খুলনা: খুলনায় অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে মহানগর ছাত্রলীগ। এতে সংগঠনটির স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর খুলনা মহানগর যুবলীগের কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক মনোনীত হন ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন। আর চলতি বছরের ৬ নভেম্বর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাসেল।
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অবর্তমানে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে ক্ষমতাশীন দলের ছাত্র সংগঠন খুলনা মহানগর ছাত্রলীগ। ২১৫ সদস্যের বিশাল মহানগর কমিটির অধিকাংশ নেতাই ছাত্রজীবন শেষ করেছেন। বাকিরা কেউ ব্যবসায়ী, কেউ চাকরিজীবী। মাদক বিক্রিসহ নানা অপরাধে এ পর্যন্ত বহিষ্কার হয়েছেন প্রায় এক ডজন নেতা। এতে মহানগর ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ইউনিটের সাংগঠনিক কাজও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।
ছাত্রলীগ অগোছাল অবস্থায় থাকায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
তবে কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, মহানগর ছাত্রলীগে শীঘ্রই নতুন নেতৃত্ব আসছে। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, নেতৃত্বের শীর্ষে যাওয়া সবারা একটা প্রত্যাশা থাকে। কলেজ জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করছি। ভালো পদ-পদবি পাব সেই আশা ছিল। এমন আশায় সুযোগ পেয়েও চাকরি করিনি। এমন কি বিয়েও করিনি। জীবনের মূল্যবান সময় সংগঠনের জন্য নষ্ট করে দিয়েছি। অথচ নতুন কমিটি হবে-হচ্ছে করেই আমাদের মহামূল্যবান সময় চলে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে অভিভাবকহীন থাকায় প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ। নেতৃত্বহীনতার কারণে ছোট ছোট বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সংগঠনটি। আর দিন দিন মহানগরীর ১৪টি কলেজ ও ৫টি সাংগঠনিক থানা ইউনিট নেতৃত্বশূন্য হচ্ছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৮ জুন খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলনে খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয় যথাক্রমে শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন ও এস এম আসাদুজ্জামান রাসেলকে। এর প্রায় চার বছর পর ২০১৯ সালের ৩০ জুন ২১৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহসভাপতি করা হয় ৫৭ জনকে। এর মধ্যে সিনিয়র সহসভাপতি সোহেল বিশ্বাস, দ্বিতীয় সহসভাপতি তাজমুল হক তাজু, তৃতীয় সভাপতি আসাদুজ্জামান বাবু তিনজনই বিবাহিত এবং ব্যবসায়ী। দখলকে কেন্দ্র করে সংঘটিত একটি হত্যা মামলায় পঞ্চম সহসভাপতি রণবীর বাড়ৈ সজলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি। অন্য সহসভাপতিদের মধ্যে আরও ১২ জন বিবাহিত ও ব্যবসায়ী, ছয়জন চাকরি করছেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। মাদকসহ গ্রেফতার হওয়ায় বহিষ্কার হয়েছেন সহসভাপতি হীরক কুমার গাইন ও সমীর কুমার শীল। অন্যরা বেশিরভাগই রাজনীতিতে সক্রিয় নেই।
এদিকে মহানগর ছাত্রলীগে নতুন নেতৃত্বের অপেক্ষায় রয়েছে একঝাঁক শিক্ষার্থী। কে পাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত পদ। আর কাঙ্ক্ষিত পদটিতে নিজেদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে দখল করে নিতে পদ-প্রত্যাশীরা ব্যস্ত যার যার দল ভারী করায়। পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে সভাপতি পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম সুজন, সহ সভাপতি রনবির বাড়ই সজল ও খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহান ইসলাম শাওন।
সাধারণ সম্পাদক পদে খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান রাজেস, সোনাডাঙ্গা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রুমান আহম্মেদ ও বিএল কলেজ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নিশাত ফেরদৌস অনি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকের ছাত্রলীগ করার বয়স নেই। আবার কারও কারও বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। কারও বিরুদ্ধে রয়েছে নারী কেলেঙ্কারীর মতো ঘটনা।
তবে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম সুজন ও খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহান ইসলাম শাওনের মধ্যে যে কেউ একজন হতে পারেন আগামী দিনে ছাত্রলীগের সভাপতি। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে সাংগঠনিক দক্ষতায় সোনাডাঙ্গা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রুমান আহম্মেদ এগিয়ে রয়েছে। ব্যক্তিত্ব, প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও দলীয় আদর্শের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে রাজপথে রুমানের ভূমিকা বেশি থাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন আগামী দিনে রুমান হতে পারেন মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আসাদুজ্জামান রাসেল বাংলানিউজকে বলেন, মহানগর ছাত্রলীগের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে খুলনার নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলছি। কেন্দ্রের সাথে কথা বলে অল্প সময়ের মধ্যেই সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।
খুলনা মহানগর শাখার সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের উপ-পরিবেশ সম্পাদক শাওন বাদশা বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগের অংগ সংগঠনের নেতৃত্বে চলে যাওয়ার বিষয়টি আমরা অবগত আছি। খুব শীঘ্রই বিষয়টি নিয়ে আমরা একটি প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় কমিটিতে জমা দেব। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে একটি বৈঠক করে দ্রুতই নতুন কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মতামত গ্রহণ করা হবে। সম্মেলন করে খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২১
এমআরএম/এনএইচআর