ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

অভিযুক্ত প্রার্থী পরিবর্তন করবে আ.লীগ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২১
অভিযুক্ত প্রার্থী পরিবর্তন করবে আ.লীগ

ঢাকা: যেসব অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সেসব প্রার্থীদের অনেকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে।

দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিতব্য ৮৪৮টি ইউপি নির্বাচনের জন্য মনোনীত অর্ধশত প্রার্থীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এসেছে।

তবে অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রার্থী পরিবর্তন করা হবে বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতারা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে যেসব চেয়ারম্যান প্রার্থীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাদের অনেকের বিরুদ্ধে দুনীতি, অনিয়ম, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, বিএনপি থেকে আসা, অতীতে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দলের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড গত ১১ অক্টোবর পর্যন্ত কয়েক দিন ধারাবাহিক সভা করে দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার পর প্রায় অর্ধশত চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দলটির দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, গত বুধবার পর্যন্ত ৩০টির মতো ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেন্দ্রে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ এসেছে। এ ধরনের অভিযোগ এখনও আসছে।

আওয়ামী লীগ থেকে বলা হয়েছিল মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সততা, জনগণের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, দলীয় রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা, দল ও দলের আদর্শের প্রতি আনুগত্য, দুর্নীতি, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কি না, স্বাধীনতা বিরোধী ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে অতীতে সংশ্লিষ্টতা ছিলো কি না, অতীতে যারা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তাদেরকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে না। তবে চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকায় এ ধরনের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকাদের নামও রয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পটুয়াখালীর দশমিনায় গত নির্বাচনে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন এমন ব্যক্তি এবার দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। বগুড়ার শিবগঞ্জের বিহার ইউনিয়নে মহিদুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কর্মী শিমুল, যুব লীগ কর্মী ওমর ফারুক হত্যাসহ তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে। নরসিংদীর রায়পুরের বাঁশবাড়ি ইউপিতে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের উপজেলা কমিটির সাবেক সদস্য সচিব। তার বাবাও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। নারায়ণগঞ্জের কুতুবপুরে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি থেকে বহিস্কৃত মনিরুল ইসলাম সেন্টু। তার বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের রায়পুরে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে যাকে তিনি স্পেনের নাগরিক। ২০১৩ সালে ওই ইউনিয়নে সম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগ আছে তার নামে।

ব্রক্ষ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ২০১৬ সালে হিন্দু ধর্মালম্বীদের বাড়ি ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুরে জড়িত এবং ঘটনায় দায়ের করা মামলার দুই আসাসি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। এদের একজন হরিপুর ইউনিয়নে, আরেকজন নাসিরনগর সদর ইউনিয়নে। তবে বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) তাদের বাদ দিয়ে নতুন প্রার্থী দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, যেসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তার সংখ্যা খুবই কম। সময় স্বল্পতায় এটা হতে পারে। তাছাড়া তৃণমূল পর্যায় থেকে যে নামগুলো পাঠানো হচ্ছে তার মধ্যে থেকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে।

আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে অনধিক ৩ জনের নাম পাঠানোর কথা বলা হলেও গড়ে ৬/৭ জনের নাম আসছে বলে মনোনয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা জানান। এর মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। এই বিশাল সংখ্যক আগ্রহী প্রার্থীর মধ্য থেকে মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে দুই একটি ভুল থাকতেই পারে বলে তারা মন্তব্য করেন। তবে সেটা খুবই কম বলে তারা দাবি করেন। এছাড়া অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রার্থী পরিবর্তন করা হবে বলেও তারা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের সভাপতিমণ্ডলী এবং সংসদীয় বোর্ডের অন্যতম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, দুই একটি জায়গায় ভুল আছে। এতোগুলোর প্রার্থীর মধ্যে ভুল হতেই পারে, তবে সেটা খুবই কম। এগুলো আমরা চিহ্নিত করছি। যেসব জায়গায় সমস্যা আছে, যাচাই-বাছাই করে পরিবর্তন করে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, তৃণমূল থেকে পাঠানো প্রার্থীদের মধ্য থেকে একজনকে চূড়ান্ত করা হচ্ছে। আসলে এতো অল্প সময়ের মধ্যে এক হজার প্রার্থী বাছাই করা খুবই কঠিন। একটি ইউনিয়নে একজন প্রার্থীর জায়গায় গড়ে আবেদন করেছে ন্যুনতম ৬ জন। এতে মোট আবেদন দাঁড়ায় ৬ হাজার। যে সব জায়গায় অভিযোগ পাওয়া যাবে নেত্রী (সভাপতি শেখ হাসিনা) আমাদের বলেছেন যাচাই-বাছাই করে ঠিক করতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘন্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২১
এসকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।