ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

ধানের দাম নিয়ে হতাশা কাটল হবিগঞ্জের কৃষকের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
ধানের দাম নিয়ে হতাশা কাটল হবিগঞ্জের কৃষকের ক্ষেতে ধান কাটছেন কৃষক।

হবিগঞ্জ: বর্গাসহ সাকুল্যে ৬০ হাজার টাকায় আবাদ করা সাড়ে ৬ বিঘা রোপা আমন জমি থেকে ৮০ মণ ধান উৎপাদন করেছেন কুদরত আলী। এর মধ্যে ২০ মণ ধান খোরাকির জন্য রেখে বাকি ৬০ মণ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলা সদরের বাসিন্দা ওই কৃষকের রোপা আমন মৌসুমে বিনিয়োগ থেকে প্রায় আড়াই গুণ টাকা মূল্যের ধান উৎপাদন হয়েছে।

ধান বিক্রি করে এবার ভালো মূল্য পাওয়ায় হাজারো কৃষকের হতাশা কেটেছে।

কুদরত আলী জানান, ভালো ফলনের পাশাপাশি রোপা আমনের ভেজা ধান (কাটার পর না শুকিয়েই) ১ হাজার ৩০০ টাকা মণ দামে বিক্রয় হচ্ছে। এর কাছাকাছি মূল্যে সরকারি গুদামেও ধান নেওয়া হয়। ফলে এবার রোপা আমন আবাদ করে তিনি স্বস্তি পেয়েছেন।

৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১২ বিঘা জমি চাষ করে ১২৩ মণ ধান উৎপাদন করেন একই উপজেলার জলসুখা গ্রামের আশিক মিয়া। উৎপাদিত ধান ১ লাখ ৬০ হাজারে বিক্রয় করেছেন।

হিলালপুর গ্রামের ওয়ারিশ মিয়া, জাহিদুল আলম ও শামসুল আলমসহ আরও অনেক কৃষক রোপা আমন চাষে বাম্পার ফলন পান। ছোট কৃষকরা ২০ থেকে ৬০ বিঘা পর্যন্ত জমি আবাদ করেন; সবাই সেই অনুপাতেই ধানও গোলায় তুলেছেন।

কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, গত বছর রোপা আমন ধান কাটার শুরুর দিকে প্রতিমণ ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা দরে ‍বিক্রি হয়েছে। উৎপাদন মৌসুম শেষের দিকে দর হাজারে উঠলেও ততক্ষণে কৃষকের সংগ্রহে ধান নেই। বার্গাচাষিদের ধান বিক্রয় তখন শেষ। কিন্তু এ বছর কৃষকের হাতে ধান অন্যান্য বছরের প্রায় দ্বিগুণ বলে তারা জানান।

বানিয়াচং উপজেলার কৃষক জোনাব আলী জানান, তিনি এ বছর ১৫০ বিঘায় ধান আবাদ করেন। ধান তোলা শেষ এখনও সবকিছুর হিসাব হয়নি। তবে উৎপাদন ও দামে তিনি সন্তুষ্ট।

কৃষকের মতামত হচ্ছে, জেলার কৃষকরা লাগাতার কয়েক বছর রোপা আমন ধানের দাম নিয়ে হতাশায় ছিলেন। এবার ভালো মূল্য পাওয়ায় হাজারো কৃষকের হতাশা কেটেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি রোপা আমনে হবিগঞ্জে ৮৮ হাজার ৩২০ হেক্টর জমি থেকে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৩৬ হাজার ১০৮ টন চাল বা ৩ লাখ ৫৪ হাজার ১৬২ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। সরকারি দাম ৩৩ টাকা কেজিতে এ ধানের বাজার মূল্য ১ হাজার ১৬৮ কোটি ৭৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মাকসুদুল আলম বাংলানিউজকে জানান, এবার রোপায় আবাদ করা জাতের মধ্যে ব্রি ধান ১০০, ১০৩, ৮৭, ৯০, ৭৫, ৪৯, ৩৯, ২২, ২৩ এবং বিনা ধান ৭, ১৭ ইত্যাদি রয়েছে।

এর মধ্যে ব্রি ১০০ জাতের ধান প্রতি বিঘায় ২০ মণ এবং ৮৭ জাত বিঘাপ্রতি অন্তত ১৮ মণ ফলন দিচ্ছে। আশানুরূপ ফলন পাওয়ায় আগামী মৌসুমে এ দুই জাতের আবাদ বাড়ানো হবে।

রোপা আমনের ফলন ও দামে বোরো আবাদে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকের। হবিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোপা আমন ধান কাটার আগে থেকেই শুরু হয়েছে বোরো আবাদের কাজ। কৃষকরা একদিনে ধান কাটছেন, অন্যদিকে একই জমিতে বোরোর জন্য চাষাবাদ শুরু হয়েছে।

হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আগামী বোরোয় ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৩৬ হেক্টর জমিতে ৩ প্রকার ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে। তার মধ্যে ৫০ হাজার ৮৮৫ হেক্টর হাইব্রিড, উফসী জাতের ৭২ হাজার ৮০১ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধান আবাদ হবে ৫০ হেক্টর জমিতে।

হাইব্রিড জাতে হেক্টরপ্রতি ৪.৬৮ টন, উফসীতে ৬.৯৩ টন ও স্থানীয় জাত থেকে প্রতি হেক্টর থেকে ১.৯ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা।

সে অনুযায়ী বোরো থেকে জেলার ৯ উপজেলায় ৫ লাখ ২৪ হাজার ৩৪৫ টন চাল উৎপাদন হওয়ার কথা। ধানের হিসেবে গেলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫১৮ টনে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।