ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

বিলুপ্ত বইয়ের খোঁজে উৎস প্রকাশনী

সাব্বির আহমদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৫
বিলুপ্ত বইয়ের খোঁজে উৎস প্রকাশনী ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দিন কয়েক পরেই একুশে বইমেলা। মেলায় প্রকাশিত বইয়ের সম্ভার তুলে ধরতে প্রকাশনাসংস্থাগুলো আগেভাগেই প্রস্তুতি সেরে রাখেন।



প্রতিবারের মতো এবারও প্রস্তুত ভিন্ন ধারার প্রকাশনাসংস্থা হিসেবে খ্যাত ‘উৎস প্রকাশনী’। এবারের বইমেলায় তারা প্রকাশ করছে অর্ধশত বই।

রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয়তলায় এ প্রকাশনীর অফিস। সেখানে যেতেই দেখা হলো উ‍ৎস প্রকাশনীর কর্ণধার মোস্তফা সেলিমের সঙ্গে। একটি পান্ডুলিপি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন তিনি। কাজের ফাঁকে একান্ত আড্ডায় কথা বললেন বাংলানিউজের সঙ্গে।

বরাবরই ব্যতিক্রমী সব প্রকাশনার জন্য তার প্রতিষ্ঠান খ্যাতি পেয়ে আসছে। কাজের ধরনটাই একটু ভিন্ন বলে তাদের ব্যবসা শুধু বইমেলাকেন্দ্রিক নয় বলে জানালেন তিনি।
গত বছরের বইমেলাতেও সিলেটের বিলুপ্তপ্রায় ‘নাগরী লিপি’ নিয়ে ছিল একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন। আসছে বইমেলাতেও ‘নাগরী লিপি’ নিয়ে আরো দু’টি বই করছেন তারা। বই দু’টি স্কুলে পড়ানোর উপযোগী হবে বলে উল্লেখ করলেন তিনি। বই দু’টির রচনা ও সম্পাদনা করছেন মোস্তফা সেলিম নিজে।

মোস্তফা সেলিম জানান, তারা সব ধরনের বইই প্রকাশ করে থাকেন। তবে ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে তাদের বিশেষ প্রকাশনা রয়েছে।

২০১৫’র বইমেলায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের মধ্যে বিখ্যাত গান ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়’ এর রচয়িতা গিয়াস উদ্দিন আহমদের রচনাসমগ্র রয়েছে।

লাভ-লোকসানের প্রসঙ্গ আসতেই মোস্তফা সেলিম জানালেন, বইমেলায় খুব একটা ব্যবসা হয় না আমাদের। এরকম সিরিজ প্রকাশনা কেনার লোক খুব কম। ভিন্ন ধাঁচের প্রকাশনায় লাভ তো দ‍ূরের কথা, বিনিয়োগের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ টাকাই ওঠে না। তবে এতে কোনো দুঃখ নেই তার। বরং সবসময় এরকম ব্যতিক্রমী প্রকাশনা নিয়েই থাকতে চান।

প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে জড়ানোর গল্প বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০০১ সালে ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত’ নামে প্রথম একটি বই প্রকাশ করি। প্রকাশের অল্প সময়ের মধ্যেই এটি দুর্লভ একটি বইয়ে পরিণত হয়। এ বইটিকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। প্রয়োজনে পায়ে হেঁটে বইয়ের দোকানগুলোতে যেতেও রাজি ছিলাম তখন।

এরপর ১৮৮৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হওয়া ‘শ্রীহট্ট দর্পণ’ ও ১৮৬০ প্রকাশিত হওয়া ‘তারেকে জালালী’সহ দুর্লভ সব বই খুঁজে বের করা শুরু করি। তারপর লোকসাহিত্যের দুরবিন শাহ, আরকুম শাহ, রাধারমন এসব বই প্রকাশ শুরু করি। এভাবেই আমাদের একটি স্বতন্ত্র পরিচয় দাঁড়িয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, শুধু ব্যবসার খাতিরে নয়, বিলুপ্ত বইয়ের প্রকাশনা কাজকে একটি দায়িত্ব বলে মনে করি।

এখন পর্যন্ত উৎস প্রকাশনীর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান অর্জন করেছে বাংলা একাডেমির ‘সেরা মানের গ্রন্থ প্রকাশনা সম্মাননা’সহ বিভিন্ন পুরস্কার।

২০১৫’র একুশে বইমেলায় উৎস প্রকাশনীর যেসব বই আসছে তার মধ্যে রয়েছে ইসমাইল তরফদার প্রণীত হবিগঞ্জের মরমি সাধক, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রণীত  আত্মপরিচয়, মাসুদ মুস্তাফিজ প্রণীত অবমুক্ত বৃত্তায়ন, সুমনকুমার দাশ প্রণীত লোকসাহিত্য লোকগান, বিপিন পাল প্রণীত সত্তর বছর, আতিকুল হোসেইন খান প্রণীত বাংলা বানানের নিয়ম ও মনে রাখার কৌশল, রাকিব আনোয়ার প্রণীত একাত্তরে আমরা ক’জন,  চন্দনকৃঞ্চ পাল প্রণীত উপমার বাঘমামা, শেরাম নিরঞ্জন প্রণীত চাইশ্রা এবং অন্যান্য গল্প উল্লেখযোগ্য।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।