ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

পাণ্ডুলিপি থেকে

আহমেদ বাসারের একগুচ্ছ কবিতা

কবিতা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৫
আহমেদ বাসারের একগুচ্ছ কবিতা

প্রলম্বিত রাতের নর্তকী

প্রলম্বিত রাতের নর্তকী সে, ঘুঙুরে বাজে
বিলুপ্ত সাম্রাজ্যের বিরল ক্বাসিদা, আরও কাছে
ঘনিষ্ঠ কোনো হ্রদের জলে নিত্য তার নীল অবগাহন
চুলের খোঁপায় তুলে সমুদ্রের নীল স্পন্দন
সদর্পে হেঁটে যায় লক্ষ দৃষ্টির তীর গেঁথে
বুকের পার্থিব মাংসপিণ্ডে

যেখানে আলো এসে উপচে পড়ে
রঙ্গমঞ্চের রক্তিম বৃত্তে মুদ্রা তুলে দাঁড়ায় সে
নাগরিক দৃঢ়তায়, শরীরী স্পর্ধায় নড়ে
যৌবনের সব কটি সাবলীল কলকাঠি
হাতের অবাক ইশারায় কেটে দিয়ে আকাশের বুক
চাঁদ-তারা লুপে নেয় মুঠো ভরে
আর আধো অন্ধকারে জ্বলে ওঠে যুবতী প্রদীপ
আতশবাজির শব্দে হারায় অজুত করতালি
যেন মঞ্চজুড়ে নৃত্যরত লক্ষ নিযুত চাঁদের ফালি।
মোহিনীর শরীরী কলা

তোর মুখে হাজার থু থু সুন্দরী চাঁদ
এই নষ্ট সময়ে তোর কেন এত
নির্লজ্জ বেহায়া হাসি!
ভেবেছিস, দিগন্তের কাদাজল পায়ে ঠেলে
ঠা  ঠা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে
পেরিয়ে যাবি অনায়াসে আকাশ-সড়ক
নগ্ন মেঘের কাছেও শিখেছিস কিছু
মোহিনীর শরীরী  কলা
তবু বলি, তুলো-ওড়া এই বাতাসের সীসায়
শুকে দেখ কালো কাঁচা রক্তের উদোম সুবাস
কত নিহত মাংসের লাশ ফুলে আছে খল জলে
তোর চশমা-পরা পটল চোখে
কেবল দৃশ্যের  বিপরীত আল্পনা
নির্মোক খুলে ফেলে একবার ফেরা চোখ
দেখ, দগদগে ক্ষতের মুখে কত নীল মাছি
ঠোঁট রেখে তুলে আনে জাগতিক বিষ
তবু তুই কোন মুখে দিয়ে যাস শিস?


হরিণী

ভেবেছিলি অরণ্যই নিরাপদ আলয়
খুরে তুলে খড়মের সুর আনমনে ছিঁড়ছিস
হলুদ অধিকৃত সবুজ ঘাস
গতরাতের সহজিয়া দুঃস্বপ্ন ধুয়ে মুছে
এখন চঞ্চল চিত্তে বুনছিস প্রত্যয়ী স্বপ্নগাছ

যদিও অনিবার্য তবু জেনে রাখ
তোর মাংসল শরীর সই তাক হয়ে আছে
সহস্র তাতানো তীর, পায়ের তলার
যে-মাটি আঁকড়ে ছুটছিস নিরুদ্দেশ
তার বুকেও অট্টহাসে মীন-চোরা বালি

যেটুকু ঘন অরণ্য দিতে পারে সুরক্ষা-কবজ
তার কব্জির ডগায় জেগে আছে বন্দুকের নগ্ন নল
লৌকিক শিকারি হাত আঙুল মটকায়
ছিঁড়ে নিতে তোর শরীরের আলুথালু অভ্যুত্থান

আপাত সুরক্ষার বৈরী হাওয়ায়  নেচে নেচে
চিন্ময়ী হরিণী তুই কতদূর যাবি বল?


অদৃশ্য দেয়াল

অদৃশ্য দেয়াল, ঝুলছে জীবনের চারপাশে
দেয়ালের ওপারে মাছিদের ভন ভন
শ্রবণ কিংবা উপলব্ধিই কেবল উপভোগ করে
দৃষ্টি অনবদ্য দুটি চোখ নিয়েও অন্ধ ভীষণ

দেয়ালের এপারে আকাশ, মূক বধির
পেটে বুলেট ঠুকলেও সাড়াশব্দহীন
নিচে ঘাসের কোমর আঁকড়ে ধরা মাটি
পদাঘাত, শত কর্ষণেও অনড় প্রতিদিন

মার্জিনে শিলালিপি, দুর্বোধ্য কোনো লুপ্ত ভাষায়
খোদিত ভূগোল, অলীক ইঙ্গিত
মাঝখানে সন্ধি-সূত্র, বীজগণিত
যোগ বিয়োগের চক্রে বাঁধা, লীন সঙ্গীত...


গতজন্মের রাধা

বর্ষা গত, শরতেও যখন আহত
হৃদয়ের মাঠে ফোটে প্রণয়ের কাশফুল
তখনও তুমি কণ্টকে বিঁধে পায়ের আঙুল
নিরন্তর অভিসারের মহড়ায় রত

হে আমার গতজন্মের অনন্যা রাধা
চেতনার হাওয়ায় উড়ছে আজো স্মৃতির মৌমাছি
অপেক্ষার বিষ পান করে নীল হয়ে আছি
স্বপ্নে তাই তুমি এক মূর্তিমান ধাঁধা

পা যদি দেহভারে অনড় বনষ্পতি
আকাশের গাঢ় নীল মেখে নিও গায়
ঘাসফুল, মেঠোপথ ছুঁয়ে দিও পায়
ধুলো মেখে লাল নখে এসো শাশ্বতী...

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।