ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

অতিপ্রাকৃত | চিনুয়া আচেবে | অনুবাদ: ফজল হাসান

অনুবাদ গল্প / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫
অতিপ্রাকৃত | চিনুয়া আচেবে | অনুবাদ: ফজল হাসান

জুলিয়াস ওবি টাইপ রাইটারের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার টেবিলের ওপর মাথা রেখে হেলদোল শরীরের বস নাক ডেকে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।

সবুজ রঙের উর্দি পরে দারোয়ানও তার আস্তানায় বসে গভীর নিদ্রায় নিমজ্জিত। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে একজন খদ্দের গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢোকেনি। বিশাল দাঁড়িপাল্লার একপাশে একটা খালি ঝুড়ি পড়ে আছে। মেশিনের চতুর্দিকে ধুলোবালির সঙ্গে গাঢ় রঙের কয়েকটি পামের বীচি ছড়িয়ে আছে। চারপাশে শুধু মাছি পুরো উদ্দোমে ভনভন করে ওড়াউড়ি করছে।

জুলিয়াস জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। সেখানে দাঁড়ালে নাইজার নদীর পাড়ের বড় বাজার স্পষ্ট দেখা যায়। আগে এই বাজার ইবোদের অন্যান্য বাজারের মতই সপ্তাহের চারদিন বসত। তবে শ্বেত মানুষের আগমন এবং উমুরুতে বিশাল পাম তেলের নদী-বন্দর করার পর থেকে প্রতিদিনই বসে। যাহোক, তা সত্ত্বেও এখনও আদি নোকো দিবসে বাজারের ব্যস্ততার মতই মানুষের আনাগোনা অব্যহত রয়েছে। এলাকার মানুষের কাছে এই নোকো দিবস অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত। কেননা মানুষেরা বিশ্বাস করে যে, এই দিনে ঈশ্বর তার দৈবানুগ্রহ বর্ষণ করে। এলাকার মানুষের মুখে কথিত আছে যে, এই দিনে ঈশ্বর একজন বৃদ্ধ মহিলার বেশে কাকভোরে বাজারের মাঝখানে আগমন করে এবং দূরের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য সে তার অলৌকিক পাখা দিয়ে চারদিকে—সামনে, পেছনে, ডানে এবং বামে—বাতাস করে। তখন চতুর্দিক থেকে দলে দলে পুরুষ এবং মহিলারা তাদের উৎপাদিত শস্য এবং অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী, যেমন পামের বীচি, তেল, কোলা বাদাম, কাসাভা, মাদুর, ঝুড়ি, মাটির পাত্র ইত্যাদি নিয়ে বাজারে এসে হাজির হয়। দিনের শেষে বাড়ি ফেরার সময় তারা বিভিন্ন রঙের কাপড়চোপড়, ধোঁয়ায় পোড়া মাছ, লোহার হাঁড়িপাতিল এবং থালাবাসন কিনে নিয়ে যায়।

বিশাল নদীর অপর পাড়ের মানুষেরা নৌকা দিয়ে মিষ্টি আলু এবং নানা ধরনের মাছ নিয়ে আসে। মাঝেমাঝে এসব নৌকা এত বড় যে, তাতে করে এক ডজন বা তারচেয়েও বেশি লোক অনায়াসে আসতে পারে। আবার অনেক সময় নৌকা খুবই ছোট থাকে। সেসব ডিঙ্গি নৌকায় করে শুধু স্বামী-স্ত্রীরা আসে। নদীর পাড়ে তারা নৌকা বেঁধে মাছ নিয়ে বাজারে যায় এবং বেশি দর-কষাকষি না করে মাছ বিক্রি করে। তারপর মহিলারা বাজারের ভেতর ঢোকে এবং তেল-নুন ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীর জিনিসপত্র ক্রয় করে। তবে  তারা সুযোগ মত সস্তায় কাপড়চোপড়ও কেনে। এছাড়া ছেলেমেয়েদের জন্য শিমের কেক অথবা ইগারা এবং মহিলাদের তৈরি আকারামাই-মাই ক্রয় করে। সারাদিন বেচা-কেনার পর তারা সূর্যাস্তের সময় বাড়ির দিকে রওনা হয়। তখন গোধূলির রক্তিম আভায় নদীর পানি চিকমিক করে। ক্রমশ তাদের ডিঙ্গি নৌকা জনারণ্যের আড়ালে হারিয়ে যেতে থাকে। একসময় অন্ধকার আকাশ ফুঁড়ে একটুকরো সোনালী চাঁদ উদ্ভাসিত হয়। ফিরতি পথে সেই আবছা আলো-আঁধারিতে দু’টো অস্পষ্ট শরীর নৌকা বেয়ে চলে যায়।

জুলিয়াস ওবি উমুরুর আদিবাসি নয়। সে কুড়ি মাইল বা তারচেয়ে বেশি দূরের কোনও এক গ্রাম থেকে এসেছে। কিন্তু ১৯২০ সালে সে যখন মিশনারি স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণীর সাধারণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, তখন সে এক নাইজার কোম্পানিতে কেরানির চাকরি নিয়ে উমুরুতে আসে। এই কোম্পানি পাম তেলের ব্যবসা করে। উমুরুর বিখ্যাত বাজারের পেছনেই কোম্পানির অফিস। তাই কাজে যোগ দেওয়ার দুই বা তিন সপ্তাহের মধ্যেই সে বাজারের তুমুল হৈচৈ এবং কোলাহলের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। অনেক সময় প্রধান কেরানি যখন অফিসে অনুপস্থিত বা উপস্থিত থেকেও ঘুমিয়ে থাকে, তখন সে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরের জনমানুষের কর্মচঞ্চলতা দেখে। আপনমনে সে ভাবে, গতকাল বাজারে এত মানুষ ছিল না, তবুও সেখানে একধরনের গমগম ভাব ছিল। তাহলে নিশ্চয়ই দুনিয়ায় আরও অনেক মানুষ আছে। অবশ্য লোকে বলাবলি করে, যারা বাজারে আসে, তারা সবাই আসল মানুষ নয়। জ্যানেটের মা-ও এমন ধরনের কথা বলেছেন।

‘তুমি যে বাজারের ভীড় ঠেলে অনিন্দ্য সুন্দরী মেয়েদের যাতয়াত করতে দেখেছো, ওরা সবাই রক্ত-মাংসের আসল মেয়ে নয়। ওরা নদী থেকে আগত ম্যামি-ওয়োটা’—জ্যানেটের মা বললেন।

‘কিভাবে ওদের চেনা যায়?’ জুলিয়াস জিজ্ঞেস করে। কেননা পাশ্চাত্যের শিক্ষাদীক্ষা এ ধরনের অযৌক্তিক এবং অন্ধবিশ্বাস থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। কিন্তু তার অগ্রসর মানসিকতার প্রকাশ সে করেনি, বরং সন্তর্পণে লুকিয়ে রেখেছে। সে ভালো করেই জানে, এসব কুসংস্কার নিয়ে মায়েদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক করা মোটেও সমুচিত নয়।

‘সব সময় তুমি বুঝতে পারবে’—জ্যানেটের মা ব্যাখ্যা করে বলেন—‘কেননা ওরা এত বেশি সুন্দরী যে, এই তামাম দুনিয়ার কোনও রক্ত-মাংসের মেয়েদের পক্ষে অতটা সুন্দরী হওয়া মোটেও সম্ভব নয়। এছাড়া তুমি যদি সরাসরি ওদের দিকে তাকাও, তাহলে দেখবে ওরা পলকেই ভীড়ের মাঝে হারিয়ে গেছে। ’

এসব অতিপ্রাকৃত বিষয় নিয়ে ভাবতে ভাবতে একসময় জুলিয়াস জানালার কাছে এসে বাইরের বিরান বাজারের দিকে অপলক তাকিয়ে ভাবনার অতলে তলিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু কে আছে যে ভাবতে পারে, কোলাহলপূর্ণ বাজার এখন এমনভাবে জনশূন্য হয়ে খাঁ খাঁ করবে? একমাত্র কারণ হলো কিটিকপা বা জলবসন্ত।

উমুরু যখন ছোট্ট একটা গ্রাম ছিল, তখন সেখানে হাতেগোণা কয়েকজন মানুষের বসতি ছিল। কিন্তু এখন উমুরু একটা বিশাল এবং কর্মচঞ্চল নদী-বন্দর শহরে রূপান্তরিত হয়েছে। একসময় কিটিকপা আসে। ইবো নৃ-গোষ্ঠী মানুষের কাছে কিটিকপার চেয়ে ভয়াবহ আর কোনও অসুখ নেই। এই অসুখকে তারা দেবতার অভিশাপ হিসেবে দেখে। যারা এই রোগে আক্রান্ত হয়, তারা শুধু অভিশপ্তই নয়, বরং সমাজের চোখে অপমানিত হিসেবে পরিগণিত হয়। একই এলাকার মানুষের মধ্যে এবং ধীরে ধীরে এক গ্রামের সাথে অন্য গ্রামের লোকদের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। লোকেরা যখন বলে, অই গ্রামে কিটিকপা এসেছে, তখন আশপাশের গ্রামের লোকজন সেই রোগাক্রান্ত গ্রামের লোকজনের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

জুলিয়াস খুবই চিন্তিত। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জ্যানেটের সঙ্গে তার কোনও দেখা-সাক্ষাত নেই, এমনকি যোগাযোগও নেই। জ্যানেট তার বাগদত্তা এবং শীঘ্রই তারা বিয়ে পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছে। জ্যানেটের মা সাবধান করে বারবার জুলিয়াসকে বলেছে যে, যতদিন না পর্যন্ত জেহোবাহ্‌র অলৌকিক শক্তিতে এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, ততদিন সে যেন কিছুতেই জ্যানেটকে দেখতে না আসে। জ্যানেটের মা একজন গোঁড়া খ্রিস্টান। একটি মাত্র কারণে তিনি তার মেয়েকে জুলিয়াসের সঙ্গে বিয়ে দিতে সম্মত হয়েছেন, তা হলো জুলিয়াস গির্জার সঙ্গীত দলের সঙ্গে গান পরিবেশন করে।

‘তুমি ঘরেই থাকবে’—সতর্ক করার ভঙ্গিতে জ্যানেটের মা বললেন। তারপর একটু থেমে তিনি রাস্তার উল্টোদিকের একটা বাড়ির দিকে আঙুল উঁচিয়ে বললেন, ‘তুমি জানো না, রাস্তায় কখন কার সঙ্গে তোমার মোলাকাত হবে। অই বাড়ির লোকজন এই রোগে আক্রান্ত। ’

জুলিয়াসকে বিদায় জানানোর জন্য জ্যানেট খানিকটা পথ একসঙ্গে হাঁটে। তারপর একে অপরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে বিদায় জানানোর অন্তিম মুহূর্তে তারা পরস্পর করমর্দন করে, যা সামাজিকতার দিক থেকে খুবই বেমানান।

জ্যানেটের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে জুলিয়াস সরাসরি বাড়ি ফিরে আসেনি। সে নদীর ধারে গিয়ে আনমনে এদিক-ওদিক হাঁটাহাঁটি করেছে। হয়ত সে অনেকক্ষণ হেঁটেছে। কেননা এসময় সে রাতের অশুভ শক্তির একওয়ে বা কাঠের বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ শুনতে পেয়েছে। শোনার সঙ্গে সঙ্গে সে বাড়ি ফিরে আসে। সেই অশরীরী শক্তি পুরো শহরের একদিক থেকে অন্যদিকে চলে যাওয়ার আগে বাড়ি ফেরার জন্য তার হাতে মাত্র আধ ঘণ্টার মত সময় ছিল।

তড়িঘড়ি করে বাড়ি ফেরার সময় জুলিয়াসের পায়ের নিচে কী একটা জিনিস ভেঙে গিয়ে একধরনের পিচ্ছিল পদার্থ রাস্তার ওপর ছড়িয়ে পড়ে। সে থমকে দাঁড়ায় এবং সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে ফুটপাথের দিকে তাকায়। তখনও বিশাল আকাশের গায়ে চাঁদ ভালো করে ওঠেনি। তবে অস্পষ্ট ফ্যাঁকাসে আলোয় সে দেখতে পারে যে, ওটা খুব বেশি দূরে নয়। বুঝতে পারে, পায়ের চাপে সে একটা অশুভ ডিম ভেঙে ফেলেছে। ডিমের চারপাশে কচি পাম গাছের পাতা। এই রাতের বেলা অশুভ ডিম কারও জন্য অমঙ্গলের বার্তা বয়ে নিয়ে এসেছে। সে ভাবে, সেই অশুভ ডিমটিকে পায়ের চাপে ভেঙে সে নিজের কপালেই অমঙ্গল ডেকে এনেছে।

‘ননসেন্স’—বিরক্তির স্বরে বলেই জুলিয়াস তাড়াতাড়ি হাঁটতে থাকে। কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গেছে। রাতের এই অশুভ শক্তি দূরে কোথাও দেখা দিয়েছে। ক্রমশ ভয়ঙ্কর বাতাসে অশুভ শক্তির হিঁসহিঁস আওয়াজ বাড়তে থাকে। যদিও অশুভ শক্তির অবস্থান অনেক দূরে, কিন্তু জুলিয়াস জানে, এই অশুভ শক্তির জন্য দূরত্ব কোনও ব্যাপারই নয়। সুতরাং সে সরাসরি রাস্তার পাশের মিষ্টি আলুর ক্ষেতের ওপর মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। কদাচিৎ সে একাজ করে। যখনই সে অশুভ শক্তির বজ্রনিনাদ শুনেছে, তখনই তাকে এ ধরনের কাজ করতে হয়েছে। তার সারা শরীর কাঁপতে থাকে। মনে হয়, আওয়াজটা তার দিকেই ধেয়ে আসছে এবং একসময় সে পায়ের শব্দও শুনতে পাচ্ছে। কুড়িজন লোকের একসঙ্গে দৌড়ানোর মত শব্দ অনুরণিত হতে থাকে। মুহূর্তেই যেন শব্দ পাশ কেটে চলে গেল এবং অবশেষে রাস্তার উল্টোদিকে মিলিয়ে যায়।

জানালার ধারে দাঁড়িয়ে জনমানবহীন ফাঁকা বাজারের দিকে তাকিয়ে পুনরায় সমস্ত রাত কাটিয়ে দেয় জুলিয়াস। মাত্র এক সপ্তাহ আগে ঘটনা ঘটেছে। অথচ মনে হয় এই অল্প সময়কে কেউ যেন বর্তমানের একরাশ নিঃসঙ্গতার কালো চাদরে ঢেকে দিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই নিঃসঙ্গতা আরও গভীর ও দীর্ঘ হতে থাকে। একদিকে জুলিয়াস দাঁড়িয়ে আছে এবং অন্যদিকে জ্যানেট ও তার মার অসার দেহ পড়ে আছে, যাদেরকে জলবসন্ত এসে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
___________________________________

পাদটীকা

**ইবো:  দক্ষিণ-পূর্ব নাইজেরিয়ার আদিবাসী। এরা আফ্রিকার সবচেয়ে বড় নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়। গ্রামাঞ্চলে এরা সাধারণত কারুশিল্পী, কৃষিজীবী এবং ব্যবসায়ী হয়। ইউরোপিয়ান ঔপনিবেশিক আধিপত্য বিস্তারের সূচনা লগ্ন থেকে এদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি ক্রমশ লুপ্ত হতে থাকে। এদের জীবনকাহিনী নিয়ে চিনুয়া আচেবে তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘থিংক্স ফল এপার্ট’ রচনা করেন, যা আফ্রিকার কথাসাহিত্যের এক অমূল্য সাহিত্য কর্ম হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃত এবং সমাদৃত।
**উমুরু: দক্ষিণ-পূর্ব নাইজেরিয়ার একটি শহর।
**নোকো দিবস: দেবদেবীর নামানুসারে ইবো আদিবাসীদের চারদিনের সাপ্তাহিক বাজারের একদিন। ইবো সম্প্রদায়ের কাছে এইদিন অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত। কেননা তারা বিশ্বাস করে, এই দিনে ঈশ্বর তার দৈবানুগ্রহ বর্ষণ করে।
**ইগারা: আফ্রিকার আদিবাসী সম্প্রদায়।
**আকারা: আফ্রিকা এবং ব্রাজিলের একধরনের খাবার, যা পাম তেলে ভাজা খোসা ছাড়ানো কালো মটরশুটি দিয়ে তৈরি করা হয়।
**মাই-মাই: মটরশুটি দিয়ে তৈরি একধরনের কেক।
**ম্যামী-ওয়োটা: পশ্চিম, মধ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকার একধরনের জলজ ঐশ্বরিক শক্তি বা জলপরী, যা ক্যারাবীয় দ্বীপপুঞ্জে এবং দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকায় দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত এই শক্তি নারীর রূপ ধারণ করে। এই জলপরী আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার শিল্প-সাহিত্য, কবিতা ও সঙ্গীতে এক বিশেষ ভূমিকা দখল করে আছে।
**কিটিকপা: দক্ষিণ-পূর্ব নাইজেরিয়ার আদিবাসী ভাষায় জলবসন্ত।
**জেহোবাহ্: হিব্রু বাইবেলে বর্ণিত ইজরাইলী ঈশ্বরের প্রকৃত নাম।
**একওয়ে: ইবো আদিবাসীদের তৈরি ড্রাম জাতীয় একধরনের কাঠের বাদ্যযন্ত্র।
___________________________________

লেখক পরিচিতি: পশ্চিম আফ্রিকার কথাসাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যে কয়জন সাহিত্যিকের উল্লেখযোগ্য এবং বিশেষ অবদান রয়েছে, তাদের মধ্যে নাইজেরিয়ার এই বিখ্যাত লেখক চিনুয়া আচেবে অন্যতম। পুরো নাম অ্যালবার্ট চিনুয়ালুমোগু আচেবে। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, গল্পকার, কবি, সাহিত্য সমলোচক এবং অধ্যাপক। জন্ম নাইজেরিয়ার শহরে, ১৯৩০ সালের ১৬ নভেম্বর।

বিশ্ব সাহিত্যাঙ্গণে আলোড়নকারী তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘থিংক্স ফল এপার্ট’ ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত হয়। এছাড়া ‘নো লঙ্গার অ্যাট ইজ’ (১৯৫৮), ‘অ্যারো অফ গড’ (১৯৬৪), ‘ এ ম্যান অফ পিপল’ (১৯৬৬), ‘সিভিল পিস’ (১৯৭১) ‘অ্যান্টহিলস্ অফ দ্য সাভানা’ (১৯৮৭), ‘এনাদার আফ্রিকা’ (১৯৯৮) এবং ‘হোম অ্যান্ড এক্সাইল’ (২০০০) তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস।

একাধিক বিখ্যাত ছোটগল্পের রচয়িতা এই লেখক ১৯৮১ সালে প্রকাশিত ‘বিও্যয়ার, সৌল ব্রাদার অ্যান্ড আদার পোয়েমস্’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ‘কমনওয়েলথ্ পোয়েট্রি প্রাইজ’ লাভ করেন। কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০০৭ সালে অর্জন করেন ‘ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল’ পুরস্কার। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত হয়েছে । তবে দেশ-কালের নির্মোহ উপস্থাপনার কারণে মাঝে মাঝে তাকে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তিনি দেশীয় বিষয়কে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে আন্তর্জাতিক বাজারে নিজের সাহিত্যকর্মকে বিক্রয়যোগ্য করতে চেয়েছেন। ২০১৩ সালের ২১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরে তিনি দেহত্যাগ করেন।
___________________________________

গল্পসূত্র: ‘অতিপ্রাকৃত’ গল্পটি চিনুয়া আচেবের ইংরেজিতে ‘দ্য স্যাক্রিফিসিয়্যাল এগ’ গল্পের অনুবাদ। গল্পটি ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত লেখকের ‘গার্লস্ অ্যাট ও্যয়্যার অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’ গল্পসংকলন থেকে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে এই গল্পটি জেমস ডেলি সম্পাদিত ‘দ্য ওয়ার্ল্ড গ্রেটেস্ট শর্ট স্টোরিজ’ গল্পসংকলনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।



বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।