ঢাকা: আল জাজিরার বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় সম্মেলন কক্ষে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আল জাজিরার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যদি হাইকোর্টে যান বা আদালতে যান, সে ক্ষেত্রে আদালত থেকে যদি কোনো নির্দেশনা পাই, তাহলে আদালতের নির্দেশনা অবশ্যই আমরা পালন করব।
ড. মাহমুদ বলেন, আল জাজিরার রিপোর্ট যেটি করা হয়েছে, আপনারা দেখেছেন, সেটি শিরোনামের সাথে রিপোর্টের কোনো সম্পর্ক নেই। শিরোনাম দেওয়া হয়েছে—‘অল আর দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’। আর ভেতরের প্রতিবেদন হচ্ছে সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। প্রতিবেদনটি দেখে শুনে মনে হয়েছে এটি ব্যক্তিগত আক্রোশবশত একটি রিপোর্ট। ব্যক্তিগত আক্রোশবশত একটি রিপোর্ট আলজাজিরার মতো একটা টেলিভিশনে যখন হয়, সেই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আল জাজিরার গ্রহণযোগ্যতা কিন্তু কমেছে। বিশ্বব্যাপী আল জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তিনি বলেন, তাদের নিরপেক্ষতা-বস্তুনিষ্ঠতা, একইসাথে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রশ্ন যে, আজকে উঠেছে তা নয়, এ প্রশ্ন বহুবার উঠেছে। বহু দেশে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ আছে। এমনকি ভারতেও বন্ধ আছে, এখনও অনেক দেশে বন্ধ রাখা হয়েছে। আল জাজিরার জন্য আমার খুব কষ্ট—এই রিপোর্ট দেওয়ার পর তারা বাংলাদেশ প্রচণ্ড পরিমাণে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রচণ্ডভাবে লোপ পেয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরও আল জাজিরার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না—জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু ব্যবস্থা নিতে পারতাম। অন্যান্য দেশে যেভাবে টিভি চ্যানেল বন্ধ করা হয়, আমাদের দেশে আমরা চাইলে সেভাবে বন্ধ করতে পারতাম। আমরা বন্ধ করিনি। কারণ, আমরা গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। কিন্তু অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করলেও সমস্ত গণমাধ্যমের নিজস্ব একটি দায়িত্ব থাকে। আল জাজিরা এ ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তারা একটি পক্ষ হয়ে এবং সম্ভবত একটি পক্ষের পক্ষ থেকে আমরা যেটি শুনেছি, এটার সঙ্গে আরো বহু পক্ষ যুক্ত আছে। এটি সেনাপ্রধানকে টার্গেট করে সরকারের সমালোচনা করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। অথচ রিপোর্টের সাথে সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বা প্রধানমন্ত্রীর কোনো সংশ্লিষ্টতা কোনভাবেই নেই।
সেনাপ্রধানের দুই ভাইয়ের সাজা মওকুফ করার ক্ষেত্রে একটি গণমাধ্যম বলেছে, তাদের সাজা ২০১৯ সালে মওকুফ করা হয়েছিলো। সাজা মওকুফ কোন পদ্ধতিতে করা হয়েছে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তাদের সাজা মওকুফ করা হয়েছে কিনা জানি না, তবে একজনের সাজা মওকুফ হয়েছে বলে আমি জানি। আমি পুরোপুরি বিষয়টা নিয়ে ওয়াকিবহাল নই। তবে তারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনির এক আত্মীয়কে খুন করার অপরাধে। অর্থাৎ জাতির পিতার হত্যাকারীর সহযোগীকে হত্যা করার অপরাধে তারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। খুনের সাজা মাফ করার এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির আছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বহু জনের সাজা মাফ করা হয়েছে, সে এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির আছে। বিচার বিশ্লেষণ করে রাষ্ট্রপতি সেটি মাফ করে থাকেন। এখন তারা বহু বছর সাজা খেটেছেন, একজন সম্ভবত ২০ বছর সাজা খেটেছেন। এক পর্যায়ে কিন্ত সাজা মওকুফ করা হয়। এটি একটি ইউজুয়াল প্রসিডিউর। অনেকদিন সাজা খাটার পর কয়েদি যদি ভালো আচরণ করে সে ক্ষেত্রে সাজা মওকুফ করা হয়, সেটা ইউজুয়াল প্রসিডিউর।
আল জাজিরার প্রতিবেদনের পেছনে যে শক্তি আছে তার মধ্যে ডেভিড বার্গম্যান আছেন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে বিচার চলছিলো। তিনি হাইকোর্টে নিশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন, এরপর তিনি দেশ ত্যাগ করে চলে গেছেন।
ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, সেখানে (প্রতিবেদনে) যে মূল বক্তা মি. সামি, তার অনেকগুলো নাম আছে। খালেদা জিয়ার যেমন অনেকগুলো জন্মদিন আছে, এখানে যিনি মূল বক্তা তারও অনেকগুলো নাম রয়েছে। তার যে ফিরিস্তি শুনলাম সেটি আমি আগে জানতাম না। এ রিপোর্ট হওয়ার পর তার ফিরিস্তি বের হয়ে আসছে। কখন তাকে তার পিতা ত্যাজ্যপুত্র করেছেন, কখন তিনি চুরিতে ধরা পড়েছেন, কখন তিনি কী করেছেন—সে সমস্ত বিষয় আসছে। এ ধরনের লোকদের নিয়ে যখন রিপোর্ট তৈরি করা হয় তখন তো সেই গণমাধ্যমেরই ক্ষতি হয়—যেটি আল জাজিরার ক্ষেত্রে হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১
জিসিজি/এমজেএফ