ঢাকা: ‘ঐক্যবদ্ধ হয়েই সরকারকে সরিয়ে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একটা পার্লামেন্ট তৈরি করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের দ্বিতীয় শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (অ্যাব) আয়োজিত স্মরণসভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজকে দেশে যে সংকট চলছে- এটা বিএনপির একার সংকট নয়, গোটা জাতির সংকট। এই সংকট থেকে উদ্ধার হতে হলে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। বিএনপি তো আছেই, সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তিগুলো আছে, রাজনৈতিক দলগুলো আছে, ব্যক্তিরা আছেন, আমাদের সামাজিক সংগঠনগুলো আছে, পেশাজীবী সংগঠনগুলো আছে সবাইকে আজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সুকৌশলে গণতন্ত্রের একটা মোড়ক লাগিয়ে এবং গণতন্ত্রের কথা বলে তারা (সরকার) আবার একই কায়দায় এদেশের সেই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল এবং একটা তাবেদার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এদেশের মানুষ সবাই চিরকাল লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে, তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে সবসময়, যুগ যুগ ধরে। আমি বিশ্বাস করি এবং আমি আশাবাদী যে কখনোই বাংলাদেশের মানুষকে এভাবে পরাজিত করা সম্ভব হবে না। এই সরকারকে অবশ্যই সরে যেতে হবে এবং জনগণের কাছে তাদেরকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িত ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ পরদিন চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। সেখানে অভিযোগ করা হয়, শিবির সন্দেহে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে মেরেছেন বুয়েট শাখার ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। মামলায় বুয়েট ছাত্রলীগের ১৯ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।
বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আবরারের মৃত্যু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা একটা সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটা পুরোপুরিভাবে নতজানু রাষ্ট্র করবার একটা ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্র থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, সেই সংগ্রামের আমরা যাই।
সরকারের সমালোচনায় সোচ্চার প্রবাসী সাংবাদিক কনক সারোয়ারের বোনকে গ্রেফতারের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কনক সারোয়ার এই সরকারের অত্যাচারে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেছেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখান থেকে তিনি কিছু সত্য কথা তার চ্যানেলের মাধ্যমে প্রকাশ করে প্রচার করেছেন।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সফরকে কেন্দ্রে করে তিনি যে প্রতিবেদনটি প্রচার করেছেন সেই কারণে এই ভয়াবহ প্রতিহিংসা পরায়ন এই সরকার তার বোনের ওপর নির্যাতন-অত্যাচার করছে। কনকের বোন যিনি কোনোভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন, তিনি একজন গৃহবূধ, তিন সন্তানের মা আজকে তাকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার শুধু নয়, তাকে এখন রিমান্ডে নিয়েছে। এটা ধারণার বাইরে। কতটা ফ্যাসিবাদী হলে, কতটা স্বৈরাচারী হলে, কত নির্যাতনকারী হলে এ ধরনের মানুষের ওপর নির্যাতন-অত্যাচার করা যায়।
তিনি বলেন, এটা নতুন নয়। এটা আমরা দেখেছি আগে থেকে। এর আগে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর নির্যাতন হয়েছে। কিন্তু আমাদের কত নেতাকর্মীকে তাদের বাড়িতে গিয়ে তাদের মা-বোনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের বাড়ি-ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে, এটা আমরা অনেকেই জানি না। গত কয়েক বছরে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীর বাসায় একই কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে।
অ্যাবের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান চুন্নুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বুয়েট শাখার ছাত্র দলের আহ্বায়ক আসিফ হোসেন রচি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে অ্যাবের মহাসচিব হাছিন আহমেদ, সাবেক সভাপতি মিয়া মুহাম্মদ কাইয়ুম, কৃষিবিদ অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২১
এমএইচ/এএটি