১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর জাতীয় পার্টির তৎকালীন চেয়ারম্যান এরশাদের সামরিক শাসনামলে গণতন্ত্রের আন্দোলনে নূর হোসেন বুকে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’, পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে আন্দোলনে নেমেছিলেন। সেদিন গুলিতে নিহত নূর হোসেনকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করে আসছে আওয়ামী লীগ।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে কৃষির ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নূর হোসেনের মতো একটি ছেলে; তেমন শিক্ষিত না, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র না। সে বুকের মধ্যে লিখে রেখেছিল ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। গণতন্ত্রের জন্য আমাদের ত্যাগ কত বড় এবং আমরা কত সাহসের পরিচয় দিয়েছি, কত ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে আন্দালন-সংগ্রাম করেছি।
‘তার প্রতি যে বিরুপ মন্তব্য করা হয়েছে এবং তাকে ছোট করা হয়েছে, এটা খুবই দুঃখজনক। নূর হোসেনের নাম এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং আমাদের সবার জন্য সে একটি দৃষ্টান্ত, উদাহরণ। কাজেই এটা বলা ঠিক হয়নি। ’
বাংলাদেশে ইয়াবার প্রচলন ১৯৯৭ সালের দিকে, আর নূর হোসেন শহীদ হয়েছিলেন তার ১০ বছর আগে। নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর’ বলায় রাঙ্গার কুশপুতুলও পোড়ানো হয়েছে, নূর হোসেনের মা রাঙ্গাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে টেনে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তাকে (নূর হোসেন) বলা হয়েছে নেশাখোর, ফেনসিডিলখোর… এটা বলা আমি মনে করি খুবই দুঃখজনক। তখন সেই ইয়াবা ছিলই না এবং ফেনসিডিলও অতটা প্রচার হয়নি।
তিনি বলেন, এটা হয়েছে কেন, বারবার বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলে সামরিক বাহিনী এবং সামরিক স্বৈরাচাররা এসেছে, তারা এসে রাজনীতিতে দুর্বৃত্ত ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে কলুসিত করেছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের ফলেই বাংলাদেশে রাজনীতি কলুসিত হয়েছে। আদর্শের রাজনীতি থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গিয়েছি। যারা এ ধরনের মন্তব্য করে, আমি মনে করি তারা অনেকেই স্বৈরাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গেও জড়িত। সেই মানসিকতা থেকেই এধরনের মন্তব্য আসতে পারে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, মহাজোটের কোনো দল যদি ভুল করে বা কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়, আমরা তার প্রতিবাদ অবশ্যই করবো। তাদের সংশোধন হওয়ার জন্য অবশ্যই বলবো।
ভবিষতে কেউ এধরনের বক্তব্য রাখবেন না
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, নূর হোসেন হচ্ছেন গণতন্ত্রের প্রতীক। নূর হেসেন যুবলীগের কর্মী ছিলেন, নেতা ছিলেন। তিনি বুকে লিখেছিলেন, স্বৈরাচার নিপাত যাক; পিঠে, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। একটি জীবন্ত পোস্টার হয়ে তখনকার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। সে কারণে তাকে টার্গেট করে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, নূর হোসেন সম্পর্কে জাতীয় পার্টির মহাসচিবের বক্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক, অনভিপ্রেত। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নূর হোসেন একটি মূর্ত প্রতীক হিসেবে আমাদের দেশে গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠিত।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, মসিউর রহমান রাঙ্গা যে ভুল বুঝতে পেরেছেন, এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি তার এই বক্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন এবং বলেছেন, তার এই বক্তব্য রাখা ঠিক হয়নি। আশা করবো, ভবিষতেও এই ধরনের অনভিপ্রেত বক্তব্য কেউ রাখবেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৯
এমআইএইচ/একে