সিলেট: বহুদা বিভক্ত সিলেটে ছাত্রলীগের রাজনীতি। এই বিভক্তি নিয়ন্ত্রণ করে চারটি গ্রুপ।
এই চার বলয়ে ছাত্রলীগের কমিটির ভাগবাটোয়ারার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। জেলা ও মহানগরের দুটি ইউনিটের সভাপতি/সম্পাদক বিগত দিনেও ভাগবাটোয়ায় এসেছে। এবারো এর ব্যত্যয় ঘটেনি।
মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সিলেট জেলা ও মহানগর ইউনিট কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
নতুন কমিটিতে সিলেট জেলা ছাত্রলীগে সভাপতি পদে নাজমুল ইসলাম টিলাগড় বলয়ের একটি অংশের। সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ তেলিহাওর গ্রুপের। মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভ দর্শন দেউড়ি গ্রুপের এবং সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ কাস্মির গ্রুপের।
নবগঠিত কমিটিতে কেন্দ্রে ঠাঁই পাওয়া জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান জেলার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার বিষয়টি ছিল আলোচনায়। কিন্তু তার পরিবর্তে একই গ্রুপের রাহেল সিরাজকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আর এমসির ছাত্রাবাসে গণধর্ষণকারীদের নেতা বিতর্কিত নাজমুলকে জেলার সভাপতি করা হয়।
এদিকে ছাত্ররাজনীতিতে পদচারণা থাকলেও রাহেল সিরাজের নামের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না কেউ। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাহেল সিরাজ। তাকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক করায় তোষের আগুন যেনো ঘরের চালেই লাগে।
তেলিহাওর গ্রুপ ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এই ক্ষোভের নেপথ্যে জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খানের কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া। নেতাকর্মীরা নিজ গ্রুপের রাহেল সিরাজ সাধারণ সম্পাদক পদে মেনে না নিয়ে উল্টো ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নামেন কমিটি বাতিলের দাবিতে।
তেলিহাওয়র গ্রুপের ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ওইদিন বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল বের করে অশান্ত তোলেন রাজপথ। টায়ার জ্বালিয়ে ক্ষোভের আগুন প্রদর্শন করেন রাজপথে। কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন।
অভিযোগ তুলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি/সম্পাদক কোটি টাকার বিনিময়ে কমিটি দেওয়ার। গ্রুপের অশান্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এদিন সন্ধ্যায় রাহেল সিরাজের বাসায় হামলা চালিয়েছেন এমন অভিযোগও ওঠে।
এ ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদসহ নেতারা। সংবাদ সম্মেলন করেও কেন্দ্র ও অনুমোদন পাওয়া কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেন। গ্রুপের কর্মী হলেও দাবি করেন, রাহেল সিরাজ ফাইভ পাস করে কোনো স্কুলে পড়েনি।
এ অবস্থায় নিজ ঘরে অনিরাপদ হয়ে পড়েন রাহেল সিরাজ। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে বীরের বেশে ঘরে ফেরার পরিবর্তে তাকে আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে হামলার ভয়ে। এই সুযোগে তাকে গ্রুপে ভেড়াতে অনেকে চেষ্টা করলেও নিজেকে নিভৃত রেখেছেন রাহেল সিরাজ। তার অপেক্ষা পরিস্থিতি শান্ত হলে ঘরে ফেরা। কিন্তু ঘরের সতীর্থরা যেখানে ক্ষুব্ধ, কথায় আগুনের ফুল্কি ঝরাচ্ছেন। সেখানে ফেরাটাও যেনো প্রাণ হাতে নিয়ে।
তারপরও নিজের অবস্থানে অটুট রাহেল সিরাজ। তার মতে, ছাত্রলীগের রাজনীতিতে গ্রাম থেকে শহরে যে গ্রুপের হয়ে কাজ করেছি। যে নেতার আশীর্বাদ না পেলে আমি আজকের রাহেল সিরাজ হতাম না। সেই গ্রুপে কখনো ছাড়তে চাই না।
রাহেল সিরাজ বাংলানিউজকে বলেন, আজ হোক বা কাল। ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবেই। তখন না হয় ঘরে ফিরবো। জেলা ছাত্রলীগের রাজনীতিকে নতুন আঙ্গিকে সাজাবো। তার মতে, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের হাতে গড়া এই আমি। পিতৃতুল্য নেতার কাছে আমি কর্মী হয়েই থাকতে চাই।
নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রশ্নে রাহেল সিরাজ বলেন, আমি লিডিং ইউনিভার্সিটিতে ইসলামিক স্ট্যাডিজে অধ্যয়ন করছি। যে কেউ সত্যতা যাচাই করে নিতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, ‘যে গ্রুপের হাত ধরে নেতা হয়েছি। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সতীর্থদের পাশে থেকেছি। হাঁটতে সাহস পেয়েছি। কেন্দ্র পর্যন্ত নিজের পরিচিতি ছড়িয়েছে। তা কেবল অভিভাবকতুল্য নেতার হাত ধরেই। সেই নেতার গ্রুপ কখনোই ছাড়বো না। কেননা, কথায় আছে-স্থান ছাড়লে মান যায়। সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার পর গ্রুপে বিভেদ থাকতে পারে, এগুলো আজ হোক কাল মিটবেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২১
এনইউ/এএটি