ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গুম-খুন-নির্যাতনের বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার(১৬ এপ্রিল) দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্ত্রব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, যে ঘটনাগুলো বাংলাদেশে ঘটছে, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক বিশ্ব কাজ করছে। নট দ্যাট যে এখন করছে। প্রত্যেক বছর যুক্তরাষ্ট্র এই মানধিকার রিপোর্ট প্রকাশ করে, প্রত্যেকটা দেশের ওপর প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হয়রানি, গুম, খুন- এটা তারা বলেই আসছে। বিশেষ করে সম্প্রতি র্যাবসহ ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা কী প্রমাণ করে? এতে প্রমাণ হচ্ছে, এটা শুধু আমাদের কথা নয়, এটা এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সত্য যে, বর্তমান সরকার সম্পূর্ণ ফ্যাসিবাদী, গণতন্ত্রের আশপাশেও তারা নেই, গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। বাংলাদেশের সংবিধানের যে বিষয়টা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সেটাকেই তারা ধবংস করে ফেলেছে। ’
যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিবেদনের প্রভাব আগামী জাতীয় নির্বাচনে পড়বে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনই হবে কিনা- তা নির্ভর করবে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হবে কিনা তার ওপর। নির্বাচনের পরিবেশ যদি তৈরি হয় তাহলে নিশ্চিত ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং আন্দোলনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ’
শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ সংবাদ জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘গত ১২ এপ্রিল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর কর্তৃক প্রকাশিত ‘২০২১ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক রিপোর্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খরা বাহিনীর ভূমিকা, বিচার ব্যবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপ সম্পর্কে যে বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে। সে সম্পর্কে স্থায়ী কমিটি সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্মম নির্যাতনের ফলে হত্যাকাণ্ড, প্রতিবাদকারী ব্যক্তিদের বাবা-মা, ভাই-বোনদের গ্রেফতার, বিচার প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার, বিশেষ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া ও কারাগারে পাঠানোকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বলে রিপোর্টে উল্লেখ করায় প্রকৃত সত্য উদঘাটন হয়েছে বলে স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে। ‘
সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ -টিআইবির গবেষণায় কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বেশি দামে টিকা ক্রয় ও অর্থ ব্যয়ে চরম অস্বচ্ছতার কারণে ২৩ হাজার কোটি টাকার অনিয়মের তথ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির উদ্বেগের কথা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ মদদ ও সীমাহীন দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের মারাত্মক ক্ষতি করা হচ্ছে। অবিলম্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের দুর্নীতির বিষয়গুলো নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য দুদকের প্রতির আহ্বান জানানো হয়েছে স্থায়ী কমিটির সভা থেকে। ’
বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলা যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে খারিজ হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘চুরির বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই একেবারে দায়সারা ভাবে এবং দায়িত্বহীনতার কারণেই মার্কিন আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত মামলা দায়ের করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়াই প্রমাণ করে যে সরকারের কোনো মহল এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। অবিলম্বে সঠিক তথ্য জনগণের সামনে উন্মোচন করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয় স্থায়ী কমিটির সভায়। ’
আগামী ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস এবং ৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস বিএনপি পালন করবে বলে জানান মির্জা ফখরুল।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, ১৬ এপ্রিল, ২০২২
এমএইচ/এমএমজেড