ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ইউপি নির্বাচন: অন্য দলগুলোর প্রার্থীরা চাপের মুখে

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২১
ইউপি নির্বাচন: অন্য দলগুলোর প্রার্থীরা চাপের মুখে ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্য দলগুলোর প্রার্থীদের আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে চাপ ও হুমকী-ধামকী দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি আওয়ামী লীগের চাপে কেউ কেউ মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারেনি বলেও অভিযোগ আছে।

এবারের ইউপি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। তবে অনেক ইউপিতে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ইউপির তিন ধাপের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে এবং আগামী মাসে চতুর্থ ধাপের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ চার ধাপের নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, ন্যাপ এবং ১৪ দলের বাইরে সিপিবি কিছু কিছু ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দিয়েছে। এ দলগুলোর কোনো দলেরই এ চার ধাপের নির্বাচনে একশ ইউপিতে প্রার্থী ছিলো না। তবে যে অল্প সংখ্যক ইউপিতে প্রার্থী দিয়েছে সেখানেও আওয়ামী লীগের চাপের মুখে পড়তে হয়েছে এবং হচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে এ দলগুলোর প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো জায়াগায় অন্য দলের প্রার্থী চাপের মুখে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি। আবার চাপের মুখে মনোনয়ন প্রত্যাহর করে নিতে বাধ্য হয়েছে বলেও এ দলগুলোর নেতারা অভিযোগ করেন।

আবার ১৪ দলের শরিক দলগুলোর যে সব এলাকায় সংসদ সদস্য (এমপি) রয়েছেন সে সব এলাকায়ও চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ওপর চাপ আসছে। দলের এমপি থেকেও কিছু করতে পারছেন না। নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করায় ওই এমপিরা আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের জোর দিয়ে কিছু বলতে পারছেন না। প্রশাসনের দিক থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছে না বলে জানা গেছে।

ওই দলগুলোর নেতারা জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলে ১৪ দল এখন আর আছে না কি। ১৪ দল তো নেই। আপনাদের দলের এমপি আছে, কিন্তু এমপি তো আর সব সময় এলাকায় থাকবে না, পুলিশ তো আর সব সময় দেখবে না, আমাদের কাছেই থাকতে হবে।

১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক পার্টির ইউপি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আনিসুর রহমান মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের রাজশাহীর তানোরের একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে জোর করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় আমাদের প্রার্থীকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছে বসে যাওয়ার জন্য। আওয়ামী লীগের ওই নেতাকর্মীরা বলছে, ১৪ দল আছে না কি, ১৪ দল তো নেই। প্রশাসনের দিক থেকেও আমাদের প্রার্থীরা সহযোগিতা পাচ্ছে না। বরং উল্টো দুই এক জায়াগায় রির্টানিং অফিসারের কার্যালয়ের হয়রানির শিকার হচ্ছে।

ইউপি নির্বাচনে ১৪ দলের আরেক শরিক জাসদের প্রার্থীদের কোনো সমস্যা আছে কি না জানতে চাইলে দলটির সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার এমপি বলেন, আমি এখন এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাসদের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলা হচ্ছে। যে সব জায়াগায় নির্বাচন হয়েছে এর কোনো কোনো জায়গায় ভোট কেন্দ্রে আমাদের প্রার্থীর এজেন্ট থাকতে পারেনি। ফেনীতে শিরিন আখতারের এলাকায় এক প্রার্থীকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলেছে আপনাদের এমপি আছে কিন্তু এমপি, পুলিশ তো আর সব সময় থাকবে না। আমাদের সঙ্গেই থাকতে হবে।

ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কুমিল্লার চান্দিনার এক চেয়ারম্যান প্রার্থীকে চাপ দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরেক একজন প্রার্থীর ওপরও বিভিন্নভাবে চাপ আসছে।

সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাফী রতান পার্টির নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের পার্টির যারা নির্বাচন করছেন তারা বিভিন্নভাবে হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে। তাদের প্রচার কাজ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মাদারিপুরের দুই ইউনিয়নে আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জামা দিতে দেওয়া হয়নি।  

এর আগে, গত ১৫ নভেম্বর সংসদের অধিবেশনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও এ ধরণের অভিযোগ করেন। মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি আসেনি। যেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আছে সেখানে তাদের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের প্রার্থীকে এলাকার আওয়ামী লীগের এমপি, নেতারা চাপ দেয় প্রার্থীতা তুলে নেওয়ার জন্য।

বাংলাদেশে সময় ১২৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২১
এসকে/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।