সে হিসেবে মঙ্গলবার (৬ জানুয়ারি) বর্তমান সরকারের মেয়াদ এক বছর পূর্তি হলো। নির্বাচনের পরের দিন থেকেই বিএনপি বলে আসছে ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে।
এ অবস্থায় ৬ জানুয়ারি সরকারের এক বছর পূর্তিকে কীভাবে দেখছে বিএনপি- দলের নেতাদের কাছে এমন প্রশ্ন করা হলে তারা ভিন্ন ভিন্ন মত তুলে ধরেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রচার সম্পাদক জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বাংলানিউজকে বলেন, এই সরকারের কথা আর কী বলবো। তারাতো একবছর না, ১২ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ২৯ ডিসেম্বর লুট করে ক্ষমতা ধরে রেখেছে। এরপর ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা সব জায়গায় একই কায়দায় ভোট করেছে।
তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনের মাঝে আছি। জনগণ এই সরকারের সাথে নাই। ভয়ভীতি আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা ক্ষমতা ধরে আছে। জনগণ সময়মতো যখন ফুঁসে উঠবে তখনই এদের পতন হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকারের বর্ষপূর্তিতে আমার কিছু বলার নেই। দেখি প্রধানমন্ত্রী ভাষণে কী বলেন। তারপর না হয় বলা যাবে।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, আমরাতো দেখছি মিথ্যা অবৈধ পথে সরকারের বাড়াবাড়ি। এই সরকারতো জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না। এদের নিয়ে আর কী বলবো। মেগা প্রজেক্টে মেগা লুটপাটের মধ্যেই এরা চলছে।
তিনি বলেন, জনগণের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এই সরকার চলছে। জনগণ এবার ভোট দিতে পারেনি। ৩০ তারিখের ভোট ২৯ তারিখ রাতের আঁধারে লুট করা হয়েছে।
আবদুস সালাম বলেন, রোববার দেখলাম ঢাবির একটি মেয়েকে রেপ করা হলো। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী সোমবার পুলিশের অনুষ্ঠানে গিয়ে বললেন দেশে সুশাসন চলছে। দেশে যদি সুশাসনই থাকতো তাহলে এভাবে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে একটা মেয়েকে রেপ করতে পারতো না।
গত এক বছরে দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বি দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারের সিন্ডিকেটের কারণেই বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য এত বেশি। পেঁয়াজসহ সকল পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই সরকারকে লুটপাটের সরকার ছাড়া আমি আর কিছু বলতে পারি না। এদের কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, গণতন্ত্রের পরিভাষায় বর্তমান সরকারকে আমরা নির্বাচিত সরকার বলে মনে করি না। সুতরাং তাদের ১ বছর আর ৬ মাসে কিছু আসে যায় না।
বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ড. আসাদুজ্জামান রিপন বাংলানিউজকে বলেন, দেশে যদি ১৮ কোটি জনগণ থাকে তার মধ্যে ১২/১৩ কোটি ভোটারকে ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত করে এই সরকার রাতের আধারে ভোট লুট করে ক্ষমতায় এসেছে। বিরোধী দল হিসেবে আমরা সেটা ঠেকাতে পারিনি, এটা আমাদের ব্যর্থতা। দখলদারিত্বের এই সরকারের মেয়াদ নিয়ে বলার কিছু নেই।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এক সময় বলতেন আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশী তাকে দেব। এখন সেটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমরা বলতে পারি-আমার ভোট আমি দেব, তোমার ভোটও আমি, দিনের ভোট রাতে দেব, যা ইচ্ছা তাই করবো। গত দশ বছরে বাংলাদেশ এই জায়গায় এসে ঠেকেছে।
এজন্য বিরোধীদল হিসেবে বিএনপি দায়ী স্বীকার করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা বিরোধীদল হিসেবে জনগণকে সাথে নিয়ে সরকারের কাজের বিরোধিতা করতে পারিনি। সেজন্য সরকার বেপরোয়াভাবে দেশ চালাচ্ছে। আবার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে বিরোধীদলকে বলছে, তারা পারে না।
তিনি বলেন, জনগণ শাসক দলের ঔদ্ধত্যপূর্ণ কর্মকাণ্ড অসহায়ের মতো দেখছে। আমি মনে করি এভাবে চলতে থাকলে আগামী বছর এ সরকার ঘটা করে দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি পালন করবে।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, জনগণের যে ভোট দেওয়া লাগেনি সেজন্য সরকারের উচিত ৩০ ডিসেম্বর জনগণকে থ্যাংকস গিভিং ডে হিসেবে পালন করা। এ ধরনের অনুষ্ঠান ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আমেরিকায় হয়ে থাকে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২০
এমএইচ/এজে