ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

ঢাকা-২

নৌকার ‘ফ্যাক্টর’ নিজ দলের শাহিন ও আমানপুত্র

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮
নৌকার ‘ফ্যাক্টর’ নিজ দলের শাহিন ও আমানপুত্র স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কর্মিসভায় এক হয়েছিলেন অ্যাড. কামরুল ইসলাম ও শাহিন আহমেদ

কেরানীগঞ্জ থেকে ফিরে: এক সময় বিএনপির ঘাঁটি ছিল ঢাকা-২ আসন। রাজনৈতিক পালাবদলে এক দশক ধরে নির্বাচনী আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আসনটি ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থী খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে তাই একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

তবে আসনটিতে কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ আহ্বায়ক শাহিন আহমেদ মনোনয়ন দাবি করে আসছিলেন। কেরানীগঞ্জে তার আধিপত্য জোরালো।

কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর ও সাভারের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত এই আসনে কেরানীগঞ্জের ভোটাররা এমপি নির্বাচনে প্রভাব রাখে। সে হিসাবে কেরানীগঞ্জ ঘিরেই গরম হবে রাজনীতি। তবে শেষ মুহূর্তে কামরুলের সঙ্গে এক হয়েছেন শাহিন আহমেদ। সেটা ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন স্থানীয়রা। তবুও ধারণা করা হচ্ছে, এর কিছু প্রভাব পড়বে আগামী নির্বাচনে।

অন্যদিকে, আসনটিতে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আমান উল্লাহ আমানের ছেলে ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান। আমান উল্লাহ আমান অবিভক্ত কেরানীগঞ্জ (সাবেক ঢাকা-৩) আসনে ১৯৯১-২০০৬ সাল পর্যন্ত পরপর ৪ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। আসনটি এক সময় তার নেতৃত্বে বিএনপির ঘাঁটি ছিলো। গত দুই মেয়াদে তিনি নির্বাচন করতে পারেননি। প্রায় ১২ বছর পর তাকে মাঠে পেয়ে উজ্জীবিত হয়েছেন ঢাকা-২ আসনের বিএনপির নেতা-কর্মীরা। আমান উল্লাহ আমানের জনপ্রিয়তা প্রভাব ফেলবে তার ছেলে ইরফান ইবনে আমানের ওপর।

গত ১১ ডিসেম্বর উপজেলা শহীদ মিনার চত্বরে কর্মিসভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে একমঞ্চে আসেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও শাহিন আহমেদ। এই উদ্যোগে তাদের দু’জনের দূরত্ব কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ওই দিন কেরানীগঞ্জ উপজেলা চত্বরে কলাতিয়া এলাকার ছিদ্দিক মিয়া বলেন, ওদের (কামরুল ইসলাম-শাহিন আহমেদ) মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব ছিল। মিট হলে ভালো হবে। শাহিন আহমেদ নমিনেশন চেয়েছিলেন, কিন্তু কেন্দ্র দেয়নি। এজন্য একটু দূরত্ব ছিলো।
নির্বাচনী প্রচারণায় আমনা উল্লাহ আমানপুত্র ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমানপ্রচার-প্রচারণার প্রথম দিন ১১ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জেও ভোটের আমেজ ছিল সর্বত্র। উপজেলা চত্বরে এক নির্বাচনী অনুষ্ঠানে কথা হয় কোনাখোলা এলাকার আরিফের সঙ্গে।

ভোটের কী অবস্থা—জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখা যাক। আল্লাহ ভরসা! আওয়ামী লীগের দুই জন প্রার্থী ছিলো, তারা এক হয়েছেন। এখন ভালো ফলাফল আসবে। বিএনপির কোনো চিহ্ন দেখছি না, ফল তাদের আসবে কেমনে?

স্থানীয়রা বলছেন, বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান আইনি জটিলতায় নির্বাচন করতে পারছেন না। তবে তার ছেলে ইরফানকে ছোট করে দেখছেন না কামরুল ইসলাম। কারণ, তার পিছনে দলীয় নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। আমানকে জনপ্রিয় নেতা হিসেবেই দেখছেন তিনি।

স্থানীয়দের ভাষ্য, ঢাকা-২ ‘ক্রিটিক্যাল’ আসন। কেরানীগঞ্জের ৭ ইউনিয়ন, কামরাঙ্গীরচরের ৩ ওয়ার্ড, সাভারের ২টি ইউনিয়ন নিয়ে আসনটি গঠিত। সাভার ও কামরাঙ্গীরচরে আমানের আধিপত্য বেশি। কেরানীগঞ্জে শাহিনের দাপট বেশি। শাহিনের সাপোর্ট না পেলে কামরুলের বের হয়ে আসা কষ্টসাধ্য। অন্যদিকে বিএনপিতে কোনো বিভেদ নেই। গত দুই টার্মে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলো, আগে কখনও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলো না। এলাকাটি ছিলো বিএনপির ঘাঁটি। হজরতপুরে আমানের কথা বলবে। অন্যদিকে কেরানীগঞ্জে জাতীয় পার্টির কোনো অবস্থান নেই।

কেরানীগঞ্জ উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন (হজরতপুর, কলাতিয়া, তারানগর, শাক্তা, রোহিতপুর, বাস্তা ও কালিন্দী ইউনিয়ন)। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নং ওয়ার্ড, ঢাকা মেট্রোপলিটন কামরাঙ্গীরচর ও হাজারীবাগ থানার সুন্দরগঞ্জ ইউনিয়ন এবং সাভার উপজেলার আমিনবাজার ইউনিয়ন, তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন ও ভাকুর্তা ইউনিয়ন নিয়ে ঢাকা-২ আসন। এ আসনের মোট ভোটার প্রায় ৫ লাখ।

রোহিতপুর বাজারের চা দোকানদার রনি বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা-২ আসনে ভোটের হিসাব একটু জটিল। একদিকে বিএনপি অন্যদিকে আওয়ামী লীগ। দুই দলই প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ভোটের সময় কাছাকাছি এলে হিসাবটা চোখের সামনে চলে আসবে।

তবে ভোটের হিসাব নৌকার জন্য সহজ হয়েছে বলে দাবি করেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শাহিন আহমেদ। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি ঢাকা-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নৌকার পক্ষে শতভাগ কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে আমাদের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড-ভিত্তিক কার্যক্রম চলছে। নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে আমাদের সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

গত ১১ ডিসেম্বর সকাল থেকে কেরানীগঞ্জ উপজেলার ঘাটারচর এলাকায় শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতুর (৩য় বুড়িগঙ্গা সেতু/বসিলা ব্রিজ) সামনে থেকে প্রচারণা শুরু করেন ইরফান ইবনে আমান।

তিনি বলেন, আমার বাবা আমান উল্লাহ আমান এই এলাকা থেকে পরপর চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার আমলেই কেরানীগঞ্জের সিংহভাগ উন্নয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার এ এলাকায় নতুন করে কোনো উন্নয়ন করেনি। আমি নির্বাচিত হলে আমার বাবার মতো এ এলাকার অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন করবো।

ধানের শীষের বিজয়ের ব্যাপারে ইরফান ইবনে আমান বলেন, মানুষ এখনও আমার বাবাকে ভালোবাসে, আমিও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।

বুধবার (১২ ডিসেম্বর) কামরাঙ্গীর চর ঈদগাহ ময়দানে কামরুল ইসলাম তার প্রথম নির্বাচনী জনসভা করেন। কানায় কানায় পূর্ণ ছিল ঈদগাহ ময়দান।

নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে কামরুল ইসলাম বলেন, আমান উল্লাহ আমানের পুত্র তরুণ ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। রাজনীতিতে আসায় এই তরুণ প্রতিদ্বন্দ্বীকে আমি স্বাগত জানাই। নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন আমান উল্লাহ আমান।

এলাকার উন্নয়ন প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এই কামরাঙ্গীর চরে আগে নৌকা করে আসতে হতো। সেই কামরাঙ্গীর চরে এখন গাড়ি করে মানুষ আসা-যাওয়া করে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করলে আমি উন্নত নাগরিক জীবন উপহার দেব।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮
এমআইএইচ/ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।