ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

বাঙালির কম্বলের ওজন ৩১ কেজি!

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৭
বাঙালির কম্বলের ওজন ৩১ কেজি! কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

ঢাকা: মাঘের শীতে একসময় গ্রামের অনেক বয়স্ক মানুষ মারা গেলেও এখন এ সংখ্যা কমে এসেছে। কারণ যারা ভিটে মাটি বেঁচে সন্তানদের বিদেশ পাঠিয়েছেন তাদের শীতের মৃত্যুতো প্রায় শূণ্যের কোটায় ধারণা করাই যায়। যদিও এই সংখ্যা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো জরিপ হয়েছে বলে জানা যায়নি।

শীতে বয়‍ঃবৃদ্ধদের মৃত্যুহার হ্রাসের কারণ শুধুই কি দেশের চিকিৎসা সেবার উন্নতি! এর অনুসঙ্গ হিসেবে রয়েছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক এনজাইম। যার নাম 'কম্বল'।

 
বাংলাদেশের আজকের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে সবচেয়ে বেশি শ্রম অভিবাসী শ্রমিকদের। আর অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত একটি নাম এই 'কম্বল'।

 
কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে বেসরকারি এয়ারলাইন্সের চেক-ইনে ওয়েট মেশিনে কম্বল রাখলে ওজন দেখে আৎকে ওঠেন কাউন্টারের স্টাফ! বলে কি, দুটি কম্বলের ওজন ৩১ কেজি! সামনে কপাল কুঁচকান বাংলাদেশি শ্রমিক আবদুর রহিম। কিছুটা হয়রানি বোধ করছেন। অনুরোধ করেন স্টাফকে, এক কেজি ওজন বেশিকে আমলে না নিতে। তবে মন গলছিলো না।

 

তবে দুটি কম্বলের ওজন ৩১ কেজি হলো কিভাবে! মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি-আরব, আরব আমিরাতসহ যেসব দেশে বাংলাদেশের শ্রমিকরা কাজ করতে যান সেখান থেকে এতো ভারি ভারি কম্বল নিয়ে ফেরেন বাংলাদেশিরা।

 

মূলত অনেকদিন পর বাড়ি ফেরেন বলে অনেক বেশি মালপত্র কিনে নিয়ে আসেন তারা। পরিবার ছাড়াও লতায় পাতায় জড়ানো স্বজনদের জন্যেও মাল কিনে নিয়ে আসেন। স্নো-পাউডার, ডিটার্জেন্ট, গুড়ো দুধের কৌটা, আয়রন মেশিন, প্রেসার কুকার থেকে শুরু করে, দেশে পাওয়া যায় বা না যায় এমন সব জিনিসই কম্বলে মোড়ানো হয়। কারন এতো বড় ট্রলি ব্যাগে সংকুলান হয় না। যেখানে এই সব জিনিস ঢুকবে।

আর সবচেয়ে বড় বিষয়, একটি কম্বলও নিয়ে যাওয়া হলো। আর আবার বিদেশে যাওয়ার সময়তো আবার খালি হাতেই যাওয়া হবে।

 
বিদেশে শ্রমিকরা বাড়ি ফেরার আগে ছুটি নিয়ে চলে যান বাজারে। সেখানে সবকিছু কেনা শেষে কিনে নেন দুটি কম্বল এবং নাইলনের দড়ি। কম্বল দিয়ে সকল মাল মুড়িয়ে এরপর দড়ি দিয়ে বেধে নেন। এরপর ওজন মেশিনে মেপে নেন।

 
সাধারণত এয়ারলাইন্সগুলোতে ফ্লাইটে ৭ কেজি এবং কেবিনে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি ওজন বহন করতে দেওয়া হয়। এর বেশি ওজন নিতে চাইলে তার জন্যে আলাদা অর্থ গুণতে হয়। ফলে মাপটাও করে নিতে হয় সতর্কভাবে।

 
কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটের একটি বেসরকারি বিমানের একজন স্টাফ জানিয়েছেন, এখন তারা জানেন বাংলাদেশি মানুষদের কম্বলের ওজন কেন এতো বেশি হয়। প্রথম দিকে তিনি যখন কে-ইন কাউন্টারে বসতেন, অবাক হতেন। পরে বাংলাদেশি কয়েকজন যাত্রী তাকে কম্বলে মুড়িয়ে মাল বহনের বিষয়টি জানিয়েছিলেন। দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্যে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কষ্ট করে অর্থ উপার্জন এবং ভালবাসাকে শ্রদ্ধার কথা প্রকাশ করেন তিনি।

 
ঢাকায় শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে বেল্টে যখন ছেড়া অবস্থায় কম্বল আসে আর সেখান থেকে সাধ করে কেনা কিছুর খোঁয়া যাওয়া চোখে পড়ে মন খারাপ হয় অভিবাসী শ্রমিকের, চোখ ভিজে পানি গড়িয়ে পড়ে।

 
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৭
এমএন/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।