ঢাকা: ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এক হওয়ার ঘোষণা দিয়েও এক হতে পারেনি গণফোরামের দুই অংশ। দলটিতে পুনরায় দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে চলমান অনৈক্য থেকে এক হয়ে কাউন্সিলের ঘোষণা দিলেও পুনরায় আলাদা হওয়ার পথে দলটির দুটি অংশ। এক অংশের নেতৃত্বে ড. কামাল হোসেন, মোকাব্বির খান, শফিক উল্লাহ অপর অংশে আছেন মোস্তফা মহসীন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ।
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে ২৬ এপ্রিল গণফোরামের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়। ওই সময় একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দলে যোগ দেওয়া রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সে কাউন্সিলের পর থেকেই গণফোরামে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। দলে বহিষ্কার পাল্টা–বহিষ্কার চলে।
গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বে একটি সভা হয়। সেখান থেকে ২৬ ডিসেম্বর কাউন্সিলের ঘোষণা দেয় গণফোরামের এই অংশ। তারা সেদিন সংগঠনের শৃঙ্খলা ও গঠনতন্ত্র অমান্য করে সংগঠনের ঐক্য ও স্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য গণফোরামের আহ্বায়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, সদস্য মোহসিন রশিদ, আওম শফিক উল্লাহ এবং মোশতাক আহমেদকে বহিষ্কার করে।
অপরদিকে গত ১৭ অক্টোবর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ ও গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে শোকজ নোটিশের জবাব না দেওয়ায় গণফোরামের ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন অংশ মন্টু, সুব্রতসহ আটজনকে বহিষ্কার করে এবং ১২ ডিসেম্বর কাউন্সিলের ঘোষণা দেয়।
বহিষ্কার পাল্টা–বহিষ্কারের মধ্যেই দুই পক্ষ দফায় দফায় বৈঠক করতে থাকে। এক পর্যায়ে মন্টুর নেতৃত্বাধীন অংশ তাদের কাউন্সিল স্থগিত করে। পরে গতবছর ১১ নভেম্বর রেজা কিবরিয়া এক বিবৃতিতে তাদের কাউন্সিলও স্থগিতের কথা জানান।
এ অবস্থায় উভয়পক্ষ এক হয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে একটি কমিটি করার সিদ্ধান্ত হলেও মাঝপথে গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণফোরাম থেকে পদত্যাগ করেন ড. রেজা কিবরিয়া।
রেজা কিবরিয়ার পদত্যাগের পরও উভয় পক্ষ এক হয়ে কাউন্সিল করার সিদ্ধান্তে অটল থাকে। তবে হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) পুনরায় তাদের মধ্যে অনৈক্য প্রকাশ্যে আসে। এদিন ড. কামাল হোসেনের নামে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রেসক্লাবে কোনো বর্ধিত সভা হবে না।
অপর দিকে সাবেক নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর নামে দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভা ও পরে সংবাদ সম্মেলন হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলানিউজকে বলেন, আমি যদি সভাপতি থেকে থাকি, তাহলে আমি যেটা বলি সেটাই হবে। ২৭ ফেব্রুয়ারি কোনো সভা হবে না।
সুব্রত চৌধুরী ও মন্টুরা ২৭ ফেব্রুয়ারি বর্ধিত সভা করবেন বলে জানিয়েছেন। এমন বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, তারা চাইলে করতে পারেন।
উভয় পক্ষকে আপনি এক করতে চেয়েছিলেন তো এখন আবার আলাদা হয়েছে যাচ্ছেন না? জবাবে তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি। তাদেরকে বলেছি, তোমরা যদি এক সঙ্গে থাকো তাহলে আমাকে পাবে। অন্যথায় আমাকে পাবে না।
অপরদিকে সুব্রত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, উনি সারাজীবন সকালে, দুপুরে, বিকালে একেক রকম কথা বলেন। উনি কথা রাখতে পারেন না। এটা উনার দৈন্যতা। আমাদের সভা হবে, কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, উনি তো দুষ্ট লোকদের সঙ্গে…। দীর্ঘদিন রেজা কিবরিয়া করলো, এখন রেজা কিবরিয়া বাদ হওয়ার পর আবার কিছু দুষ্টচক্র হয়তো উনাকে দিয়ে এসব করাচ্ছে। বাকী জীবনটা উনার শেষ করে দেবে, আর কী? কামাল হোসেনকে আর কামাল হোসেন রাখবে না। উনি সভা ডাকলেন, উনি বুকিং দিলেন, যাই হোক, এখন আর কী বলবো?
রেজা কিবরিয়া চলে যাওয়ার পরে ড. কামাল হোসেনের পেছনে কারা জানতে চাইলে, সুব্রত চৌধুরী বলেন, নতুন এমপি হয়েছে মোকাব্বির খান, সফিক উল্লাহ আর মোস্তাক। এই তিনজন কুচক্রীর হাতে উনি আছেন। ওনাদের কাছ থেকে মোহসীন রশীদও চলে গেছেন।
তাহলে আপনাদের ঐক্য আর হচ্ছে না, এমন বক্তব্যে তিনি বলেন, ওই তিনজন কামাল সাহেবকে দিয়ে কী করছেন না করছেন সেটা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাচ্ছি না। আমাদের কার্যক্রম চলবে। কামাল সাহেবের ভালো মন্দ তার বোঝার যদি অবস্থা না থাকে তাহলে তো তাকে সেফ করা যাবে না। দুই বছর তো চেষ্টা করলাম। দুই বছর উনি কোনো কাজই করতে দেননি।
আপনারা আলাদা কমিটি ঘোষণা করবেন কি না জানতে চাইলে সুব্রত বলেন, সেটা এখন না। বর্ধিত সভায় সম্মেলনের তারিখ হবে। সেই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হবে। ২৭ ফেব্রুয়ারির সভার এজেন্ডাই হলো-৬ষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন ও সুবর্ণজয়ন্তী।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১
এমএইচ/জেআইএম