কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদ্য বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য এবং টেন্ডার থেকে কমিশন, সংগঠনের বিভিন্ন কমিটিতে পদ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম, অপকর্ম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। রাজধানী ছাড়াও গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে সম্পদ গড়েছেন তিনি।
দুর্নীতি ও সংগঠনের শৃঙ্খলা বিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত থাকার কারণে শুক্রবার (১১ অক্টোবর) তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সম্প্রতি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে কাজী আনিস আত্মগোপনে চলে যান। যুবলীগের কার্যালয়ে যাচ্ছেন না, বাড়িতেও তিনি নেই।
পড়ুন>>যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিস বহিষ্কার
আনিস কোথায় আছেন যুবলীগের কেউ-ই এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না।
তবে একাধিক সূত্র বলছে, সম্প্রতি শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর সুযোগ বুঝে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন কাজী আনিস।
যুবলীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বে থাকায় কাজী আনিস যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন কমিটির পদ নিয়ে জমজমাট বাণিজ্য করেছেন। কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন কমিটির জন্য তিনি মোটা অংকের টাকা দাবি করতেন।
কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা যাদের হাতে পদ দেওয়ার ক্ষমতা ছিলো তাদের নানাভাবে ‘ম্যানেজ’ করে তিনি পদ বিক্রি করতেন বলে জানান যুবলীগের একাধিক নেতা।
সূত্র জানায়, যুবলীগের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সরকারি কাজের টেন্ডারে হস্তক্ষেপ করা, টেন্ডার কেনা-বেচা এবং টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার কাজ করে সেখান থেকেও কমিশন নিতেন। সংগঠনের প্রভাব খাটিয়ে এবং নাম ভাঙিয়ে নিয়মিত চাঁদাবাজিও করেছেন কাজী আনিস।
যুবলীগের একাধিক নেতা জানান, যুবলীগ কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর থেকে দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর কাজী আনিস সংগঠনেও প্রভাশালী হয়ে উঠেন। দপ্তরের ফাইলপত্র রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে দাপ্তরিক সব কিছু ছিলো তার নিয়ন্ত্রণে। সারা দেশের সংগঠনের তথ্য ও যোগাযোগও ছিলো তার।
ফলে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা নেতারাও তার উপর নির্ভশীল হয়ে পড়েন। দায়িত্বশীল নেতাদের কেউ কেউ বিভিন্ন কারণে আনিসের কাছে অনেকটা জিম্মিও হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবলীগের নেতারা বলেন, কাজী আনিস কিছু বললে বা অনিয়ম করলেও তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতেন না। সারা দেশের যুবলীগ কমিটির তালিকা তৈরি থেকে সব কিছু তার হাত দিয়ে হতো। সংগঠনের সব তথ্যও তার কাছে থাকতো। এসব কারণে যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি। এইভাবে বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ বানিয়েছেন তিনি। আর এ কারণে শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি বুঝে কাজী আনিসুর গা ঢাকা দিয়েছেন।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে (পুরানো) যুবলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় অফিসে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ২০০৫ সালে কাজ শুরু করেন আনিস। সংগঠনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে দাপ্তরিক সব কাজ তার হাতে কম্পোজ হতো।
সাত বছর পর ২০১২ সালে কেন্দ্রীয় সম্মেলনে কর্মচারী থেকে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক হয়ে যান। এরপর থেকেই বিভিন্ন জায়গায় তিনি প্রভাব খাটানো শুরু করেন।
ওই বছর যুবলীগের সম্মেলনের মাধ্যমে যে কমিটি গঠন হয় সে কমিটিতে আনিসকে উপ-দপ্তর সম্পাদক করা হয়। দপ্তর সম্পাদক পদটি খালি থাকা কারণে ৬ মাসের মধ্যেই কাজী আনিসুর রহমান আনিসকে দপ্তর সম্পাদক করা হয়।
বর্তমানে তিনি একাধিক গাড়ি, ফ্ল্যাট, বাড়ি ও জমির মালিক হয়েছেন বলে যুবলীগের ওই নেতারা জানান।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৯
এসকে/এমএ