ঢাকা: আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এপিএসসিএল) সাবেক এমডি নুরুল আলমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার বিরুদ্ধে টেন্ডার জালিয়াতির অভিযোগের তদন্ত চলছে।
এমনকি তার বাসার ঠিকানায় চিঠি দিলেও সব চিঠিই ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্য বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, তদন্তকাজে নুরুল আলম কোনো রকম সহায়তা করছেন না। আর তার রহস্যময় অাত্মগোপনের কারণে থমকে আছে তদন্তের কাজ। অগত্যা তারা শিগগিরই বৈঠক করে নতুন কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, বাংলাদেশের পিপিআর অনুযায়ী চূড়ান্ত দর অনুমোদনের পর আপোসরফার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু আশুগঞ্জে ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২২’শ ২৬ কোটি টাকার দর পরিবর্তন করে ৩২’শ কোটি টাকা করা হয়েছে। এ কারণে বাড়তি ১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে।
অভিযোগ উঠেছে, এই অনিয়মের কারণে রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকা লোকসান হলেও কোম্পানিটির বোর্ড চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন এবং সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আলম ৪৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এর মধ্যে দুই মিলিয়ন ডলার লেনদেন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সানফ্রান্সিসকো শহরে অবস্থিত ওয়েল ফারগো ব্যাংকে। ব্যাংকটিতে রয়েছে এপিএসসিএলের সাবেক এমডি প্রকৌশলী নুরুল আলমের ছেলে মাহফুজ আলমের অ্যাকাউন্ট। সেই অ্যাকাউন্টেই ২ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয়েছে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ থেকে।
ওই দুর্নীতির নিয়ে বাংলানিউজ ও দৈনিক কালেরকণ্ঠ পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অর্থ জালিয়াতির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই আমেরিকান ব্যাংকে ঘুষ লেনদেনের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ‘ওয়েল ফারগো’ কোনো তথ্য দেয় নি বাংলাদেশকে। তারা হিসাব পরিচালনাকারি মাহফুজ আলমের পাসপোর্ট নম্বর তার স্থায়ী ঠিকানার তথ্য চেয়েছে। আর এই তথ্য চেয়ে নুরুল আলমের বাসায় ঠিকানায় একাধিক চিঠি পাঠানো হলেও সব চিঠিই ফেরত এসেছে প্রাপক না থাকায়।
বিদ্যুৎ বিভাগসূত্র ধারণা করছে, অবস্থা বেগতিক দেখে নুরুল আলম দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। হয়তো বা বিচারের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আর কোনো দিন না-ও ফিরতে পারেন।
নরুল আলম গা-ঢাকা দেওয়ার আগে এপিএসসিএল থেকে পেনশনের পুরো অর্থ তুলে নিয়েছেন। সাধারণত কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে পেনশন আটকে দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে তদন্ত কমিটি গঠনের পর তড়িঘড়ি করে আগের তারিখ দেখিয়ে পেনশনের অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। আর এই কাজে তাকে সহায়তা করেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের আরেক অভিযুক্ত অতিরিক্ত সচিব ও কোম্পানির বোর্ড চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আরস্তু খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তদন্ত চলছে এখনই এর বেশি বলতে চাচ্ছি না। ’
তদন্ত কমিটির সদস্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর সীতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৫
সম্পাদনা: জেএম