ঢাকা: বর্তমানে দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) বাৎসরিক অপরিশোধিত তেল পরিশোধন ক্ষমতা ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
ভবিষ্যতে পরিশোধিত তেলের চাহিদা আরো বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
তাই সম্ভাব্য চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ঘাটতি ঠেকাতে আগেভাগেই জ্বালানি চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য আনতে নানা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ইআরএল।
এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ৯৮১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। তবে এ অর্থের ৩ হাজার ৯০৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ঋণ সহায়তা হিসেবে দেবে চায়না এক্সিম ব্যাংক।
ইআরএল সূত্র জানায়, ইআরএল-২ ইউনিট বাস্তবায়িত হলে অপরিশোধিত তেলের বাৎসরিক পরিশোধন ক্ষমতা হবে ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন। এর পাশাপাশি ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন পরিশোধিত তেল পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রাও ধার্য করা হয়েছে।
এ লক্ষে ইতোমধ্যে নানা ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ইআরএল। ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং ডাবল পাইপ লাইন’ প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পটি সেপ্টেম্বর ২০১৫ থেকে শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্প এলাকাগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলার উত্তর পতেঙ্গা, আনোয়ারা, পটিয়া ও মহেশখালী উপজেলা।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় আমদানিকৃত অপরিশোধিত তেল এবং ফিনিশড প্রোডাক্টসের (এইচএসডি) খালাস সহজে, নিরাপদে, স্বল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া লাইটারেজ অপারেশনের মাধ্যমে অপরিশোধিত ও ফিনিশড প্রোডাক্টস আমদানিতে যে সিস্টেম লস হয় তাও কমানো হবে।
এ জন্য মহেশখালীতে ডিজেল ও ক্রুড স্টোরেজ ট্যাংক ফার্ম স্থাপনের মাধ্যমে পেট্রোলিয়াম অয়েলের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক শরিফ হাসনাত বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে একনেক সভায় প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে। প্রকল্পটি সঠিক সময়ে বাস্তবায়িত হলে জ্বালানি খালাসের ক্ষেত্রে অপচয় কমে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ছোট ছোট লাইটারেজ ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে তেল খালাসে অনেক অপচয় হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ অপচয় কমে আসবে। জ্বালানি খালাসে সাশ্রয়ের পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়েরও কোনো আশঙ্কা থাকবে না।
শরিফ হাসনাত আরো বলেন, ইআরএল-২ ইউনিট বাস্তবায়িত হলে অপরিশোধিত তেল সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এদিকে, জটিল ও নতুন প্রকল্প উল্লেখ করে ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) কিছু ব্যয় নির্ধারণ করেছে ইআরএল। এতে প্রকল্প এলাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন (ইপিসি) ঠিকাদার বাবদ ব্যয় বরাদ্দ ১৮৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের নকশা বাবদ ১৪৫ কোটি, প্রকৌশল এবং সাইট সুপারভিশন বাবদ ৭৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (শিল্প ও শক্তি) এস এম গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্পের আওতায় বিদেশি পরামর্শক বাবদ অধিক বরাদ্দের প্রস্তাব করে ইআরএল।
প্রকল্পের ডিপিপিতে একজন প্রকল্প পরিচালক, জেনারেল ম্যানেজার, সহকারী ম্যানেজার ও সহ ফোরম্যানসহ মোট ২৩ জন জনবলের প্রস্তাব করা হয়েছে। এদের জন্য ৪ লাখ টাকা মোবাইল ফোন ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পিইসির সভায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি উল্লেখ করেন, প্রকল্প এলাকাটি গুরুত্বপূর্ণ ও এর তেলের পাইপ লাইন সমুদ্র, স্থলভাগ এবং সংরক্ষিত বনভূমির মধ্য দিয়ে প্রবেশ করবে। তাই পরিবেশের ওপর এর প্রভাবের বিষয়টিতে গুরুত্বের দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫
এমআইএস/এসআর