ঢাকা: রাষ্ট্রপতিকে তার নিজস্ব ক্ষমতাবলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা।
রোববার (২১ নভেম্বর) জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দলের ছয়জন সংসদ সদস্য মানববন্ধন করে এ আহ্বান জানান।
চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হারুনুর রশিদ বলেন, বাংলাদেশ এমন একটি জায়গায় উপনীত হয়েছে যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার, আইনের শাসন একেবারে অনুপস্থিত। প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে যেসব কথা বলেছেন এর জন্য আজকে সত্যিকার অর্থেই আমার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই, প্রতিবাদ করার ভাষা নেই। এ কথা কী সুষ্ঠুভাবে প্রমাণ করে না প্রধানমন্ত্রীর ওপরে নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বাইরে সুযোগ পাওয়া না পাওয়া।
তিনি বলেন, একজন আইনমন্ত্রী সিনিয়র ল ইয়ার। তিনি আইনের যে ব্যাখ্যা দেন সেটা এদেশের সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে না। হঠাৎ করে তিনি বলছেন, বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার সুযোগ দেবেন। আমরাতো বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার জন্য দাবি জানাইনি।
হারুন বলেন, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর এ সরকার এযাবৎকালে ৩০ জনের অধিক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে সাজা মওকুফ করেছে। বেআইনিভাবে আইনের বরখেলাপ করে। খুনের আসামি, ইয়াবা সম্রাট, মানবপাচারকারী, টাকা পাচারকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ওপরে অন্যায়ভাবে সরকার জুলুম-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, আমরা চাই অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। এর ব্যতিক্রম আমরা অন্য কোনো কিছুই মানবো না। খালেদা জিয়ার যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় আপনারা আমাদের বাধ্য করবেন না সংসদ থেকে বেরিয়ে যেতে।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ও বিএনপি দলীয় হুইপ ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, আপনারা জানেন খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে বার বার আবেদন করা হয়েছে। তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তিনি যখন কারাগারে জান তিনি হেঁটে গেছেন কিন্তু গত তিন বছরে তার কী হাল হয়েছে এটা দেশের মানুষ জানে। এর দায় এ সরকারকে নিতে হবে। কারণ গত তিন বছরে তিনি দল, পরিবার ও নিজের হেফাজতে ছিলেন না। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের হেফাজতে।
তিনি বলেন, আমরা দেখি সামান্য একটু হাঁচি, কাশি, সর্দি চিকিৎসার এমনকি রুটিন চেকআপের জন্য রাষ্ট্রপতি জার্মানি, ইংল্যান্ডে যান। কিন্তু আমাদের সরকার দলীয় এমপিরা আমাদের শোনায় উনার (খালেদা জিয়ার) বেস্ট চিকিৎসা নাকি বাংলাদেশে হচ্ছে। বাংলাদেশে যদি সেরা চিকিৎসাটা হতো তাহলে কেন আমরা দেখি অতি সাধারণ মানুষও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চিকিৎসার জন্য ছুটে যাচ্ছে।
রুমিন বলেন, গত তিন বছরে খালেদা জিয়ার ওপর নিপীড়ন, নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাকে কোনো প্রকার ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়নি। যদি তিনি তার অসুখের চিকিৎসা করাতে পারতেন, সরকার যদি সেই সুযোগ দিত তাহলে আজকে তার এ অবস্থা হয় না। খালেদা জিয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ৪০১ ধারায় সরকার যে কোনো ব্যক্তিকে সাজাপ্রাপ্ত বা সাজাপ্রাপ্ত নয় তাদের শর্তযুক্ত বা শর্তহীনভাবে দণ্ড মওকুফ করতে পারে কিংবা দণ্ড স্থগিত করতে পারে। এ ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করা হয়েছে। সরকার দফায় দফায় তার মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে। কিন্তু এখন আইনমন্ত্রী বলছেন, ওনার কোনোভাবে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। এটা একেবারেই ডাহা মিথ্যা কথা এবং আইনের অপব্যাখ্যা। আইনের ভুল ব্যাখ্যা। আমি একজন আইনজীবী হিসেবে বলতে চাই, ৪০১ এর ক্ষমতাবলে সরকার যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, মোশাররফ হোসেন ও আমিনুল ইসলাম। জাহিদুর রহমান অসুস্থ থাকায় তিনি মানববন্ধনে যোগদান করতে পারেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২১
এমএইচ/আরবি