ঠাকুরগাঁও: তীব্র পেট্রল সংকটে পড়েছে ঠাকুরগাঁও। প্রায় এক সপ্তাহ যাবত জেলার ফিলিং স্টেশনগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না পেট্রল।
পেট্রল পাম্প কর্তৃপক্ষ এবং খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ডিপো থেকে পেট্রল সরবরাহ বন্ধ থাকায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে কবে নাগাদ এই সমস্যার সমাধান মিলবে তা কেউ বলতে পারছেন না।
সংকট শুরুর পর থেকে পেট্রল না থাকায় বাধ্য হয়ে বিকল্প হিসেবে অকটেন ব্যবহার করছিলেন আরোহীরা। তবে বৃহস্পতিবার (৫ মে) থেকে কিছু ফিলিং স্টেশনে অকেটেন নেই জানিয়ে স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে দ্রুতই অকটেন সংকটের আশঙ্কা কাজ করছেন সাধারণ মানুষ।
মোটরসাইকেল চালক ফারুক বলেন, ঈদের তিন দিন আগ থেকে পেট্রল পাচ্ছি না। কী কারণে পেট্রল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে তার সঠিক উত্তর দিতে পারে না ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ। ফলে আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।
পেট্রল সংকটের বিষয়ে কাদের ফিংলি স্টেশনের ম্যানেজার রুহুল আমিন জানান, ডিপো থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে কী কারণে সেটা আমার জানা নেই। পেট্রল না দিতে পারায় আমাদের অনেক কাস্টমার ফির যাচ্ছে। এই সমস্যা ঠাকুরগাঁওয়ের সব ফিলিং স্টেশনই। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই।
বড় বড় গ্যালন নিয়ে চৌধুরী ফিলিং স্টেশনে এসেছেন প্রাইভেটকার চালক সৌরভ। গ্যালন নিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি পেট্রলে গাড়ি চালাই। তবে পেট্রল না থাকায় এতদিন অকটেন ব্যবহার করছিলাম। কিন্তু অনেক পাম্পে এখন অকটেনও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই গাড়ির ট্যাংক ফুল করে গ্যালনেও স্টক করে নিচ্ছি। কারণ অকটেনও যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে গাড়ি বাসায় বসে থাকবে।
অকটেনের সংকট দেখিয়ে স্টেশন বন্ধ করা বাঁধক-কাঁকন ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজে রশিদুলাম ইসলাম জানান, ঈদে আগেই আমদের পেট্রল শেষ হয়ে গেছে এতে করে অকটেনের ওপরে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে এবং এটা দ্রুতই শেষ হয়ে গেছে।
তিনি জানান, আমাদের গাড়িতে দুই পার্ট করা। এক গাড়িতেই একদিকে অকটেন ও অপরদিকে পেট্রল নিয়ে আসি। তবে ডিপোতে এখন পেট্রল দিচ্ছে না। গাড়িতে শুধু অকটেন আনতে গেলে খরচ বেশি পড়ছে। তাই অকটেন সরবরাহ বন্ধ রেখেছি। ডিপোতে অকটেনের কোনো সংকট নেই।
মের্মাস সুরমা ফিলিং স্টেশনের মালিক মোস্তফা কামাল বলেন, পেট্রোল সরবরাহ না দিতে পারায় এবার ঈদে ব্যবসার চরম ক্ষতি হয়েছে। ডিপো থেকে সরবরাহ বন্ধ থাকায় বিপাকে পরেছি। আশা রাখি দ্রুত এর সমাধান হবে।
ঠাকুরগাঁও পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এনামুল হক জানান, জেলায় ফিলিং স্টেশনের সংখ্যা ৩৬টি। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ২৪, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় দুই, হরিপুর উপজেলায় দুই, রাণীশংকৈল উপজেলায় চার ও পীরগঞ্জ উপজেলায় চারটি ফিলিং স্টেশন রয়েছে।
এনামুল বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলায় দৈনিক পেট্রল, অকটেন ও ডিজেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার লিটার। এরমধ্যে পেট্রল ২৩ হাজার লিটার, অকটেন সাড়ে ১৬ হাজার লিটার ও ডিজেলের চাহিদা ৫০ হাজার লিটার। প্রতি লিটার পেট্রোল ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা, অকটেন ৮৯ টাকা ৮৫ পয়সা ও ডিজেল ৮০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করা হচ্ছে। এখন জেলায় প্রয় ১৪ হাজার লিটার পেট্রল সরবরাহ কম হচ্ছে। ফলে এই সংকটের সৃষ্টি।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, জেলায় জ্বালানি তেলের সংকট হয়েছে বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনার মাধ্যমেই বিষয়টি অবগত হলাম। তেলের সংকটের বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হবে এবং অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে জ্বালানি তেলের সংকট তৈরি করে থাকে তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাধ্যমেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৯ ঘণ্টা, ০৬ মে. ২০২২
এমএমজেড