই বলুন, আপনিও তো ইলেকশন করেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে বহু নির্বাচনই হয়েছে এই দেশে। এসব নির্বাচনের মধ্যে কেবল মাত্র ২০০১ সালেই একবার সেনাবাহিনীকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া কোনো নির্বাচনে বাংলাদেশে সেনাবহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার ছিল না। কাজেই এখন কেন চান?
আবারো ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আলোচনার দুয়ার খোলা থাকবে। ঐক্যফ্রন্ট চাইলে আবারো আলোচনা হবে।
সংলাপে খোলা-মেলা আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঐক্যফ্রন্ট নেতারা ড. কামাল হোসেনসহ যারা কথা বলতে চেয়েছেন সবাই কথা বলেছেন। অনেকে একাধিক বার কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার কথা অখণ্ড মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন।
‘আমাদের পক্ষ থেকেও সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রেখেছেন। তাদের কিছু অভিযোগ ছিলো আমাদের নেতারা সেসব বিষয়ে আমাদের বক্তব্য তুলে দিয়েছেন। কিছু কিছু বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। ’
সংলাপে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের অবস্থান বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেসব যুক্তি দিয়ে কথা বলেছেন আমার মনে হয় তাদের অনেকে কনভিন্সড।
সাড়ে তিনঘণ্টার সংলাপের মাঝেই গণভবনে আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ২৩২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৮/আপডেট: ২৩৪৯ ঘণ্টা
এসকে/এমইউএম/এমএ/