বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ নগরীর কৃষ্ণচূড়া চত্বরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ভোট-ডাকাতি করে নির্বাচনের আগের রাতেই ভোট লুট করে নিয়ে গেছেন, এটা ক্যাসিনোর চেয়েও বড় অপরাধ।
তিনি বলেন, কৃষকেরা এখন ধানের দাম পান না। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের জন্য টাকা পাচ্ছেন না। সব টাকা পাচার হচ্ছে সুইস ব্যাংকে। কারা দেশের টাকা লুট করছে দেশের মানুষ জানে। শুধু যুবলীগ-ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ লুটপাট করছে, আর আপনারা কি আঙুল চুষছেন?
জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সমাবেশের আগে বিএনপি নেতা লিটন আকন্দসহ ময়মনসিংহে প্রত্যেকটি উপজেলা থেকে ১০-১২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু, প্রশাসনের শত বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশে লাখো মানুষ উপস্থিত হয়েছে। কারণ, দেশের মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়।
সরকারের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, বেগম জিয়াকে বন্দি করে রাখতে পারবেন না। বন্দুক-পিস্তলের জোরে সব হবে না। ’৭১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে রক্ষীবাহিনী তৈরি করে নির্যাতন চালিয়েছিল। এখন নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে গুম-খুন করা হচ্ছে, পায়ে গুলি করা হচ্ছে। তবুও কারও মধ্যে ভয় নেই। এটাই বিএনপি। আমাদের সংগ্রাম কোনো দলকে ক্ষমতায় বসানো নয়। আমাদের সংগ্রাম গণতন্ত্রের মুক্তির সংগ্রাম, সংবিধান রক্ষার সংগ্রাম, দেশের পতাকা সমুন্নত রাখা, মা-বোনের নিরাপত্তার সংগ্রাম।
পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, পুলিশ ভাইদের বলছি, কেন আপনারা অপকর্মের দায়িত্ব নিচ্ছেন? পারলে জনগণের প্রতিপক্ষ না হয়ে লুটপাটকারীদের প্রতিহত করার দায়িত্ব নেন।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নেত্রীর মুক্তির জন্য আরও ঐক্যবদ্ধ হোন। খালেদা জিয়ার মুক্তি মানেই গণতন্ত্রের মুক্তি। দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, সরকারের প্রতিহিংসার কারণে আজ খালেদা জিয়া জেলে। গায়ের জোরে তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে যখন দেখলো, দেশের ৮০ ভাগ মানুষ ধানের শীষে ভোট দেবে, তখন ২৯ তারিখ রাতেই ভোট-ডাকাতি করে ফেলেছে সরকার।
মির্জা আব্বাস বলেন, নেত্রীর ভয়ের কিছু নেই। বাধা আসলে তা অতিক্রম করেই সমাবেশ হবে। হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে। এতে বিএনপির সমর্থন কমেনি, বরং বেড়েছে। মনে রাখবেন, এ সরকারের কর্মকাণ্ডেই খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন। এই সমাবেশ সেটাই প্রমাণ করে।
প্রশাসনের উদ্দেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আর মাতব্বরি করবেন না। খালেদা জিয়ার মুক্তির সমাবেশ আর অনুমতি নিয়ে হবে না। রাজপথে নামুন, আঘাত আসলে পাল্টা আঘাত হবে। এটা সাংবিধানিক অধিকার। মনে রাখবেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি মানেই গণতন্ত্রের মুক্তি।
তিনি বলেন, সমাবেশের আগে লিটন আকন্দসহ অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি গতকালই (২৫ সেপ্টেম্বর) জামিন পেয়েছিলেন, পরে আরও মামলা দিয়েছে। মনে রাখবেন, আপনারাও মামলা পাবেন। খালেদা জিয়া মুক্তি না পেলে, জেলখানা খালি না হলে আপনারা কোথায় থাকবেন?
সমাবেশের মাত্র দুই ঘণ্টা আগে নয়টি শর্তে অনুমতি দেয় স্থানীয় প্রশাসন। কথা ছিল, মিছিল সহকারে সমাবেশে প্রবেশ করা যাবে না। কিন্তু, এ শর্ত না মেনে মিছিল-শোডাউন করেই সমাবেশে যোগ দেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ও জেলা উত্তর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদারের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব আবদুল আউয়াল মিন্টু, খাইরুল কবীর খোকন, ফজলুল হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন, কামরুজ্জামান রতন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান, আবদুল বারী ড্যানী, আব্দুল্লাহ ফারুক, শামসুল আলশ তোফা, ডা. মাহাবুর রহমান লিটন, নূরজাহান ইয়াসমীন, আরিফা ইয়াসমীন, শাহ শহীদ সারোয়ার, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর মাহমুদ আলম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯
একে