ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

রামপাল বিদ্যুতের দ্বিতীয় ইউনিট বাতিল!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৬
রামপাল বিদ্যুতের দ্বিতীয় ইউনিট বাতিল!

ঢাকা: রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইস্যুতে আগের অবস্থানে নেই সরকার,  বলা যায় অনেকটাই নমনীয়। এরইমধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

পাওয়ার সেলের (বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান) মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘যদিও এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। তবুও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ’

‘যেখানে কয়লা ভিত্তিক দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা ছিলো। সেখানে সোলার প্যানেল বসানো হবে’ বলে জানান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এ-ব্লকে প্রথম ইউনিট স্থাপনের পর, বি ব্লকে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লা ভিত্তিক দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার।

দ্বিতীয় ইউনিটের জায়গায় প্রথম ধাপে ১০০ মেগাওয়াটের সৌর প্যানেল বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ জন্য অন্তত ৩৫০ একর জমির প্রয়োজন হবে। তবে সৌর বিদ্যুতের জন্য ৫০০ একর জমি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।

রামপাল ইস্যুতে ইউনেস্কোর উদ্বেগ সংবলিত চিঠির জবাবেও বিষয়টি যুক্ত থাকছে বলে পরিবেশ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নানামুখী সমালোচনার কারণে দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের বিষয়ে সরকার আর ভাবছে না। তবে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসিএল) এখনই হাল ছাড়তে নারাজ। তারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবায়নের বিষয়ে। বিভিন্ন ফোরামে নানা ধরনের যুক্তিও তুলে ধরছেন তারা।  

কিন্তু সরকার আর আগের মতো কঠোর অবস্থানে নেই। একটি ইউনিট মাথায় নিয়ে এগোচ্ছে। আগে যেমন কেউ সমালোচনা করলে কঠোর ভাষায় জবাব দেওয়া হতো। বলা হতো তাদের কোনো ধারণা নেই না জেনেই এমন মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

একই সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলদের আচরণে অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। তারা অনেকেই এখান থেকে সরে আসার পক্ষে। এখন রামপালের বিকল্প হিসেবে কক্সবাজারের মহেশখালীর কথা ভাবছে বিদ্যুৎ বিভাগ।  

সেখানে একাধিক কয়লা ও এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।  
 
এদিকে সরকার দেশের ভেতরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি আমদানিতে আরও বেশি নজর দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।  
বাংলানিউজকে তিনি জানিয়েছেন, দেশের ভেতরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হলে অনেক জায়গার প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে আমদানী করা গেলে সুবিধা পাওয়া যায়।

‘আমরা ভারত সরকারের পাশাপাশি ওপেন মার্কেট থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য দেশটির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি। তারাও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। ওপেন মার্কেট (বেসরকারি কোম্পানি) থেকে বিদ্যুৎ কিনতে পারলে অনেক দাম পড়বে,’ যোগ করেন নসরুল হামিদ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারত ছাড়াও নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়েও ভাবছে সরকার। এ জন্য ভারতের সঙ্গে ক্রসবর্ডার চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। চুক্তি হলে বাংলাদেশ নেপাল থেকে সরসারি বিদ্যুৎ কিনতে পারবে। এতে নেপাল সরকারেরও সম্মতি রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ ও নেপাল যৌথ বিনিয়োগে জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে। সেই বিদ্যুৎ আসবে বাংলাদেশে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের কয়লার বিষয়েও আগ্রহ দেখিয়েছে ভারত। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর ভারত সফর করেন। ওই সফরে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।  

তিনি জানান, ভারত ও বাংলাদেশের ভূ-কাঠামো যেহেতু একই ধরনের, সে কারণে ভারতের সহায়তা নিয়ে কয়লা উত্তোলন করতে চায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ থেকে কয়লা আমদানি করবে ভারত। সেই কয়লা দিয়ে ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। আর সেই বিদ্যুৎ আসবে বাংলাদেশে। এমন পরিকল্পনার কথাও আলোচনা হয়েছে দু’দেশের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৬/আপডেট: ১২০৬ ঘণ্টা
এসআই/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।