এখন স্বপ্ন দেখেন দেশেই শিল্পোদ্যোক্তা হবার। ঢাকার ধামরাইয়ের ভাড়ারিয়ার নুর উদ্দিন ব্যাপারী ছেলে শরিফুল ইসলাম।
ঘটনাটি ২০০০ সালের ২৩ মে। ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) লেনী ফ্যাশন নামের পোশাক কারখানায় কাটিং সহকারী (কাটিং সার্ভিসার) হিসেবে কাজে যোগ দেন তিনি। বেতন ছিলো মাত্র ৯শ’ ৮৬ টাকা।
কী করে ঘুরলো ভাগ্যের চাকা? কোনো আশ্চর্য চেরাগ কি পেয়েছিলেন? ‘আরে না! চেরাগ পাবো কোত্থেকে! আলাদিনের চেরাগের কথাই যদি বলেন তাহলে সেটার নাম পরিশ্রম’। এক গাল হেসে বলে যান নিজের সাফল্যের গল্পটা।
‘ডিউটি আওয়ার ছিলো ৮ ঘণ্টা। আমি প্রথম থেকেই কাজ করতাম ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। যদিও ওভারটাইম পেতাম। তবে কাজ শেখার জন্যে সেই বাড়তি সময়টাই ছিলো উপযোগী। আরেকটি বিষয় খুব মেনে চলতাম, বসেরা যা বলতেন তা শুনতাম। ’
‘ছয় মাস বাদে সুইং সেকশনে যোগ দিলাম। সেখান থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনেও গেলাম। সেখানে শ্রীলংকার এক বস ছিলেন। নাম উদারা। কাজ শেখার প্রতি আমার আগ্রহ দেখে উনি আমাকে হাতে কলমে শেখালেন কীভাবে ভালো ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কম সময়ে উৎপাদন বাড়ানো যায় এবং উৎপাদন খরচ কমানো যায়। ’
‘এভাবে একটা হিসেব রপ্ত করে ফেললাম। কী পরিমাণ কাপড়ে কত পোশাক তৈরি হবে। কী কী উপকরণ কতটুকু লাগবে। ক’জন হেলপার অপারেটর কতদিনে কাজটি নামাতে পারবে। চট করেই সেই হিসাবটাও শিখে গেলাম। ’
‘এভাবে কেটে গেলো ৫ বছর। প্রোডাকশনের জিএম সুরেন্দ্রনাথ চলে গেলেন কম্বোডিয়ায়। আমাকে অফার করলেন। বেতন মাত্র ৫শ’ ডলার। প্রোডাকশন ইনচার্জ হিসেবে সেখানে যোগ দিলাম। সেখান থেকে আরেক বসের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া থেকে পেলাম বাড়তি সুযোগ-সুবিধা আর বেতনে চাকরির সুযোগ। ’
‘সেটা ছিলো বানডুং প্রদেশে। অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি। প্রাথমিকভাবে ফোনেই স্বাক্ষাৎকার। শর্ত ছিলো, ওখানে গিয়ে দ্বিতীয় দফায় ইন্টারভিউ দিতে হবে। আমার কাজের নমুনা দেখবে। আমাকে পছন্দ না হলে এক মাসের বেতন দিয়ে পাঠিয়ে দেবে। রাজি হলাম সে শর্তে। মাত্র ১০ দিনের মাথায় তারা আমার নিয়োগ চূড়ান্ত করলো। এভাবে গেলো সাত বছর। ’
‘২০১৪ সালে জাকার্তায় একটি পোশাক কারখানায় যোগ দিলাম। সেখান থেকে ফের ফিরে আসতে হলো এই বানডুংয়ে। পিটিজেএসপি গার্মেন্টস নামের দু’টি তৈরি পোশাক কারখানার আমি চিফ অপারেশন অফিসার (সিওও)। ’
‘এখানে বাড়ি-গাড়ি সবই দেওয়া হয়েছে কোম্পানির তরফ থেকে। দু’টি কারখানার ভালো-মন্দ সব কিছুই দেখতে হয় আমাকে। বেশ আছি। ’
পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে? শরিফুল স্মরণ করেন, ‘কেন মনে পড়বে না, ফিনিশিং সেকশন থেকে ওয়াশিং। সব বিভাগেই দৌঁড়ে বেড়িয়েছি। কাজকে কখনো লজ্জা পাইনি। ছোট করে দেখিনি। মনে আছে, চার তলা ভবনটি দিনে কম করে হলেও ১০০ বার ওঠা-নামা করতাম। গেঞ্জি ভেজা থাকতো সবসময়। ’
শরিফুলের সেই ঘামে ভেজা গেঞ্জি থেকেই এখন ছড়ায় সাফল্যের সৌরভ। বলতেই হাসেন ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের এই প্রতিনিধি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৭
এইচএ/
আরও পড়ুন
** ইন্দোনেশিয়ায় নেমেই কোটিপতি!
** বাংলার পুকুরেই সাগরের ভেটকি
** প্রবাসে ভবিষ্যত বাংলাদেশ
** ইন্দোনেশিয়ায় অনন্য বাংলাদেশকেই মেলে ধরছেন হুমায়রা
** সন্ধ্যা হতেই বাতি নেভে শাহজালালের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের
**ঢাকা-জাকার্তা অনন্য উচ্চতায়
** ইন্দোনেশিয়া হতে পারে সেরা গন্তব্য
** এবার ইন্দোনেশিয়ার পথে বাংলানিউজের জাহিদ