ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ধারাবাহিক উপন্যাস

মানুষখেকোর দ্বীপ | পর্ব-১

আলম শাইন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২৩
মানুষখেকোর দ্বীপ | পর্ব-১

বঙ্গোপসাগরের বুকচিরে বেরিয়ে এলো গোলগাল তামাটে রক্তিম সূর্য। সিল্কের কাপড়ের মতো পাতলা কুয়াশার ধূসর চাদর ভেদ করে সূর্যকিরণ ছড়িয়ে পড়ল নীল সমুদ্রে।

মুহূর্তেই জলের রং পাল্টে হলো তামাটে লোহিত। সমুদ্রের রূপ এখন ভিন্ন। অনলৌকিক রূপের ঝিলিক হৃদয়ে গেঁথে রাখতে বোটে চড়লেন পর্যটকরা। পর্যটকদের নিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলছে বোট। পর্যটকের সংখ্যাও কম নয়; চল্লিশ বিয়াল্লিশ জন। গন্তব্য ছেঁড়া দ্বীপ। সেন্টমার্টিন জেটি ঘাট ছেড়ে বোট খানিকটা এগুতেই নবাগতরা উঁকিঝুঁকি মেরে দেখছেন দ্বীপটাকে। স্পষ্ট দেখা না গেলেও নীলাভ—বাদামি আভা ভেসে আসছে দূর থেকে। বোট আরও খানিকটা এগোতেই স্পষ্ট হলো দ্বীপটা। কয়েক মিনিটের মধ্যেই বড়োসড়ো বোটটা দ্বীপের অদূরে নোঙর করল। পরবর্তীতে সেই বোট থেকে নেমে ছোট বোটে চড়ে দ্বীপে পৌঁছলেন পর্যটকরা। দ্বীপে পা রেখেই মুগ্ধ হলেন সবাই। সমুদ্রের মাঝে এত আনন্দদায়ক নয়নাভিরাম নৈসর্গিক ভূখণ্ড তারা আগে কখনো দেখেননি। সেন্টমার্টিনের মতো সারি সারি কেয়া ঝোপ আর নুড়ি পাথরের ছড়াছড়ি থাকলেও ছেঁড়া দ্বীপের আবেদন পর্যটকদের কাছে বরাবরই বেশি। এখানকার বিশেষ আকর্ষণ নানান আকৃতির শ্বেত প্রবালের জীবাশ্ম। প্রবালগুলো সৃষ্টিলগ্নে শ্বেত বর্ণের থাকলেও বালি জলের মাখামাখিতে রং পরিবর্তন হয়েছে। বেশির ভাগই বাদামি রঙের এখন। প্রবালের গায়ে চালুনির মতো অসংখ্য ছিদ্র থাকায় অনেকটাই মৌচাকের মতো দেখা যাচ্ছে। আবার কোনো কোনোটাকে দেখা যাচ্ছে কুমিরের ফসিলের মতো। অর্থাৎ বিভিন্ন আকৃতির প্রবাল দেখা যায় এখানে। প্রবালগুলো এতটাই ধারালো যে, পারতপক্ষে কেউ খালি পায়ে দ্বীপে হাঁটাহাঁটি করেন না; পা কেটে যাওয়ার ভয়ে।

ছেঁড়া দ্বীপে আজ তেমন ঠাণ্ডা নেই। অনেকটাই আরামদায়ক তুলতুলে পরিবেশ। তিয়াস—অর্পিতা সূর্যের কোমল উত্তাপে ঘুরে বেড়াচ্ছে মনের আনন্দে। দ্বীপে এ প্রথম এসেছে এই বাগদত্তা জুটি। অন্যদের চেয়ে ওরা একটু বেশিই উপভোগ করছে তাই। সম্পর্ক আর পারিবারিক আয়োজনে বাগদত্তা হওয়ায় ওদের ঘনিষ্ঠতাও বেশি। ফলে তিয়াসের সঙ্গে অর্পিতার চলাফেরায় প্রতিবন্ধকতা নেই বললেই চলে। যার কারণেই অর্পিতার বাবা—মায়ের সঙ্গে সেন্টমার্টিন বেড়াতে আসার সুযোগ পেয়েছে তিয়াস। তারা সবাই গতকাল সেন্টমার্টিন এসেছিলেন। সেখান থেকেই দু’জনের ছেঁড়া দ্বীপ অবধি আসা। ওদের সঙ্গে অর্পিতার বাবা—মা আসেননি। তারা সেন্টমার্টিন রয়ে গেছেন। মেয়েকে একটু সুযোগ দিয়েছেন ঘুরে বেড়াতে। তাছাড়া তিয়াস—অর্পিতা কিছু সময় কাটিয়ে সবার সঙ্গে চলে যাবে, তাই অত টেনশন নেই। ওদের না ফেরা পর্যন্ত অর্পিতার বাবা—মা সেন্টমার্টিন থাকবেন। চারজন একত্রিত হয়ে বিকেল নাগাদ দ্বীপ ত্যাগ করবেন। এবারের গন্তব্য কক্সবাজার। সেখানে রাত কাটিয়ে সকালের ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করবেন সবাই। তারপর আগারগাঁও নিজেদের বাসায়। এমনটাই ট্যুর প্ল্যান। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে তিয়াস—অর্পিতার বিয়ের অনুষ্ঠান। আজ ২৬ ডিসেম্বর। হিসাব মতে পরিবারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। তাই ট্যুর সংক্ষিপ্ত করে ফেলেছেন অর্পিতার বাবা।

ছেঁড়া দ্বীপ নেমে ঘণ্টাখানেক পায়চারি করল তিয়াস—অর্পিতা। এদিক—সেদিক ঘুরে কেয়া ঝোপের সামনে এসে দাঁড়াল জলখাবার খেতে। কেয়া ঝোপের সামনে কয়েকটা ভাসমান দোকানপাটও আছে। জোয়ার এলে দোকানপাট গুটিয়ে নেয় দোকানিরা। মূলত দোকানিরা এলাকায় উৎপাদিত মৌসুমি ফলমূল বিক্রি করে। বিশেষ করে সেন্টমার্টিনের প্রসিদ্ধ ডাব—তরমুজ ইত্যাদি। মৌসুম শেষে বিস্কুট—চানাচুর এসব বিক্রি করে। তেমনি একটি ভাসমান দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ওরা সামান্য জলখাবার খেল। তারপর দু’জন ভিন্ন আঙ্গিকে দ্বীপের রূপ সৌদর্যের বর্ণনা দিতে লাগল।



ছেঁড়া দ্বীপ আয়তনে তেমন বড় নয়; ৫০০ বর্গমিটার বড়জোর। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই ওদের দ্বীপ ভ্রমণ শেষ হয়ে গেল। তবে ছোট হলেও দ্বীপটা দেখার মতোই। নজরকাড়া রূপ। ছেঁড়া দ্বীপে পর্যটকদের বারবার ছুটে আসার বিষয়টাও পরিষ্কার হয়ে গেছে তিয়াসের কাছে। অর্পিতা তো বলেই ফেলল, ‘তিয়াস, দ্বীপটাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। আবার আসব বলে রাখলাম। তাঁবু টানিয়ে রাত কাটাব তখন। ’
   তিয়াস বলল, ‘সম্ভব নয়, রাত কাটানোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সংরক্ষিত এলাকা। ভ্রমণকারীদের রাত কাটানোর মানেই হচ্ছে এলাকাটাকে নোংরা করে ফেলা। ’
   মন খারাপ করে অর্পিতা বলল, ‘নিষেজ্ঞা থাকলে তো কথাই নেই। তবে দু’জন আবার আসব; মনে যেন থাকে। ’
   ‘একদম মনে থাকবে। টেনশন করো না। ’

দেশের দ্বীপগুলোর মধ্যে ছেঁড়া দ্বীপ দুর্গম ও অনন্য। এখানকার কেয়া ঝোপ, স্বচ্ছ জল, হরেক রকম নুড়ি পাথর, ছোট মাছ, আর সমুদ্রের সবুজ তরঙ্গমালা পর্যটকদের খুব আকর্ষণ করে। দ্বীপের পরিধি স্বল্প আয়তনের হওয়ায় হেঁটে ক্লান্ত হয় না কেউ। কোনোরকম বিরক্তি ছাড়াই দ্বীপ ঘুরেফিরে দেখতে পারেন। এক নজরে সব দেখেশুনে সৈকতে কিছু সময় কাটিয়ে সেন্টমার্টিন ফিরে যান। ইতোমধ্যে তিয়াস—অর্পিতা দ্বীপ প্রদক্ষিণ করে ফেলেছে। দ্বীপের আনাচে—কানাচে হেঁটে সমুদ্রের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে দু’জন। কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই বোট চালক কাছে এসে বলল, ‘আমাদের বোটে যারা এসেছেন, তারা লাইফ জ্যাকেট পরে নেন। চলে যাওয়ার সময় হয়েছে। সিরিয়ালের প্রথম বোট চলে গেছে। ’ কথা শেষ করে চালক সবার হাতে হাতে লাইফ জ্যাকেট তুলে দিলো। তিয়াসের হাতে দিলো দুটি। তিয়াস নিজের জ্যাকেটটা পরে আরেকটা অর্পিতাকে পরিয়ে দিলো। এবার দ্বীপ ত্যাগের পালা। এখুনি ছোট বোটে চড়তে হবে।

দ্বীপ ত্যাগের মুহূর্তে অর্পিতা সমুদ্রটাকে শেষবারের মতো আলিঙ্গন করতে জলে নামলো। দ্বীপের মায়াবি সৌন্দর্যে খুব আকৃষ্ট হলো অর্পিতা; ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না ওর। ভাবছে কত কিছু। মানুষের জীবনধারাও ঢেউয়ের মতো। উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে একসময় মানুষও বিলীন হয়ে যায় তটে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের মতো। নানান কথা ভাবতে ভাবতে অর্পিতা সমুদ্রের সঙ্গে একাকার হয়ে গেল। হঠাৎ ওর দৃষ্টি গেল সৈকতের কাছাকাছি থমকে থাকা ঢেউয়ের সারির ওপর। অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে অর্পিতা বলল, ‘দেখ তিয়াস, ঢেউয়ের সারিটা থমকে আছে, সামনে এগুচ্ছে না আর। ’
   সমুদ্রের দিকে না তাকিয়েই তিয়াস বলল, ‘চোখের ভুল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকো, দেখবে চোখের পলকেই ঢেউ আছড়ে পড়বে তোমার পায়ের কাছে। ’ 
   ‘না না তিয়াস, তুমি ভুল বলছ। তাকিয়ে দেখ ঢেউয়ের সারি সামনে অগ্রসর হচ্ছে না; যেন থমকে আছে। ’
   অর্পিতার কথার গুরুত্ব দিতে হয় এবার। তিয়াস ঘাড় ফিরিয়ে সমুদ্র পানে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে বলল, ‘বিষয়টা ঠিক বুঝতে পারলাম না। ঢেউয়ের সারি তো এভাবে স্থির থাকার কথা নয়। ’

অর্পিতা কিছু বলতে চাইল, তার আগেই লোকজন বলাবলি করতে লাগল, ‘ওসব কিছু না, ভাটার টানে এমন হয়ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পানি কমে যাবে। ’ ততক্ষণে সৈকতের পানি সত্যি সত্যিই কমতে শুরু করল। দেখতে দেখতে নিমেষেই পানি সৈকত ছাড়িয়ে প্রায় আধ কিলোমিটারের মতো দূরে সরে গেল। অদূরে বেঁধে রাখা বড় বোটগুলো ভাটার টানে পাথরের ওপর কাত হয়ে পড়ল। ঘটনাটা মিনিট খানেকের মধ্যেই ঘটে গেল। চট করে পানি নেমে যাওয়ায় পর্যটকরা খুশিতে আত্মহারা, এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য কেউ আর কখনো দেখেনি বঙ্গোপসাগরের বুকে। ভারি চমৎকার দৃশ্য! ছোট—বড় মাছ, বিভিন্ন রঙের প্রবাল, শঙ্খ—কড়ি, শামুক—ঝিনুকসহ নানান জিনিসের ছড়াছড়ি থিকথিকে বালির ওপর। লোকজন ব্যতিব্যস্ত এটা সেটা কুড়াতে। আবার কেউ কেউ সমুদ্রের তলদেশে নামতে লাগল। দাঁড়িয়ে নেই তিয়াস—অর্পিতা। হাত ধরাধরি করে নামছে দু’জন। সামান্য নিচে নামতেই তিয়াস আপত্তি জানিয়ে বলল, ‘আর নেমো না। হঠাৎ ঢেউ তেড়ে এলে বিপদে পড়ে যাব। ’
   ‘যত বাজে চিন্তা তোমার, এতটা ভয় পেলে কী আর চাঁদে যেতে পারবে। ’
   ‘চাঁদে যাবো মানে!’
   ‘ওইযে কয়দিন পর পর বলো না, চাঁদে যাবে হানিমুনে। ’
   তিয়াস মাথা নিচু করে হেসে ফেলল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অর্পিতা চেঁচিয়ে বলল, ‘তিয়াস দৌড়াও। পেছনে। ’
   ‘কেন কী হয়েছে?’
   ‘সামনে দেখো, ভয়ানক বিপদ...। ’ মুখ থেকে বাকি কথা বেরুচ্ছে না অর্পিতার।



ওর অসমাপ্ত কথায় ভড়কে গেলো তিয়াস। সামনে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে গেলো। একি দেখছে সে। বিশাল বিশাল ঢেউ তেড়ে আসছে সৈকতের দিকে। তেড়ে আসা ঢেউয়ের উচ্চতাও কম নয়, প্রায় ১০—১৫ ফুট। লোকজন ছোটাছুটি করছে। সমুদ্রের তলদেশ থেকে দৌড়ে সৈকতে উঠে আসার প্রাণপণ চেষ্টা করছে, কিন্তু ঢেউয়ের গতির সঙ্গে দৌড়ের গতি মিলছে না। চিতকাত হয়ে কেউ কেউ পাথরের সঙ্গে পা ঠোকাঠুকি করে পড়ে যাচ্ছেন, কেউবা স্থির দাঁড়িয়ে আছেন। এ মুহূর্তে করার কী আছে, সেটা কারো মাথায়ই ঢুকছে না। ফলে একে একে পিঁপড়ার মতো ঢেউয়ের নিচে চাপা পড়তে লাগলেন।

তিয়াস—অর্পিতা সৈকত ছেড়ে খুব বেশি নিচে নামেনি। ইচ্ছে করলে দৌড়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দ্বীপে পৌঁছতে পারবে। ঢেউয়ের গতি এবং উচ্চতা দেখে বুঝতে পেরেছে দ্বীপে গিয়েও রক্ষা পাবে না। বিশাল ঢেউ গর্জন করতে করতে কাছাকাছি চলে এসেছে প্রায়। আর ত্রিশ সেকেন্ড সময় পাবে বড়জোর, তারপর সামনে এগিয়ে যাওয়া পর্যটকদের মতোই চাপা পড়ে চিরতরে হারিয়ে যাবে সমুদ্রের তলদেশে।

তিয়াস অর্পিতার হাত চেপে ধরে পেছনে ফিরল। শেষ চেষ্টা করতে হবে ওকে। দ্বীপ অভিমুখে দৌড়াতে হবে। সমস্যা হচ্ছে, এ দ্বীপে কোন বিল্ডিং বা উঁচু টাওয়ার নেই। দৌড়ে যাবেই বা কোথায়। বিষয়টা জেনেও প্রবালের ফাঁকফোকরে পা ফেলে দৌড়াতে লাগল দু’জন। আর কয়েক কদম অগ্রসর হলেই সৈকতে পৌঁছতে পারবে। প্রাণপণে দৌড়াতে দৌড়াতে বিশ সেকেন্ডের মাথায় দু’জন পাথর খণ্ডের ওপর আছড়ে পড়ল। হাত—পা কেটে গেছে দু’জনের। কাটাছেঁড়া নিয়ে ভাবার সময় নেই অত। বিশাল ঢেউ ধেয়ে আসছে তীরবেগে। ঢেউয়ের কবল থেকে রক্ষা পেতে হবে, বাঁচতে হলে আরও সামনে অগ্রসর হতে হবে। সমস্যা হচ্ছে, উঠে দাঁড়াতে পারছে না ওরা। ঠিক দুঃস্বপ্ন দেখার মুহূর্তে যেমন ঘটে, তেমনটি হচ্ছে এখন। তিয়াস অর্পিতার মুখের দিকে তাকিয়ে কী যেন বলতে চাইল, সেই সুযোগ আর পায়নি সে। বিশাল ঢেউ তেড়ে এসে আঘাত হানল সৈকতে। ঢেউয়ের তোড়ে নিজেদের সামলে রাখতে পারল না। পাথরের ওপর আছড়ে পড়ল। উপর্যুপরি ঢেউয়ের আঘাতে তিয়াস—অর্পিতা দিশেহারা। চেষ্টা করছে পাথরটাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে। কিন্তু সেটা আর কতক্ষণ। হাত—পা কেটে গেছে। তবে শরীরের অন্যান্য স্থান এখনো কাটেনি দু’জনের পরনে জিন্সপ্যান্ট আর গায়ে মোটা জামা থাকায়। এ মুহূর্তে হাত ফসকে গেলে পরিণতি হবে ভয়াবহ, সেটা জেনেই পাথরখণ্ড আঁকড়ে ধরে রেখেছে দু’জন।

ইতোমধ্যে সমুদ্র আরও হিংস্র হয়ে ওঠছে। উপুর্যপরি ঢেউয়ের আঘাতে তিয়াস—অর্পিতা দুর্বল হয়ে পড়েছে। পাথরখণ্ড আঁকড়ে ধরে রাখতে পারছে না আর; কষ্ট হচ্ছে। তথাপিও প্রাণপণে লড়ে যাচ্ছে টিকে থাকতে। এ লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার মানেটা ওরা ভালো করেই জানে। সুতরাং যতক্ষণ টিকে থাকা যায়, সে চেষ্টাই অব্যাহত রাখছে দু’জন। দেখতে দেখতে আরও উঁচু উঁচু ঢেউ তেড়ে এলো। আর সম্ভব নয় ধারালো পাথর আঁকড়ে ধরে রাখা। বড় একটা ঢেউয়ের ধাক্কায় পাথর শুদ্ধ উপড়ে গেল। তারপর পাথরের গায়ে আঁচড় খেয়ে খড়কুটোর মতো দু’জন ভেসে যেতে লাগল। ভাগ্যিস ওরা ঢেউয়ের নিচে চাপা পড়েনি। সেরকম হলে সঙ্গে সঙ্গে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেত হয়তো, দীর্ঘ সময় নিঃশ্বাস চেপে রাখতে পারত না। যারা সমুদ্রের তলদেশে নেমেছে, ঠিক তাদের মতোই পরিণতি হতো। চলবে...


আলম শাইন: কথাসাহিত্যিক, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক কলামিস্ট

বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২৩
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।