ঢাকা: জ্বালানি তেলের দাম কমাতে আপত্তি নেই। তবে দাম কমলে সেই সুবিধা ভোক্তারা পাবে কি-না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
ডিজেল পেট্রোলের দাম কমালেও সাধারণ ভোক্তারা সেই সুবিধা পাবেন না। যে কারণে জ্বালানি তেলের দাম না কমিয়ে ডিজেল ব্যবহারকারি কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে মন্ত্রণালয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তেলের দাম কমালে গাড়ি ভাড়া কমবে এমন নিশ্চয়তা দেওয়া কঠিন। সাধারণ মানুষ যদি সু্বিধা নাই পায় তাহলে তেলের দাম কমিয়ে লাভ কি।
তিনি বলেন, যারা কোটি টাকা দামের গাড়ি ব্যবহার করেন, তাদের সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবছে না সরকার। সরকার সাধারণ জনগণকে সুবিধা দিতে চায়।
আর তেলের দাম কমালে যদি তারা সুবিধা নাই ভোগ করতে পারেন তাহলে দাম কমিয়ে কি হবে। সে কারণে বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে।
শিগগিরই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে চান বলে জানিয়েছেন নসরুল হামিদ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি তেলের দাম না কমিয়ে কৃষকদের ভর্তুকির ব্যবস্থা করি, তাতে প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হবে। সে দিকেই যাওয়াই সঠিক হবে। তবে সবটাই এখনও আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রড অয়েল) প্রতি ব্যারেলের দাম উঠেছিলো ১২২ ডলার। সেই বৃদ্ধির অযুহাতে ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয় বাংলাদেশে। তখন পেট্রোল-অকটেন লিটার প্রতি ৫ টাকা ও ডিজেল কেরোসিনের দাম ৭ টাকা করে বাড়ানো হয়েছিলো।
সেই অপরিশোধিত জ্বালানি তেল এখন অর্ধেক অর্থাৎ ৫৭ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। গত জানুয়ারি মাসে যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছিলো (৫০ ডলার)। তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়াতে তোড়জোড় দেখা গেলেও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও কমানোর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে গেলে সাংবাদিকদের তখন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব আবুবকর সিদ্দিক বলেছিলেন, আপাতত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মার্কেটে যদি জুলাই পর্যন্ত দাম কম থাকে, তাহলে তেলের দাম কমানোর বিষয়ে ভাবা হবে।
ওই সময়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান বলেছিলেন, দীর্ঘদিন বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করে লোকসান দিয়েছে বিপিসি। সেই লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নিচ্ছি। এই অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে দাম কমানো হতে পারে।
বিপিসির একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, জ্বালানি তেলের কোনো পণ্যেই এখন লোকসান হচ্ছে না। তবে কোন পণ্যে কত লাভ হচ্ছে তা হিসাব না করে বলা কঠিন।
সূত্র জানায়, গত অর্থবছর বিপিসির ঘাটতি ছিল দুই হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। তবে একই সময়ে সরকার ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়েছে চার হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। কেনা-বেচায় বিপিসি লোকসান করলেও রাষ্ট্রের মুনাফা হয়েছে দুই হাজার ৪৭ কোটি টাকা।
২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় জ্বালানি তেলের চাহিদা (বার্ষিক) ছিলো ৩৫ লাখ মেট্রিক টন। যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল, আর প্রায় সাড়ে ২৬ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়েছিলো। চলতি অর্থ বছরে প্রায় ৫৪ লাখ টন জ্বালানি তেলের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৫
এসআই/জেডএম/এটি