ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

সম্মেলনের পাশাপাশি তৃণমূলের দ্বন্দ্ব মেটাতে চায় আ.লীগ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২২
সম্মেলনের পাশাপাশি তৃণমূলের দ্বন্দ্ব মেটাতে চায় আ.লীগ

ঢাকা: জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্মেলনের পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এখন থেকে এই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলা সম্ভব না হলে নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।

জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে জেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ের সম্মেলনের কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। গত মার্চ থেকে এই কার্যক্রম শুরু হলেও রোজার শুরু হওয়ার পর সম্মেলনের কাজ স্থগিত রাখা হয়। ঈদের পর আবারও পুরোমাত্রায় সম্মেলন কার্যক্রম শুরু হবে। সম্মেলনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দলের মধ্যে বিদ্যমান গ্রুপিং মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দলের নীতিনির্ধারকরা জানান।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে গ্রুপিং রয়েছে। দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে স্থানীয় রাজনীতিতে নিজেদের প্রভাব প্রতিষ্ঠাসহ ব্যক্তিগত স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করেই মূলত এসব দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। অধিকাংশ দ্বন্দ্বের সৃস্টি হয়েছে স্থানীয় এমপি ও স্থানীয় নেতাদের মধ্যে মতবিরোধী থেকে।

গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো স্থানে পুরোনো দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়ে সংঘাত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এর ফলে ইউপি নির্বাচনে দলের অনেক ক্ষতিও হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসব দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে দলের কেন্দ্র থেকে। না হলে নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে মাঠে নামানো কঠিন হয়ে পড়বে। এতে দলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানান তারা।

সারাদেশে ৮টি বিভাগের অধিকাংশ সাংগঠনিক জেলাতেই নেতাকর্মীদের মধ্যে কম-বেশি গ্রুপিং রয়েছে। কোথাও জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে মতবিরোধ থেকে থেকে গ্রুপিং, কোথাও জেলা নেতাদের সঙ্গে স্থানীয় এমপির দ্বন্দ্ব ও এর থেকে তৈরি হয়েছে একাধিক বিবাদমান গ্রুপ। আবার কোনো কোনো জেলায় দলের কেন্দ্রীয় নেতা বা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে স্থানীয় কমিটির সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব রয়েছে।

গত ইউপি নির্বাচনে এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছিল। কোথাও কোথাও দলের মনোনীত ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্বে বিদ্রোহী প্রার্থীকে স্থানীয় এমপি বা প্রভাবশালী নেতারা সমর্থন দিয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কোথাও কোথাও সম্মেলনেও প্রভাব ফেলছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নওগাঁ, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জে বিবাদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।

অভ্যন্তরীণ এসব দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান জানান, তিনি এটাকে বড় ধরনের কোনো সমস্যা মনে করেন না। এটাকে দলের সৌন্দর্য্য হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, এতে কাজের গতি বাড়ে।

আওযামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সূত্র থেকে জানা যায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রাজাশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনীতে স্থানীয় নেতা ও এমপিদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। বিভিন্ন সময় কেন্দ্র থেকে এসব দ্বন্দ্ব মেটানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিভাগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, ফরিদপুর, শরিয়তপুর, মাদারিপুর, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে দ্বন্দ্ব রয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগে নেত্রকোনা, শেরপুর, ময়মনসিংহ মহানগর, খুলনা বিভাগে খুলনা জেলা, যশোর, সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জে এবং বরিশাল বিভাগে বরিশাল মহানগর, বরগুনায় দ্বন্দ্ব রয়েছে।

এদিকে যেসব জেলায় দ্বন্দ্ব রয়েছে সে সব জেলার দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফলতে আট বিভাগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের যে আটটি দল সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড  পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন তাদের ওপর এ দ্বন্দ্ব মিটানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর গত মার্চ থেকে এই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল বিভাগের কয়েকটি জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দ্বন্দ্ব মেটানোর এই প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে বলে ওই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানান।

এ সব বিষয়ে আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ এত বড় দল সেখানে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তো থাকবেই। আমি মনে করি এটা আওয়ামী লীগের সৌন্দর্য্য। পছন্দ-অপছন্দের বিষয় না থাকলে কাজের প্রতিযোগিতা থাকে না। প্রতিযোগিতা থাকলে কাজের গতি বাড়ে। তবে যেসব জায়গায় দ্বন্দ্ব রয়েছে সেগুলো আমরা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি। এটা চলমান। আর তাছাড়া যত দ্বন্দ্বই থাকুক দিন শেষে সবাই শেখ হাসিনার কর্মী। তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২২
এসকে/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।