ঢাকা: সাঙ্গু থেকে গ্যাস কেনার জন্য খোদ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে সাড়ে ৪ ডলার দিতে হচ্ছে। উৎপাদন বণ্টন চুক্তিতে (সাগর থেকে উত্তোলিত গ্যাস) মূল্য যখন ৭ ডলার নির্ধারণ করা হচ্ছে, বাংলাদেশ যখন ১৪ ডলার দিয়ে কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করতে যাচ্ছে, ঠিক তখন বিদেশি সার কোম্পানি কাফকোকে (কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি) মাত্র সাড়ে ৪ ডলার মূল্যে গ্যাস সরবরাহের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।
কাফকোর সঙ্গে এটি দ্বিতীয় দফা চুক্তি। এর আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতার পড়ন্ত বেলায় কাফকোর সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন।
তখন এই চুক্তির প্রবল বিরোধিতা উঠেছিলো। যা পরে এরশাদের পতন ইস্যুতে যুক্ত হয়ে আন্দোলনকে বেগবান করে বলে দাবি করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম। তখন আওয়ামী লীগসহ সব দলই এর বিরোধিতা করেছিলো। এমনকি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেছিলেন, এই চুক্তিটি দেশের জন্য ক্ষতিকর। তবে বাতিল করলে বাংলাদেশকে আরও বেশি জরিমানা দিতে হবে। তাই এই চুক্তি বাতিল করা যাচ্ছে না।
কিন্তু সেই কাফকোর সঙ্গে নতুন করে ৫ বছর মেয়াদি চুক্তিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকার গ্যাস কমদামে না দিয়ে বিকল্পপন্থা গ্রহণ করলে দেশের মঙ্গল হতো বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, সরকার গ্যাস বিক্রি না করে, উৎপাদন মূল্যের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভের শর্তে গ্যাস সরবরাহ করতে পারতো। তাতে কমদামে সার পেতো।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক দরে যদি সার কিনতে হয়, তাহলে বাংলাদেশ কেন নামমাত্র মূল্যে গ্যাস সরবরাহ করবে। কার উৎসাহে এই চুক্তি করা হয়েছে। এর তদন্ত হওয়া উচিত। কারা দেশের স্বার্থ বিরোধী এই চুক্তিতে ইন্ধন দিচ্ছে তাদেরও মুখোশ উন্মোচন করা দরকার বলে মন্তব্য করেন শামসুল আলম।
তিনি বলেন, যখন দেশীয় কোম্পানিকে গ্যাস কিনতে সাড়ে ৪ ডলার মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে ৪.৫৫ ডলারে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। তাও আবার ৫ বছর মেয়াদে।
জ্বালানি বিভাগের সচিব আবুবকর সিদ্দিক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দেশের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে চুক্তি করা হয়েছে। এখন কাফকোর কাছে গ্যাস বিক্রি করে লাভ হবে। কাফকোর সঙ্গে ২০ বছর আগে যে চুক্তি হয়েছিল, সে তুলনায় এখন অনেক ভালো চুক্তি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ, জাপান, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও সাব-কন্টিনেন্টাল অ্যামোনিয়া ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির যৌথ মালিকানায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) প্রতিষ্ঠা করা হয়। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর পাশে এই সার কারখানায় বর্তমানে ৪৩ শতাংশের মালিকানা বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের। জাপানের ৩০ ও ডেনমার্কের ২০ শতাংশ এবং বাকিদের ৭ শতাংশ অংশ আছে।
কাফকো বছরে প্রায় সাত লাখ টন ইউরিয়া সার ও দেড় লাখ টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন করে। বাংলাদেশ পানির দরে গ্যাস সরবরাহ করলেও সার কিনতে হয় আন্তর্জাতিক দরে। যে কারণে এরশাদ যখন এ চুক্তি করেন তখন প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ২০ বছর পর প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাস ৩.৩ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৪.৫৫ ডলারে চুক্তি করা হয়েছে।
সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে সার কারখানাগুলো বন্ধ রাখা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এপ্রিল-মে মাস থেকেই কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ ছিল। কাফকোতেও তখন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে অন্যান্য সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ শুরু হলেও জুনে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কাফকোকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ ছিলো।
নতুন করে চুক্তি নবায়নের পর ৯ সেপ্টেম্বর থেকে আবার গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে কাফকোতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ছয় কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৫
এসআই/জেডএম