ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের তালশহর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নের জন্যে এক বিএনপি নেতার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এমন কাণ্ডে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, আশুগঞ্জ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্যে বুধবার প্রার্থী তালিকা ঢাকায় পাঠানো হয়। এর আগে ৩০ নভেম্বর ওই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দলের প্রার্থী ঠিক করতে স্থানীয় শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রে তৃণমূলের সভা হয়। কিন্তু ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া ছাড়াই ওই সভা শেষ করেন ক্ষমতাপ্রাপ্ত নেতারা।
পরদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বসে আশুগঞ্জ আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হাজী সফিউল্লাহ মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবু নাসের আহমেদ, হানিফ মুন্সি ও খোরশেদ আলম মনোনয়নের জন্যে ঢাকা পাঠাতে ইউনিয়ন ভিত্তিক নামের তালিকা করেন। এ সময় জেলার দায়িত্বশীল নেতারাও সেখানে ছিলেন।
সুত্র জানায়, তালশহর ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে যে তিন জনের নাম প্রস্তাব করা হয় তাতে ১ নম্বরে রয়েছে ইউনিয়ন বিএনপি’র সদস্য সুলেমান সেকান্দর ওরফে সুলেমান মিয়ার নাম। যদিও হালে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা।
স্থানীয় বিএনপি নেতারাও জানিয়েছেন, সুলেমান ও তার গোটা পরিবার বিএনপি’র রাজনীতিতে জড়িত সেটিই তারা জানেন। তার বড় ভাই মো. হারুন অর রশিদ বিএনপি’র একজন ডোনার।
তথ্য খুজে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর তালশহর ইউনিয়ন বিএনপি’র যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় সেখানে ২৮ নম্বর সদস্য হিসেবে সুলেমান মিয়ার নাম রয়েছে। আর তার বড় ভাই হারুন অর রশিদের নাম রয়েছে ২৫ নম্বর সদস্য হিসেবে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০১৭ সালের ১ মে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যে কমিটি হয় সেখানে সুলেমান মিয়াকে ১৫ নম্বর সদস্য হিসেবে রাখা হয়। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে তাকে বহিস্কার করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ।
তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিবুল হাফেজের স্বাক্ষরে ওই বছরের ১ নভেম্বর দেওয়া বহিস্কারাদেশের চিঠিতে বিএনপি’র পদপদবীর তথ্য গোপন করে সুলেমান মিয়া আওয়ামী লীগে যোগদান করেন বলে উল্লেখ করা হয় এবং আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে তাকে সদস্য পদ থেকে বহিস্কার করার কথা বলা হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবু নাছের আহমেদ তার সিল-স্বাক্ষর দিয়ে বুঝে রাখেন ওই চিঠি। যিনি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আশুগঞ্জ আওয়ামী লীগের ৪ জন ক্ষমতাবানের মধ্যে একজন হিসেবে তালিকা তৈরির সময় উপস্থিত ছিলেন। তবে সুলেমান মিয়া নিজেকে এখন তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দাবি করেন।
এই বিষয়ে তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর রশীদ বলেন, সুলাইমান মিয়া বিএনপির রাজনীতি করার কারণে তাকে আমরা দল থেকে বহিষ্কার করেছিলাম। পরবর্তীতে তিনি একটি পকেট কমিটি করেছেন। কিন্তু এই কমিটির কোনো বৈধতা নেই। আমাদের কমিটি ২০১৭ সালের সম্মেলনের মাধ্যমে হয়েছে এবং সেটি উপজেলা ও জেলা অনুমোদন দিয়েছে। সুলেমান নিজেকে যে কমিটির সভাপতি দাবি করেন, সেটি বৈধ কোনো কমিটি নয়।
তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য নিয়াজ আকতার বলেন, তার ভাই হারুন অর রশিদ বিএনপির সদস্য ও পৃষ্ঠপোষক। সুলেমানকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের জন্য কীভাবে সুপারিশ করা হলো, তা বুঝতে পারছিনা।
ইউনিয়ন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদ মিয়া বলেন, সুলেমান মিয়ার পুরো পরিবার বিএনপি করতো। এখন শুনছি আওয়ামী লীগ করে। তার ভাই হারুন ইউনিয়ন বিএনপি’র ডোনার।
তবে সুলেমান মিয়া দাবি করেন জন্মগত ভাবেই তিনি আওয়ামী লীগ। কখনো বিএনপি করেননি। তার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তার কমিটিই বৈধ। এই কমিটি হাজী সফিউল্লাহ অনুমোদন দিয়েছেন।
আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন আহ্বায়ক মো. আবু নাছের আহমেদ জানান, সুলেমান মিয়া বিএনপি করতো তা সঠিক। এজন্যে আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে বহিস্কারও হয়েছিলেন। তবে তাকে কেন চেয়ারম্যান পদে সুপারিশ করা হয়েছে তা বলতে পারবোনা। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। সুলেমানের বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।
আগামী ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে আশুগঞ্জ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ভোট।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২১
কেএআর