নরসিংদী: নরসিংদীর রায়পুরার চান্দেরকান্দি ও উত্তর বাখরনগর ইউপির দুই ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সহিংসতায় দুইজন নিহত হওয়ার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ প্রায় ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সোমবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান।
রোববার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তৃতীয় ধাপের ভোট শেষে ফলাফল গণনার সময় ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে চান্দেরকান্দিতে আরিফ মিয়া (২৪) ও উত্তর বাখরনগরে ফরিদ মিয়া (৩২) পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনায় রোববার রাতে রায়পুরা থানায় চান্দেরকান্দির ঘটনায় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চান্দেরকান্দি পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেন বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩০০-৩৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। আর উত্তর বাখরনগরের ঘটনায় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাখরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আবদুল কাদের সরকার বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
চান্দেরকান্দিতে নিহত আরিফ মিয়া নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার যোশর ইউনিয়নের জানখারটেক এলাকার চান মিয়ার ছেলে। পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আরিফ নির্বাচনের কাজে পুলিশের সঙ্গে ওই ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন। অন্যদিকে, উত্তর বাখরনগরে নিহত ফরিদ মিয়া উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের বাখরনগর গ্রামের মুজিব মিয়ার ছেলে।
চান্দেরকান্দী মামলার আসামিরা হলেন, জুবায়ের (২৭), আবদুল আহাদ মিয়া (৫৫), আবদুল হান্নান (৪৫), মোস্তফা মিয়া (৪৩), তারেক মিয়া (২৭), মোস্তফা মিয়া (৪৮), খোরশেদ মিয়া (৩৫), আবদুল মতিন (৪৭), জনি (২৮) ও খোরশেদ মিয়া (৫৫)। এদের মধ্যে আবদুল হান্নানকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে।
বাখরনগর মামলার আসামিরা হলেন- পন্ডিত মিয়া (৫৮), আলমগীর (২৮), সুজন (২৬), চাঁন মিয়া (৩৬), ইফসুফ (৩৫), হাসনা (৩৬), সাদেক (৩০), মানিক (৩০) ও ফরিদ (৩৫)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চান্দেরকান্দি ও উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের দুটি ভোট কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থীরা ভোট গণনা শেষে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা ও নির্বাচনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং ব্যালট বাক্স রক্ষা, জানের নিরাপত্তায় পুলিশ শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এসময় হামলাকারীরা টেটা, বল্লম, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। চান্দেরকান্দিতে হামলাকারীদের ছোড়া ইটপাটকেল ও গুলিতে পুলিশ কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান ও পুলিশদের বহনকারী সিএনজি ড্রাইভার আরিফ গুরুতর আহত হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর আরিফ মিয়াকে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় আবদুল হান্নান (৪৫) নামে একজনকে আটক করে পুলিশ।
এছাড়া উত্তর বাখরনগরে ভোট গণনা শেষে মেম্বার পদপ্রার্থী পন্ডিত মিয়া নিজের পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা বুঝতে পেরে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা ও নির্বাচনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন এসময় তারা নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং ব্যালট বাক্স রক্ষা, জানের নিরাপত্তায় পুলিশ শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এসময় সংঘর্ষে ফরিদ মিয়া নামে একজন গুরুতর আহত হয়। তাকে রাতে ঢাকা নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান বাংলানিউজকে বলেন, ওই দুই কেন্দ্রে ব্যালট পেপার গণনার সময় ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল দুই পক্ষের সমর্থকেরা। ব্যালট বাক্স রক্ষা ও জানের নিরাপত্তায় পুলিশ শর্টগানের গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় আরিফ মিয়া ও ফরিদ মিয়া নামের দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যও আহত হন। দুই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২১
এনটি