এ উপলক্ষে গত ২১ ফেব্রুয়ারি জেনেভাস্থ বাংলাদেশের স্থায়ী দূতাবাস ও ঐতিহ্যবাহী সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ ক্লাব যৌথভাবে দিনব্যাপী একুশের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে।
একুশে ফেব্রুয়ারি প্রত্যুষে দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীতের সুরে সুরে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনের প্রথম কর্মসূচি উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রদূত এম শামীম আহসান।
বিকেল ৩টায় জেনেভায় জাতিসংঘ দপ্তরের প্রাঙ্গণে তিন পা চেয়ারের পাদদেশে ‘বাংলাদেশ ক্লাব’ আয়োজন করে অস্থায়ী শহীদ মিনার। সভাপতি আমজাদ চৌধুরীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং বিনোদন কর্মী ও নাট্যাভিনেতা নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে নির্মিত হয় অস্থায়ী শহীদ মিনার।
শহীদ মিনার বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্থায়ী দূতাবাসের পক্ষে ফার্স্ট সেক্রেটারি রবিউল হুসাইন; বাংলাদশ ক্লাবের পক্ষে সভাপতি আমজাদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সুমন; সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের পক্ষে সদস্য সচিব রহমান খলিলুর ও যুগ্ম-আহ্বায়ক নূর আহমেদ হিরণ, সদস্য পলাশ বড়ুয়া, মাসুম খান; লুজান ক্যান্টন আওয়ামী লীগের পক্ষে সভাপতি আশরাফুল আলম লিটন, সাধারণ সম্পাদক বিপুল তালুকদার, আলী আহাদ টিপু ও আজাদ রহমান; সুইজারল্যান্ড বঙ্গবন্ধু পরিষদের বিদায়ী কমিটির সভাপতি শ্যামল খান ও সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের মনির; সুইজারল্যান্ড বিএনপির পক্ষে শাহাদাৎ উদ্দীন নাহিদ; সুইজারল্যান্ড মাইনরিটি ফোরামের পক্ষে সভাপতি অরুণ বড়ুয়া, যীশু বড়ুয়া ও সুনীল চক্রবর্তী। এসময় বিপুলসংখ্যক শিশু ও নারীও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় একুশের আলোচনা অনুষ্ঠানের। আমজাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে বিভিন্ন সংগঠনের প্রবাসী নেতারা বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, মহান একুশের চেতনায় বাঙালি জাতীয়বাদ ও অসাম্পদ্রায়িক সমাজ গঠনে, বর্তমান সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে। আলোচনা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সুমন ও নিজাম উদ্দিন।
সন্ধ্যায় দূতাবাস মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০১৭’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানের।
রাষ্ট্রদূত এম শামীম আহসানের সভাপতিত্বে উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে ঢাকা থেকে পাঠানো রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনান দূতাবাসের কূটনৈতিক কর্মকর্তারা।
এরপর দূতাবাসের প্রজেক্টরের মনিটরে একুশের চেতনা ও ভাষা শহীদদের ওপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুবিভাগের নির্মিত ৫ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
একুশের কবিতা আবৃত্তি করেন দূতাবাসের কূটনৈতিক কর্মকর্তা তৌহিদ ইসলাম শাতিল ও এম ডি আলামুজ্জামান, সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব রহমান খলিলুর ও লুজান আওয়ামী লীগের সভাপতি আশারাফুল আলম লিটন। আলোচনায় অংশগ নেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ সভাপতি শ্যামল খানসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
অনুষ্ঠানের সভাপতি রাষ্ট্রদূত এম শামীম আহসান বলেন, মহান একুশে আজ আমাদের একইসঙ্গে আত্মদান ও সবচেয়ে অহংকারের বিষয়। এবারই প্রথম নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে এবং জেনেভা সদরদপ্তরে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হল। বিশ্বের সর্বপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় এ দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে এবং সে অনুষ্ঠানে আমি আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছি। এটি আমাদের বাঙালি জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গর্বের একটি বিষয়।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্ব সংস্থা আজ বাংলাদেশকে সম্মান জানাচ্ছে। তাই ৫২ এর ভাষা শহীদদের রক্ত বৃথা যায়নি।
শামীম আহসান তার বক্তব্যে ভাষা আন্দোলনে মহিয়সী নারীদের গৌরবান্বিত ভূমিকার গল্প নিয়ে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। এরপর উপস্থিত সকলকে আপ্যায়নের মাধ্যমে দূতাবাসের অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
এইচএ/