ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

বছরে ৫০০ কোটি টাকার ফসল নষ্ট করে ইঁদুর!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৭
বছরে ৫০০ কোটি টাকার ফসল নষ্ট করে ইঁদুর! বছরে ৫০০ কোটি টাকার ফসল নষ্ট করে ইঁদুর!

নীলফামারী: আকারে ছোট হলেও বছরে প্রায় ৩ লাখ টন সব ধরনের খাদ্যশস্য নষ্ট করে ইঁদুরেরা। যার বাজার মূল্য ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। উৎপাদিত গমের ৩ থেকে ১২ শতাংশ, ধানের ৫ থেকে ৭ শতাংশ নষ্ট করে। এরা বছরে শুধুমাত্র ধান ও গমের প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন পর্যন্ত ক্ষতি করে থাকে।

মুরগির খামারে গর্ত করাসহ ডিম ও ছোট মুরগি খেয়ে প্রতি বছর দেশের প্রতিটি খামারের প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার টাকা ক্ষতি করে থাকে ইঁদুরেরা।
 
তবে ইঁদুর যতোটা না খায়, তার চেয়ে ৪/৫ গুণ বেশি নষ্ট করে।

বই-খাতা, কাপড়, আসবাবপত্র, বিছানাপত্র কেটে ফেলা ছাড়াও প্রায় ৩০ ধরনের রোগও ছড়ায়।

কৃষি বিভাগ গত ১৭ অক্টোবর থেকে জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান শুরু করেছে, যা চলবে পুরো শীত মৌসুম জুড়ে।

উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা আমন ক্ষেতের ইঁদুর তাড়াতে পলিথিনের ঝাণ্ডা উড়িয়েছেন।  ছবি: বাংলানিউজকৃষি বিভাগ জানায়, মাঠের ফসল উৎপাদন ও গুদামজাত শস্য সংরক্ষণে ইঁদুর প্রধান সমস্যা। মাঠের দানা জাতীয় খাদ্যশস্য, ধান, গম, ভুট্টা, বাদাম, নারকেল, পেয়ারা, সফেদা, লিচু, আম, লাউ,, শাক-সবজি এবং মাটির নিচে হওয়া আলু, মুলা, গাঁজর ও ওলকপি জাতীয় সবজি নষ্ট করে। ধান ও গমের শীষ আসার সময় ৪৫ ডিগ্রি কোণ করে কেটে গর্তের ভেতর নিয়ে বাসা তৈরি করে এবং খায়। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও সেচনালায়ও গর্ত করায় সেগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক সময় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি কেটে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটায়।

খাদ্যদ্রব্যে মলমূত্র, পশম এবং রোগ জীবানু সংক্রমিত করেও ইঁদুর ক্ষতি করে। গর্ত করে ঘরের কাঠামো নষ্ট করাসহ খাদ্যদ্রব্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নষ্ট করে মানুষ এবং গৃহপালিত পশু-পাখির জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন রোগের জীবানু বহন ও বিস্তার করে।

এসব কারণে ইঁদুর দমন অত্যন্ত জরুরি। ইঁদুর নিধন কার্যক্রমকে জোরদারের মাধ্যমে ফসলের বড় অংশ রক্ষা করা সম্ভব।

তথ্য মতে, ইঁদুরের বংশ বৃদ্ধির হার অত্যন্ত বেশি। সুষ্ঠু পরিবেশে একজোড়া ইঁদুর থেকে বছরে প্রায় তিন হাজার ইঁদুর জন্মলাভ করতে পারে। জন্মদানের দু’দিনের মধ্যেই এরা ফের গর্ভধারণে সক্ষম হয়। জন্মদানের তিন মাসের মধ্যে বাচ্চা দিতে সক্ষম হয়। ইঁদুরের জীবনকাল ২ থেকে ৩ বছর।

বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে ইঁদুরের উপদ্রব কমিয়ে আনা যায়। যেহেতু ইঁদুর নোংরা স্থান পছন্দ করে, তাই বাড়ি-ঘর, ক্ষেত-খামার, পুকুরপাড়, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, নদীর পাড় ইত্যাদি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন। উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা আমন ক্ষেতের ইঁদুর তাড়াতে পলিথিনের ঝাণ্ডা উড়িয়েছেন।

কৃষি বিভাগ বলেছে, খাদ্যগুদাম ও খড়ের গাদা মাটির সঙ্গে তৈরি না করে উঁচু মাচা তৈরি করে তার ওপরে করতে হবে। ইঁদুর যেন গর্ত করতে না পারে, সেজন্য ক্ষেতের আইল ছেঁটে চিকন করতে হবে। নারকেল ও সুপারি গাছে মাটির ৫ থেকে ৬ ফুট উঁচুতে ও আড়াই ফুট চওড়া মসৃণ টিনের পাত লাগিয়েও ইঁদুর প্রতিরোধ করা যায়।

মানুষের মাথার চুল নেটের মাধ্যমে নারকেল গাছে ব্যান্ডেজ করে রাখলে ইঁদুর ও কাঠবিড়ালি কম ক্ষতি করে। পেঁচা, গুইসাপ, বেজি, শিয়াল ও বিড়াল জাতীয় প্রাণীর প্রধান খাদ্য হচ্ছে ইঁদুর। এ প্রাণীগুলোকে সংরক্ষণ করলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ ইঁদুর সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে।

কৃষি বিভাগ মনে করছে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সব প্রাণীরই বেঁচে থাকার দরকার রয়েছে। তবু ইঁদুরের ক্ষতিকর দিকগুলো বেশি হওয়ায় নিধন না করেও উপায় নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।