ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

অবৈধ চক্রের হাতেই জিম্মি সাগরভাসা হারুনরা

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৬
অবৈধ চক্রের হাতেই জিম্মি সাগরভাসা হারুনরা

কোয়ানতান (মালয়েশিয়া) থেকে: সাগরে ভেসে ভেসে অবশেষে প্রাণ নিয়ে এ দেশে এসেও খুব একটা ভালো নেই হারুন (১৯)। দালাল আর মানব পাচারকারীদের হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দিয়ে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় এসে আজো বৈধ শ্রমিক হতে পারেনি সে।

বুকে ভয় নিয়েই ঘর হতে বের হয় সে।

কক্সবাজারের রামুর হারুন কাজ করেন পাহাং প্রদেশের রাজধানী কোয়ানতানের প্রাণকেন্দ্রের একটি রেস্টুরেন্টে। তিন বছর ধরে এই দেশে। তবে এখনো ঠিক অন্য শ্রমিকদের মতো ছুটি নিয়ে দেশে যাবার সুযোগ নেই তার।

ভারতীয় মালিকানাধীন তাজ পয়েন্ট নামের রেস্তোরাঁয় হারুনের কাজ টেবিলে টেবিলে খাবার ডেলিভারি দেয়া।

মালয়েশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এখানে বাংলাদেশিদের সংখ্যাটা তুলনামূলক কম।
হারুন একা নয়। তার মতো অবৈধ পথে আসা অনেক বাংলাদেশির এখন দিন কাটে চরম অনাদরে। মানবেতর জীবনে দু‘মুঠো খাবার যোগাড় করাই কষ্টকর অনেকের। সে তুলনায় হারুন খেয়ে পড়ে কিছুটা ভালোই আছে। অন্যদের পরিস্থিতি দেখে এমনটিই স্বান্ত্বনা তার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অবৈধ পথে আসা কয়েকজন শ্রমিক জানান, তাদের একটি বড় অংশই এখন স্বদেশ ফিরতে চান। তিন বছরেও কাজের বৈধতা না পেয়ে হতাশ তারা। যে কারণে মানবেতর জীবনযাপন করাটাও কঠিন হয়ে পড়েছে সেখানে।
তার ওপর ইমিগ্রেশন পুলিশের অভিযানের মুখে অনেককে ঘরবন্দি হয়েই থাকতে হয়। ধরা পড়লে জেল। নয়তো গুণতে হয় মোটা অংকের অর্থ। দিতে না পারলে দেশে ফেরত। কিন্তু সেই ফেরার টাকাটাও যোগাড় করতে হবে নিজেকে। যে কারণে বাধ্য হয়েই কম বেতনে অধিক কর্মঘণ্টায় কাজ করতে হয় তাদের।

আর এসব করতে গিয়ে রোগে ভুগে ‍দুঃশ্চিন্তায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবৈধ পথে আসা এখানকার অভিবাসী শ্রমিকরা। অর্ধাহারে-অনাহারে থেকেই অনিশ্চিত জীবনের পথে তারা।

মালয়েশীয় সরকার এসব শ্রমিকদের বৈধতা না দেয়ায় এই সুযোগটিকে কাজে লাগাচ্ছে এক শ্রেণীর নিয়োগকর্তা। কম বেতনে দুর্গম বনাঞ্চল বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা হচ্ছে তাদের।

হারুন জানান, কক্সবাজারের দুর্গম এলাকা ও ১৩ দিন সমুদ্র পাড়ি দিয়ে তাদের থাইল্যান্ড হয়ে পাঠানো হয়েছে মালয়েশিয়ায়।

দেশের জন্যে মন কাঁদে। মা-বাবা কেউ অসুস্থ হলেও দেশে ছুটি নিয়ে যাবার সুযোগ নেই।

হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল পাশ নিয়ে তবেই যেতে হবে। আর আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে দেশে ফিরলেও এ দেশে পুনরায় ঢোকা সম্ভব নয়।

কারণ পাসপোর্ট নিয়ে পুনরায় বৈধ পথে ঢুকতে গেলেই আঙ্গুলের ছাপ স্মরণ করিয়ে দেবে অবৈধ পথ ধরে এক সময়ে এ দেশে ঢুকে অপরাধ করেছিলো সে।

হারুন বাংলানিউজকে জানায়, অভিবাসন ব্যয় তুলতেই কেটে গেছে এক বছর। অবৈধ পথে আসায় এখন দেশে বৈধভাবে টাকা পাঠানোও জটিল। তাই হুন্ডিই ভরসা।

এভাবেই অবৈধ পথে এসে অবৈধ চক্রে পড়েই বেকায়দায় ভাগ্য অন্বেষণে আসা বাংলাদেশের অনেক শ্রমিক।

বৈধ হবার স্বপ্ন নিয়েই এখন দিন কাটে তাদের।

*পীরগঞ্জের জাহিদ মালয়েশিয়ায় খ্যাতনামা অধ্যাপক

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৬
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।