ঢাকা: সাঙ্গ হলো বিদ্যুতের গণশুনানি। চার দিনব্যাপী গণশুনানিতে পাইকারি ও খুচরা (গ্রাহক পর্যায়ে) বিদুতের দাম বৃদ্ধির উপর গণশুনানি গ্রহণ করা হয়।
বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রস্তাবিত পাইকারি দাম ১৮.১২ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা বিবেচনায় ১৭ থেকে ২৫.৮৯ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছিলো। দু’টি বিতরণ সংস্থার সামান্য বৃদ্ধির সুপারিশ থাকলেও অন্যদের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।
পাইকারি দাম বাড়লে (প্রস্তাবিত ৫.১৬ শতাংশ) বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ৭.৮৩ শতাংশ এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ২.২৮ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।
পাইকারি দাম বাড়ালেও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন পড়বে না।
পাইকারি দাম না বাড়লে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ডিপিডিসি ২৯১ কোটি, ডেসকো ২৩৪ কোটি এবং আরইবি ৩৬৪ কোটি টাকা মুনাফা করবে বলে হিসেব করে দেখিয়েছে কারিগরি কমিটি।
অন্যদিকে পাইকারি দাম ১৮.১২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল বিপিডিবি। তেলের বর্তমান দাম এবং আগামী অর্থ বছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ৬ হাজার থেকে কমিয়ে ৪ হাজারে নেমে আনা বিবেচনায় এ প্রস্তাব দিয়েছিল সরকারি এ সংস্থাটি। কিন্তু কারিগরি কমিটি নো লাভ নো লোকসান বিবেচনায় পাইকারি দাম ৫.১৬ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ দেয়।
আর বিতরণ সংস্থাগুলো পাইকারি দাম বৃদ্ধি বিবেচনায় এ প্রস্তাব দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
গণশুনানিতে অংশ নিয়ে বিপিডিবি ছাড়া অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিরা বলেন, পাইকারি দাম না বাড়লে তাদের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই।
যে কারণে বিতর্কে ঘুরে ফিরে পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের যৌক্তিকতা উঠে আসে। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ২০১৪ সালের মার্চে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের মূল্য ছিল ১২৩ ডলার। যা এখন ৫০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এখন দাম বাড়ানোর পরিবর্তে কমানো সময় এবং সুযোগ এসেছে।
তার বক্তব্যের জবাবে বিপিডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, তেলের দাম কমলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো প্রয়োজন হতো না। কিন্তু তেলের দাম কমলেও বিপিডিবি তার সুফল পাচ্ছে না। বিপিডিবিকে আগের দামেই তেল কিনতে হচ্ছে।
কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি হিসেবে দেখা গেছে, তেলের দাম কমানো না হলে আর বিদ্যুতের মূল্য অপরিবর্ত থাকলে ১ হাজার ১৭ কোটি টাকা লোকসান হবে বিপিডিবির।
জবাবে শামসুল আলম বলেন, সরকার তেলে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করছে। সেখান থেকে ১ হাজার কোটি টাকা বিদ্যুতের ভর্তুকি দিন সরকার। ওইটাও সরকারের খাত এইটাও সরকারের খাত।
শামসুল আলম এ মুহূর্তে দাম বৃদ্ধি করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত না করার মতামত দেন।
জবাবে বিইআরসির চেয়ারম্যান এ আর খান বলেন, কমিশন বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবে। সবদিক বিশ্লেষণ করেই আদেশ দেওয়া হবে।
২০ জানুয়ারি রাজধানীর কারওরান বাজারে টিসিবি মিলনায়তনে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের উপর অনুষ্ঠিত গণশুনানি অনুষ্ঠিত। প্রথম দিন বিপিডিবির পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের উপর গণশুনানি গ্রহণ করা হয়।
এরপরদিন ২১ জানুয়ারি পিজিসিবির হুইলিং চার্জ এবং ওজোপাডিকোর খুচরা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর শুনানি হয়।
২২ জানুয়ারি বিপিডিবি ও ডিপিডিসি। শেষ দিন ২৫ জানুয়ারি আরইবি ও ডেসকোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি গ্রহণ করা হয়।
বিতরণ কোম্পানি গুলো বর্তমান সর্বোনিম্ন ধাপ ৫০ ইউনিট ৩০ ইউনিট করার প্রস্তাব করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের পরামর্শে এ প্রস্তাবনা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। তবে ভোক্তারা এর চরম বিরোধীতা করেছেন।
আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণশুনানি। তারপর সিদ্ধান্ত দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে বিইআরসি চেয়ারম্যান।
বিইআরসি চেয়ারম্যানের প্রাণবন্ত উপস্থাপনা ও হাস্যরস জমিয়ে রাখে গণশুনানি। সকলের কথা মনযোগ সহকারে শোনা হয়। ভোক্তারা এর জন্য ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, যেভাবে মতামত নেওয়া হচ্ছে সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৫