ঢাকা: চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রায় অর্ধেক ইউপিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হচ্ছেন দলীয় প্রার্থীরা—এই পরাজয়ে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার ঘাটতি দেখা দিয়েছে কিনা, এমন প্রশ্ন উঠেছে।
তবে আওয়ামী লীগ নেতারা এটাকে দলের জনপ্রিয়তার ঘাটতি বা নেতিবাচক প্রভাব মনে করছেন না। দলীয়ভাবে হলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচন জনপ্রিয়তার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয় না বলে তারা দাবি করেছেন। স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়িয়ে যাওয়ায় দলের সমর্থক ও ভোটাররা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হচ্ছেন। যারা বিদ্রোহী হয়েছেন তাদের জনপ্রিয়তাও দলীয় প্রার্থীর কাছাকাছি। এর ফলে দলীয় প্রতীক নৌকার প্রার্থীর ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে নেতারা মনে করছেন।
সবশেষ তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ১০০৪টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ করার আগে ১০০টিতে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হছেন। আর ৯০৪টিতে ভোটগ্রহণ হলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচিত হন ৪৪৬টি ইউপিতে।
দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৪টি ইউপির মধ্যে ৩৩০টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও স্বতন্ত্রসহ অন্য দলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছৈ। প্রথম ধাপের ২০৪টি ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২৮ জন এবং আওয়য়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন ৪৯ জন।
এই তিন ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যারা পরাজিত হয়েছেন তাদের অনেকেরই অবস্থা শোচনীয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, তৃতীয় ধাপে যে সব ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন তার মধ্যে ১৮১টি ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা তৃতীয় অবস্থানেও যেতে পারেননি। আগের দুই ধাপেও অনেক ইউপিতে পরাজিতদের কেউ কেউ খুবই কম ভোট পেয়েছেন। দেশে মোট চার হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে আরও দুটি ধাপে নির্বাচন বাকি রয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, ইউপি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। এর ফলে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বেশি হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের থামানো যায়নি। এর ফলে আওয়ামী লীগের কর্মী, সমর্থকরা বিভিন্ন দিকে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এতে স্বাভাবিকভাবেই ভোটাররাও প্রভাবিত ও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বলে তারা জানান।
বিএনপির প্রার্থী না থাকায় তাদের দলীয় কর্মী-সমর্থকরা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দিচ্ছে এবং তাদের পক্ষে কাজ করছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান। বিএনপির ভোটগুলোও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা পাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ বিরোধী, নৌকা বিরোধী অবস্থান থেকেও তারা বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাদের কর্মী-সমর্থকরা বসে নেই বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, মানুষ ভোট দিচ্ছেন, মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন, এটাই বড় কথা। নির্বাচনে মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে অংশ নিচ্ছেন। এটা ইতিবাচক দিক হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। যদিও তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী অনেক জায়াগায় আছে। তবু বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগের এতো বিদ্রোহী প্রার্থী হতো না। দলের ভোটও ভাগ হতো না। তখন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর অবস্থান আরও শক্ত হতো। আর তাছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় তাদের কমী-সমর্থক এবং সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর যারা রয়েছেন, তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরোধিতা করতে গিয়ে বিদ্রোহীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। যার প্রভাব কিছুটা পড়েছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের বিষয় নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের, স্থানীয় জনগণের নানা বিষয় থাকে। সে বিষয়গুলো নির্বাচনে কাজ করে। দলের জনপ্রিয়তার প্রভাব পড়ে জাতীয় নির্বাচনে, সেটা স্থানীয় নির্বাচনে পড়ে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০২১
এসকে/এমজেএফ