নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের কালাপাহাড়িয়া থানা ছাত্রদলের কমিটিতে পদ পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (এমপি) নজরুল ইসলাম বাবুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছয় জন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের সঙ্গে এমপি বাবুর একাধিক ছবি রয়েছে।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে সত্যতা পাওয়া গেছে।
জানা যায়, গত ২৬ জানুয়ারি এ কমিটি অনুমোদন দেন আড়াইহাজার থানা ছাত্রদলের সভাপতি জুবায়ের রহমান জিকু ও সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসাইন। ৩০ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটিতে স্থান পেয়েছে বিবাহিত, ছাত্রলীগের কর্মী ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া নেতারা। আর এদের নাম প্রস্তাব করেছেন উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোবারক। মোবারক এমপি বাবুর বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপির সংসদ সদস্য প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এ কারণেই এ কমিটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে তৃণমূল ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে।
এমপি বাবুর বিরুদ্ধে বিএনপির কোনো প্রার্থী যেন মাঠে নামতে দলীয় পদধারী নেতাদের পাশে না পান সেজন্য কৌশলে ছাত্রলীগের অনুপ্রবেশ ঘটছে বলে মনে করছেন কমিটির সংশ্লিষ্টরা।
ছাত্রদলের একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসাইনের বাড়ি কালাপাহাড়িয়া এলাকায়। ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ক্ষমতাসীনদের প্রভাবের কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সমন্বয় করে রাজনৈতিক বর্তমান অবস্থায় রাজনীতি চালিয়ে যেতে হয় তাকে। তিনি উপজেলায় নিজের রাজনৈতিক অবস্থান বজায় রাখতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আজাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়েন। তবে ঠিক কি কারণে ছাত্রলীগ ও বিবাহিতদের কমিটিতে তিনি পদায়ন করেছেন তা অনেকের বোধগম্য নয়।
একাধিক ছবি দেখে ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সিনিয়র সহ-সভাপতি জুয়েল আহমেদ ভুঁইয়া বিভিন্ন সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আজাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেন এবং লোকজন সরবরাহ করেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এমপি বাবুর পক্ষে প্রচার করেন তিনি।
কালাপাহাড়িয়া থানা ছাত্রদলের কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ পাওয়া রেদওয়ান আহমেদ আকাশ বিবাহিত। তিনি ২০২১ সালের আগস্ট মাসে বিয়ে করেন। আরেক সহ-সভাপতি সুজন মিয়া সরাসরি এমপি বাবুর হ্যান্ড হিসেবে কালাপাহাড়িয়াতে পরিচিত। তিনি বাবুর হয়ে সরাসরি কাজ করেন। এছাড়া তিনি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের উপ গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক। সহ-সভাপতি জুয়েল আহমেদ ভুঁইয়া নজরুল ইসলাম বাবুর ব্যানার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। তিনি এমপি বাবুর লোক হিসেবেও পরিচিত। সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম শাহেদের সঙ্গেও এমপি বাবুর একাধিক ছবি ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তিনিও তার ঘনিষ্ঠ বলে জানা যায়। প্রচার সম্পাদক পদ পাওয়া শাওন সালেহীন ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে সরাসরি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোট চেয়েছেন। তিনি উপজেলা বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম আজাদকে হারাতে মাঠে কাজ করেছেন। এছাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের পাঠাগার সম্পাদকও তিনি। কমিটির এক নম্বর সদস্য সুমন আহমেদ ভুঁইয়া নিয়মিত এমপি বাবুর সভা-সমাবেশ মিছিলে অংশ নেন। তার এমন ছবিও ভাইরাল হয়েছে।
এ ব্যাপারে আড়াইহাজার থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসাইন বাংলানিউজকে জানান, আমরা সবাইকে নিয়ে বসে কমিটি করেছি। নজরুল ইসলাম আজাদ ভাই নিজে কমিটি করে দিয়েছেন। আকাশ বিবাহিত সেটা আমি জেনেছি। তিনি আমাদের কাছে তথ্য গোপন করেছিলেন। আর এতগুলো লোক কীভাবে ছাত্রলীগে থেকে ছাত্রদলে পদ পায় তাতে আমিও অবাক। তবে এরা সবাই এখন সক্রিয় ছাত্রদলকর্মী। এরা সবাই আমাদের দলীয় কর্মসূচিগুলোতে অংশ নেন। উপজেলা ছাত্রদলকে শক্তিশালী করতেই এ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি বাংলানিউজকে জানান, এরকমটি হবার কথা নয়। যদি সাংগঠনিক নিয়মের কোনো ব্যত্যয় কমিটিতে হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২২
এমআরপি/আরআইএস