আর এই ফাঁকে তার আধিপত্যের এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী। যদিও এ আসনে প্রার্থী হওয়ার কথা ছিলো খোকাপুত্র ইসরাক হোসেনের।
বিএনপির সমর্থক অধ্যুষিত এ আসনের ভোটাররা এটিকে তেমন একটা ভালো চোখে নেননি। কারণ বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, মহাজোটের প্রার্থী অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদের বিপরীতে খোকাপুত্র ইশরাক হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতো বলে মনে করছেন তারা। তবে ভেটারদের কেউ কেউ আবার মনে করছেন, প্রার্থী বিষয় নয়, প্রতীকই নির্ধারণ করবে জয়-পরাজয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৪, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫ ও ৪৬ ওয়ার্ড এবং কোতোয়ালী, ওয়ারী, সুত্রাপুর ও গেণ্ডারিয়া এলাকা মিলে এ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৬৯ হাজার ২৭৬ জন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আসনটিতে সুব্রত চৌধুরীর তেমন কেনো পোস্টার দৃশ্যমান নেই। পুরো এলাকাজুড়ে শোভা পাচ্ছে কাজী ফিরোজ রশীদের পোস্টার। তবে ফাঁকে ফাঁকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা এবং জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের পোস্টারও রয়েছে। তিনি হারিকেন মার্কায় নির্বাচন করছেন। রোববার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে সিদ্দিক বাজার এলাকায় গান-বাজনা, ঢাকা-ঢোল পিটিয়ে একদল লোককে হারিকেন মার্কার সমর্থনে মিছিল করতে দেখা গেছে।
এদিকে ফিরোজ রশীদের সমর্থনে একাট্টা মহাজোট। ছাত্রলীগও প্রচারণায় আছেন রশীদের পক্ষে।
রোববার টিপু সুলতান রোডে ওয়ারী থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান নুহাস বেশ কয়েকজন কর্মী নিয়ে লিফলেট বিতরণ করে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে।
নুহাস বাংলানিউজকে বলেন, দেশনেত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন মহাজোটের পক্ষে কাজ করতে। আমরা দল-মত নির্বিশেষে মহাজোটের এই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি।
আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ নিজ দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ফিরোজ রশীদও প্রচারণা চালাচ্ছেন দিনরাত।
রোববার তিনি পুরান ঢাকার পাতলাখান লেন, সেন্ট্রাল গার্লস স্কুল, লক্ষ্মীবাজার ও ধোলাইখাল এলাকায় গণসংযোগ করেন। পরে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কে যুবলীগ আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন।
ফিরোজ রশীদ বলেন, মনে রাখতে হবে মহাজোটের পরাজয় মানে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পরাজয়। দেশবিরোধী শক্তি চায় দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হোক। তাই মহাজোট ও নির্বাচন নিয়ে নানান ধরনের কুৎসা রটাচ্ছে। এসব প্রতিহত করেই সারাদেশে মহজোটের প্রার্থীদের বিজয়ের জন্য কাজ করতে হবে।
অন্যদিকে, পোস্টার না দেখা গেলেও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন সুব্রত চৌধুরী। গেন্ডারিয়া ও ওয়ারী এলাকাতে গণসংযোগকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশেনকে ব্যবহার করে আমাদের ভোটযুদ্ধ থেকে সরিয়ে রাখার জন্য শত রকমের অপচেষ্টা চালিয়েছিলো। আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাদের পোলিং এজেন্ট করা হবে তাদের প্রতি বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
সুত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা ফয়েজ খান বলেন, ফিরোজ রশীদ এ আসনে পরিচিত মুখ। ধানের শীষের প্রার্থী তো এ আসনের পরিচিত না। তার পরিবর্তে খোকার ছেলেকে দিলেও এলাকাবাসী তাকে নিজের লোক মনে করতো। এ হিসেবে লাঙল মার্কা ভালো অবস্থানে আছে।
তবে ওয়ারী এলাকার ভোটার সেলিম খান বলেন, ব্যক্তি প্রার্থী নয়, এবারের নির্বাচন মূলত প্রতীকের লড়াই। মহাজোট আর ঐক্যফ্রন্টের লড়াই।
আসনটিতে সাদেক হোসেন খোকাকে তৃণমূল থেকে সবাই সমর্থন দিয়েছিল একসময়। রাজনীতির পালাবদলে দেশান্তরী খোকার ছেলেও টিকতে পারেননি ভোটের মাঠে। তবে ভোটারদের অনেকেই এখনও খোকার ভক্ত, ধানের শীষের অনুসারী।
পুরান ঢাকা এলাকার এই আসনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মো. আবু তাহের হোসেন কাস্তে প্রতীক নিয়ে, জাতীয় পার্টি-জেপির সৈয়দ নাজমুল হুদা বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাজী মো. মনোয়ার খান হাতপাখা প্রতীক নিয়ে, গণফ্রন্টের আহমেদ আলী শেখ মাছ প্রতীক নিয়ে এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আক্তার হোসেন আম প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
ধোলাইখাল এলাকার গাড়ির যন্ত্রাংশের বিক্রেতা জর্জ মিয়া বলেন, এখানে এক নামেই খোকার ভোট। ১৯৯১ সালে শেখ হাসিনাও পারেননি খোকার সাথে। কিন্তু এবার প্রার্থী ভালো হয়নি ধানের শীষের। তবুও পুরান ভোটাররা তো আর দল চেঞ্জ করবে না। নতুন ভোটাররা কী করে সেটা দেখার বিষয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮
এমআইএইচ/ইএস/এমজেএফ