ঢাকা: সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, চিকিৎসার জন্য তাকে জরুরি ভিত্তিতে দেশের বাইরে নেওয়া প্রয়োজন।
বুধবার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেওয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
মান্না বলেন, আমি গত দুই-তিন দিন ধরে খুব চিন্তিত। ম্যাডাম সিসিইউতে ভর্তি আছেন। এটার মানেতো করোনারি কেয়ার ইউনিট না, দিস ইজ ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট। দুটোতে অনেক বেশি পার্থক্য। খুব ক্রিটিকাল অবস্থাতেই তাকে এখানে আনা হয়েছিল এবং এই দুই-তিন দিনে কোনো ভাল খবর কোথাও দেখিনি। আমি সকাল থেকে ভাবছি একবার অন্তত যাই। আমি জানি ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে আমাকে দেখতে দেবে না। এমনিতে করোনার সময়, তাছাড়া নরমালি ইনফেশনের ভয় থাকে। কিন্তু ওখানে গেছি, চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিশেষ করে চিকিৎসক জাহিদ ছিলেন। উনি আমাকে সবই বলেছেন, এরকম আমি বলেবো না।
ডা. জাহিদ আপনাকে কী বলেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, যেমন ধরেন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছি এখন কী অবস্থা ভালো? উনি মাথা নাড়লেন না ভাল না। আমি বললাম অবস্থা কী আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে? তিনি চুপ থাকলেন। ওটাওতো একটা ল্যাংগুয়েজ। মানে আমি বললাম খারাপ হয়েছে? উনি যদি বলতেন না হয়নি। আমি আশা করছি ভাল হবে, এরকম কিছু তিনি বলেননি। ওনার কথার মধ্যে এবং চেহারার মধ্যে পুরোটাই একটা হতাশার ছাপ দেখেছি। আমিতো ডাক্তার না, এভাবে আমার বলা উচিত কি না জানি না। কিন্তু কথা বলে আমার মনে হয়নি যে ম্যাডামের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়েছে।
মান্না বলেন, এমনিতে সংসদে রুমিন ফারহানা বলেছেন, তার (খালেদা জিয়ার) লাং, কিডনি, আর একটা অরগান সম্ভবত হার্ট বা কিছু, অনেক ড্যামেজ আছে। আর কোভিডে উনি অনেক সাফার করেছেন। আমি নিজে কোভিডে সাফার করেছি, আমি জানি পোস্ট কোভিড যত উইকনেস থাকে সবগুলোকে ধরে ফেলে। আর একসঙ্গে যখন ধরে, তখন চিকিৎসা করা যায় না। যে চিকিৎসা এখানে হচ্ছে, আমি শুনে যেটা বুঝেছি, এটা কোনো চিকিৎসা না। ডায়াগনোসিস হয়েছে বলে আমার মনে হয়নি। একটা অ্যাডভান্স কেয়ার যদি না থাকে তাহলে এই রোগী, আই অ্যাম সরি এ রকম ল্যাংগুয়েজে আমার বলা উচিত না। কিন্তু কোনো মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ, ডাক্তারতো বাদই দিলাম, তারা এরকম রোগীকে এভাবে ফেলে রাখতে পারে না।
তিনি বলেন, আমার কাছে খুব অবাক লাগে যে সরকার বলছে তাকে যথাযোগ্য চিকিৎসা দিচ্ছি। যথাযোগ্য চিকিৎসাই যদি দেন তাহলে ওবায়দুল কাদের সাহেবের জন্য বাইরে থেকে দেবী শেঠিকে আনতে হলো কেন? কয়েকদিন আগে প্রেসিডেন্ট সাহেব জার্মানিতে গেলেন কেন? শেখ হাসিনা নিজে বিদেশে গেছেন কেন? এই যে ইনি (খালেদা জিয়া) যতখানি অসুস্থ, তার বমি হবার কথা সবাই জানেন, ব্লাড গেছে কী রকম সেটা জানেন। এখন পর্যন্ত সিসিইউতে আছেন মানে সি ইজ আন্ডার হাই রিস্ক। আমি খুবই দুঃখিত যে আমি এরকম বলছি। আমিতো বিএনপি করি না, কোনো দিন করিনি। কোনো দিন করবো এ রকমও ভাবি না। কিন্তু আমি একটা মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করি, একজন দোষী মানুষও যদি মারা যায়, তাকে চিকিৎসা করতে হবে। অথচ ওনাকে বিনা দোষে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এটার কোনো ব্যাখ্যা হতে পারে না। তাকে দ্রুত বাইরে পাঠানো উচিত। পরিবার আবেদন করেছে, দল আবেদন করেছে, যেহেতু আমি আপনাদের কাছে সুযোগ পেলাম, এই সুযোগে আমি দেশবাসীর কাছে, দেশের অপরাপর সব রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে, সামাজিক সংগঠন, সিভিল সোসাইটি, যাদের মধ্যে একটু বিবেকের ব্যাপার আছে, তাদের প্রতি আহ্বান, সে রকম চাপ তৈরি করেন, যাতে সরকার তাকে বাইরে পাঠাতে পারে। না হলে পরিণতি কী হবে আমি জানি না। সেই পরিণতির জন্য এই সরকার দায়ী হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, ওনারা (সরকার) বলছেন তাকে বেস্ট ট্রিটমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। বাট হোয়াট ইজ দ্য বেস্ট? তোফায়েল আহমেদ সাহেব যে বাইরে গেলেন, আমাদের এখানে বেস্ট ট্রিটমেন্ট থাকলে উনি কেন গেলেন? আব্দুল হামিদ সাহেব বাইরে কেন গেলেন? ওবায়দুল কাদের সাহেব কেন গেলেন। নাসিম ভাইয়ের কথা চিন্তা করেন, উনিতো জেলে ছিলেন, সেই অবস্থায় নেওয়া হলো। এটাতো ইট সেলফ ক্লিয়ার যে উনি (খালেদা জিয়া) ক্রিটিকাল কেয়ারে আছেন। তাকে বাইরে যেতে দেওয়া হবে না কেন? আমি আবার বলছি, এটা অমানবিক। মানে এর মধ্যে রাজনৈতিক স্বার্থ বলেন, ক্ষমতার স্বার্থ বলেন, লোভ হিংসা, বিদ্বেষ, যাই বলেন সব ধরনের বাজে রিপু জড়িয়ে আছে। আমি আবার বলি, আমি একটা লোককে যদি পছন্দ নাও করি, কিন্তু ওনাকে চিকিৎসা করব না এটাতো হতে পারে না।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২১
এমএইচ/এমএমজেড