১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
১৮তম কিস্তির লিংক
___________________________________
পঞ্চম অধ্যায় |
গভীর পাতালঘরে অনুচ্চ ছাদের ক্যান্টিনে লাঞ্চ নেওয়ার লাইনে শম্বুক গতি। ঘরে মানুষ গিজগিজ করছে, শোরগোলে কান ঝালাপালা। কাউন্টারের লোহার বেড়ার ওপার থেকে ধাতব লবণের গন্ধমাখা স্ট্যুর ধোঁয়া এসে নাকে লাগছে, আর তা ছাপিয়ে ভিক্টরি জিনের কড়া গন্ধ। কামরার শেষের দিকে ছোট্ট বার—সেখান থেকে দেয়ালের ছোট ছিদ্রপথে আসছে জিন, ১০ সেন্টে মিলে যাবে বড় এক ঢোক।
‘ঠিক যাকে খুঁজছিলাম’—পেছন থেকে কোনও একজনের গলা শুনতে পেল উইনস্টন।
ঘুরে দেখে বন্ধু সাইম। গবেষণা বিভাগে কাজ করে। ‘বন্ধু’ শব্দটি সম্ভবত সঠিক নয়। আজকাল বন্ধু বলে কেউ নেই, সবাই কমরেড। তবে কিছু কমরেড আছেন যারা অন্যদের চেয়ে একটু বেশি ঘনিষ্ঠ। সাইম ভাষাতাত্ত্বিক, নিউস্পিক বিশেষজ্ঞ। নিউস্পিক অভিধানের ১১তম সংস্করণ তৈরিতে যে বড় একটা কর্মীবাহিনী কাজ করছে—তাদের একজন। ছোটখাটো গড়ন, উইনস্টনের চেয়েও ছোট। কালো লম্বাটে চুল, প্রস্ফীত চোখে মাখা থাকে শোকগ্রস্ত, ভীত চাহনি। আপনি যখন ওর সঙ্গে কথা বলবেন, মনে হবে ও আপনার মুখমণ্ডলে কিছু একটা খুঁজছে।
‘তুমি রেজর ব্লেড পেয়েছো নাকি, জানতে চাইছিলাম’—বলল সাইম।
‘নারে.. একটাও না, অপরাধীর গলা উইনস্টনের। বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করেছি। মনে হয় আর পাওয়া যাবে না। ’
সবাই কেবল রেজর ব্লেডের কথাই জানতে চায়। তার কাছে অবশ্য দুটো ছিল, অব্যহৃত। তুলে রেখেছিল। মাস কয়েক আগে যখন রেজর ব্লেডের মঙ্গা দেখা দিল—তখন। যে কোনও সময়ই বিশেষ কোনও প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহে পার্টির দোকানগুলো অপারগতা ঘোষণা করে দেয়। কখনও বোতাম, কখনও রিফু করার উল, কখনও জুতোর ফিতে। এখন রেজর ব্লেড। পাওয়া যাবে, অতি গোপনে, চোখের অন্তরালে যদি ‘ফ্রি’ মার্কেটগুলোতে আপনি ঢুকে পড়তে পারেন। তবে তাও নিশ্চিত নয়।
‘আমি ছয় সপ্তাহ ধরে একই ব্লেড ব্যবহার করছি’—মিথ্যাই বলল উইনস্টন।
খাবারের লাইন আরেক ধাক্কা এগিয়ে ফের থমকাল। উইনস্টন ঘুরল সাইমের দিকে। কাউন্টারের শেষ মাথা থেকে তেলতেলে দুটো ধাতব ট্রে তুলে নিল দুজন।
গতকাল কারাবন্দিদের ফাঁসি দেখতে গিয়েছিলে নাকি? প্রশ্ন সাইমের।
‘কাজ ছিল’—উত্তর উইনস্টনের। ‘ভিডিওচিত্রে দেখে নিতে পারব, আশা করি। ’
‘বিকল্প হিসেবে এটা ভালো কিছু নয়’—বলল সাইম।
উইনস্টনের মুখের ওপর ঘুরছে তার বিদ্রূপাত্মক চাহনি। ‘আমি তোমাকে চিনি’—চোখ জোড়া যেন সে কথাই বলতে চাইছে। ‘আমি তোমার ভেতরটা দেখতে পাই, আমি জানি কেন তুমি কারাবন্দিদের ফাঁসি দেখতে যাওনি। ’—বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে সাইম বিষাক্ত গোঁড়া কিসিমের। শত্রুপক্ষের গ্রামে যখন হেলিকপ্টার হামলা চালায়, চিন্তা-অপরাধীরা যখন স্বীকারোক্তি দেয় কিংবা বিচারের মুখোমুখি দাঁড়ায়, ভালোবাসা মন্ত্রণালয়ের কারাবন্দিদের যখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় আর সেসব নিয়ে ও যখন কথা বলে তখন কণ্ঠে সন্তুষ্টি ঝ’রে পরে অবিশ্বাস্য সংকীর্ণতায়। ওর সঙ্গে কথা বলার সময় এসব বিষয় এড়িয়ে বরং সম্ভব হলে নিউস্পিকের খুঁটিনাটি দিকগুলো টেনে আনা ভালো। ওতে তার দখল যেমন আছে, মজাও পাওয়া যায়। বড় কালো দুটি চোখের অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি এড়াতে উইনস্টন মাথাটি ইষৎ ঘুরিয়ে নিল।
‘দারুণ ফাঁসি হয়েছে’—ইঙ্গিতপূর্ণ উচ্চারণ সাইমের। ‘ওদের পা দুটো একসাথে বেঁধে ফেলার বিষয়টি ফালতু মনে হয়। মৃত্যু যন্ত্রণায় ওরা পা দুটো ছোঁড়াছুড়ি করছে এমনটা দেখতেই ভালো লাগে। তবে দারুণ লাগে যখন ওদের জিহ্বা মুখ থেকে বেরিয়ে আসে আর কড়া নীল হয়ে যায়। এটা আমার মধ্যে একটা আবেদন তৈরি করে। ’
‘নেক্স’ প্লিজ! হাতা হাতে চিৎকার পাড়লো সাদা অ্যাপ্রোন পরা প্রোলদের একজন।
উইনস্টন ও সাইম গ্রিলের নিচ দিয়ে দুজনের ট্রে দুটি ঠেলে দিল। তাতে দ্রুতই ভরে দেওয়া হলো দুপুরের বরাদ্দ খাবার—ছোট ধাতব পেয়ালায় ধূসর-গোলাপি স্ট্যু, এক খামচা রুটি, এক টুকরো পনির, দুধহীন এক মগ ভিক্টরি কফি আর একটি স্যাকারিন ট্যাবলেট।
চলো টেলিস্ক্রিনের নিচে একটি টেবিল ফাঁকা আছে, বলল সাইম। ‘যাওয়ার পথে জিন নিয়ে নেই। ’
২০তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (১৯) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।