একই সঙ্গে তিনি জানান, এ সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়া নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে পারবেন। তবে বিদেশ যেতে পারবেন না।
মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গুলশানে তার বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমার কাছে একটা দরখাস্ত করেছিলেন খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়ার জন্য। সেখানে বলেছেন লন্ডনে উন্নত চিকিৎসার জন্য। এরপর খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার, তার বোন সেলিমা ইসলাম, তার বোনের স্বামী রফিকুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একই বিষয়ে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
‘সেখানেও এই আবেদনের ব্যাপারে কথা বলেছেন তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইনি প্রক্রিয়ায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসাগ্রহণ করার শর্তে এবং উক্ত সময়ে তিনি দেশের বাইরের গমন না করার শর্তে মুক্তি দেওয়ার জন্য আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মতামত কিছুক্ষণ আগে পাঠিয়েছি। ’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই খালেদা মুক্তি পাবেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশে পাঠানো মানে তাকে (খালেদা জিয়া) ‘সুইসাইডের’ মুখে ফেলা।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদার পাঁচ বছরের দণ্ড দেন আদালত। ওই মামলায় আপিলের পর হাইকোর্টে যা বেড়ে ১০ বছর হয়।
পরে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন এখনো আদালতে উপস্থাপন করেননি তার আইনজীবীরা।
দণ্ড ঘোষণার দিন থেকেই কারাগারে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।
পড়ুন>>স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখনও ফাইল আসেনি: মন্ত্রী
এর মাঝেই ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।
এরপর ওই বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এর বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। পরে গতবছরের ৩০ এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাতবছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত ও সম্পত্তি জব্দ করার ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন। এরপর গত ২০ জুন বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়।
পরে ৩১ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে জামিন চান খালেদা জিয়া। এ আবেদনের শুনানির পর ১২ ডিসেম্বর সেটি খারিজ হয়ে যায়। তখন আপিল বিভাগ বলেছিলেন খালেদা জিয়া রাজি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে।
এরপর ফের হাইকোর্টে জামিন চান খালেদা জিয়া। ২৭ ফেব্রুয়ারি সে আবেদন খারিজ করে সম্মতি দিলে দ্রুত তাকে (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা দিতে হবে এবং মেডিক্যাল বোর্ড চাইলে নতুন চিকিৎসক অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন বলে আদেশ দেন হাইকোর্ট।
জমিন আবেদন বিচারাধীন থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়ার পরিবারের লোকজন তাকে চিকিৎসার জন্য মুক্তি দিতে বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। এমনকি ৪০১ ধারায় মুক্তি দিতে সরকরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতীয়তবাদী আইনজীবী ফোরামও।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২০/আপডেট: ১৭৪৩ ঘণ্টা
ইএস/এমএ/এএ