শনিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত না থাকা এবং মধ্যপর্ব পরীক্ষায় উপস্থিত না থাকায় দু’জন শিক্ষার্থীকে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণের সুযোগ না দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটে।
অধ্যক্ষ ফরিদের অভিযোগ, তাকে হত্যা করতেই পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনার পর থেকে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এ ঘটনায় রাজশাহী মহানগরের চন্দ্রিমা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় রাতের মধ্যেই অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হলে রোববার (৩ নভেম্বর) থেকে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও কর্মচারীরা। সন্ধ্যায় এক জরুরি সভায় এ ঘোষণা দেন তারা।
অধ্যক্ষ ফরিদ জানান, সকাল ১১টার দিকে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা অধ্যক্ষের সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করেন। এ সময় তারা দু’জন শিক্ষার্থী যারা নিয়মিত ক্লাস করেননি এবং মধ্যপর্ব পরীক্ষায় অংশ নেননি, তাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান। এ দাবি শুনে অধ্যক্ষ তাদের বলেন, কারিগরি শিক্ষায় কোনো ছাত্র যদি ৭৫ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত না থাকেন এবং মধ্যপর্ব পরীক্ষায় অংশ না নেন তাকে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই। অধ্যক্ষ তাদের কথায় রাজি না হয়ে বিষয়টি নিয়ে তাদের বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। অধ্যক্ষের কথা শুনে তারা অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসেই অবস্থান করেন। দুপুর দেড়টার দিকে অধ্যক্ষ জোহরের নামাজ শেষে মসজিদ থেকে তার নিজ কার্যালয়ে ফিরছিলেন। এ সময় সৌরভের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী অধ্যক্ষকে রাস্তা থেকে তুলে পাশের পুকুরে ফেলে দেন।
ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সৌরভ কম্পিউটার বিভাগের শেষ পর্বের ছাত্র এবং পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান রিগানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। এর আগে তিনি দু’টি পরীক্ষায় রেফার্ড পেয়েছেন বলে ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে।
অধ্যক্ষ ফরিদ আরও অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ নেতারা আমার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে আমাকে মেরে ফেলার জন্যই পুকুরে ফেলে দিয়েছিল। আমি সাঁতার না জানলে হয়তো মরেই যেতাম।
এ বিষয়ে রাজশাহী পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ছাত্রলীগের ছেলেরা জড়িত কী না তা এখনো নিশ্চিত নয়। বিষয়টি আমার খতিয়ে দেখছি। এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহী পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রিগান বাংলানিউজকে বলেন, মোবাইল ফোনে ঘটনা শোনার পরপরই আমি দলীয় নেতাকর্মীদের অধ্যক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। তারা গিয়ে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
রাজশাহীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে জানান, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। দ্রুতই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বাংলানিউজকে জানান, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীনকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সাতজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরও ৫০ জনের বিরুদ্ধে নগরের চন্দ্রিমা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অধ্যক্ষ নিজে বাদী হয়ে মামলটি দায়ের করেছেন। তারা বর্তমানে এ ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহসহ আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৯
এসএস/আরআইএস/