ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

হাতিয়ায় চলতি মৌসুমে ৩০০ কোটি টাকার চেউয়া শুঁটকি উৎপাদন

ফয়জুল ইসলাম জাহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২২
হাতিয়ায় চলতি মৌসুমে ৩০০ কোটি টাকার চেউয়া শুঁটকি উৎপাদন

নোয়াখালী: নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় চলতি মৌসুমে ১৫টি ঘাটে চেউয়া শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

এ দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার লোকের হাত ধরে তৈরি এ চেউয়া শুঁটকি- মাছ ও মুরগির খাদ্য (ফিড) উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত মৎস্যজীবীরা বলছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে বর্তমানের চেয়ে আরও কয়েক গুণ বাড়বে শুঁটকির উৎপাদন।

দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চারপাশে রয়েছে মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগর। দ্বীপের জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ, তবে অন্য মাছের তুলনায় এবার প্রচুর পরিমাণে চেউয়া মাছ ধরা পড়েছে। চলতি মৌসুমে চেউয়া মাছের সাইজ ও আকার বড় হওয়ায় এর চাহিদাও বেড়েছে। দেশে চেউয়া মাছের অর্ধেক চাহিদা মেটান এ জনপদের মৎস্যজীবীরা। শুধু চেউয়া মাছ আর শুঁটকি নয়, মৌসুমে ইলিশের জন্যও বিখ্যাত হাতিয়ার বিভিন্ন ঘাট।

স্থানীয় জেলেরা জানান, চেউয়া মাছ মূলত ইলিশ মৌসুম শেষ হওয়ার পরে অগ্রহায়ণ মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। উপজেলার জঙ্গলিয়া ঘাট, জাহাজমারা ঘাট, কাদিরিয়া ঘাট, বুড়িরদোনা ঘাট, সূর্যমুখী ঘাট, দানারদোন ঘাট, কাজীরঘাট, আমতলী ঘাট, কাটাখালি ঘাট, রহমত বাজার ঘাট, নামার বাজার, চেউয়াখালি ঘাট, বাজার খাল, ডুবাই খাল ও মুক্তারিয়া ঘাট থেকে প্রতিদিন মাছ ধরতে গভীর সমুদ্রে যায় ইঞ্জিন চালিত প্রায় ৩৫০ নৌকা। প্রতিটি নৌকায় দু’জন মাঝি, ২৫ জন জেলে থাকেন।

শুঁটকি উৎপাদনকারী শ্রমিকরা জানান, গত বছরের তুলনায় মাছের পাশাপাশি জেলে, শ্রমিক বেড়েছে চেউয়া শুঁটকি উৎপাদনের কাজে। উপজেলার বিভিন্ন ঘাট সংলগ্ন চরে প্রায় পাঁচ হাজার একর জমির ওপর চলে এ চেউয়া শুকানো ও শুঁটকি উৎপাদনের কাজ। নদী থেকে মাছ তোলার পর রোদে শুকিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করতে সময় লাগে তিন থেকে চারদিন।

এতকিছুর পরও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের। তাদের দাবি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে বর্তমানের চেয়ে আরও কয়েক গুণ বাড়বে তাদের শুঁটকির উৎপাদন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অনিল চন্দ্র দাস জানান, ঘাটগুলোতে শুঁটকির ৮৫ জন পাইকারের পাশাপাশি খুচরা বিক্রেতা আছেন অন্তত ৩০০। এছাড়াও ময়মনসিংহ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বড় বড় অন্তত অর্ধশতাধিক পাইকার আসেন শুঁটকি কিনতে। কাঁচা চেউয়া মাছের মূল্য কম হওয়ায় জেলেরা শুঁটকি তৈরি করে বিক্রি করেন। এ অঞ্চলে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করণের ব্যবস্থা করা হলে উৎপাদনকারীরা আরও লাভবান হবেন।

সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে হাতিয়ার মৎস্যজীবীদের হাত ধরে দেশের শুঁটকির চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ হচ্ছে। এ অঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি ঘাটগুলোতে রাডার লাইট স্থাপন করলে আরও অনেক বেশি শুঁটকি এ অঞ্চল থেকে উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।