১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
৩১তম কিস্তির লিংক
___________________________________
উইনস্টনের মনে হলো আধুনিক জীবনের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য এর নিষ্ঠুরতা ও নিরাপত্তাহীনতায় নয়, বরং এর নগ্নতা, নোংরামি আর অস্তিত্বহীনতায় নিহিত। আপনি নিজের দিকটা দেখলেও দেখবেন, টেলিস্ক্রিন থেকে যে অনবরত মিথ্যার বেসাতি চলছে তার সঙ্গেই কেবল নয়, এর মধ্য দিয়ে দল যে আদর্শ অর্জন করতে চাইছে তারও সঙ্গেও জীবনের কোনও সাজুয্য নেই। দলের একজন সদস্যের জন্যও এর সেরা দিকগুলো হচ্ছে নিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক মনোভাব পোষণ, একঘেঁয়ে কাজ, টিউবে একটু স্থান করে নেওয়ার লড়াই, ছিড়ে যাওয়া মোজায় পা গলানো, স্যাকরিন ট্যাবলেটে মিষ্টি উপভোগ আর সিগারেটের গোড়া বাঁচিয়ে ধূমপানের ক্ষুধা নিবারণ। পার্টি যে আদর্শ নির্ধারণ করেছে তা বিশাল, ভয়াবহ আর জ্বলজ্বলে- ইষ্পাত আর কংক্রিটের এক জগত, দৈত্যাকায় যন্ত্র আর ভয়াল অস্ত্র- যুদ্ধবাজ আর গোঁড়াদের এক জাতি যা এগিয়ে চলছে যথার্থ জোটবদ্ধতায়, সবাই একই ভাবনা ভাবছে, একই স্লোগান তুলছে, টানা কাজ করে যাচ্ছে, যুদ্ধ করছে, জয় করছে, যন্ত্রণা দিচ্ছে- আবার যন্ত্রণাই ভোগ করছে- তিন কোটি মানুষের একই মুখ, একই চেহারা। বাস্তবতা হচ্ছে- ক্ষয়িষ্ণু নোংরা নগরে বুভুক্ষ মানুষগুলো ছেঁড়া জুতো পায়ে এদিক ওদিক ছুটছে, উনবিংশ শতাব্দীর ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়া বাড়িগুলো থেকে সদাই ছুটছে সিদ্ধ বাঁধাকপি আর বিষ্ঠার গন্ধ। তার চোখে ভেসে উঠলো লাখ লাখ ডাস্টবিনে ভরা সর্বনেশে এক লন্ডন নগরী আর তা মিশে একাকার হয়ে গেলো মিসেস পারসন্সের অবয়বে, উশকো খুশকো চুলে ছাতড়া পড়া একটি মুখ, পাইপে পূতিগন্ধময় আবর্জনা আটকে যাওয়ার পর যাতে মেখে আছে অসহায়ত্বের ছাপ।
আবারও নুয়ে পড়ে গোড়ালিতে চুলকে নিলো সে। দিবারাত্রি টেলিস্ক্রিনগুলো পরিসংখ্যাণের তোড়ে আপনার কানে ব্যাথা ধরে যাবে। যেনো প্রমাণ করেই ছাড়বে জনগণ এখন বেশি খাদ্য পাচ্ছে, বস্ত্র পাচ্ছে, আবাসন পাচ্ছে, অধিকতর বিনোদন পাচ্ছে- পঞ্চাশ বছর আগের মানুষের চেয়ে তারা বেশি বাঁচে, কম খাটে, গায়েগতরে বড়, স্বাস্থ্যবান, শক্তিধর, আরও খুশি, আরও বুদ্ধিমান, আরও শিক্ষিত। এসব কথার একটি শব্দকণাও কখনো প্রমাণ করা যাবে না, আবার অপ্রমাণও করা যাবে না। ধরুন, দল দাবি করছে, বয়ষ্ক প্রোলদের ৪০ শতাংশ শিক্ষিত: বিপ্লবের আগে বলা হতো এর সংখ্যা ছিলো মাত্র ১৫ শতাংশ। দল দাবি করছে শিশু মৃত্যুর হার এখন হাজারে ১৬০, অথচ বিপ্লবের আগে এর সংখ্যা ছিলো ৩০০- এরকমই অন্য সব পরিসংখ্যান। এটা যেনো দুই অজানা তথ্যকে এক সমীকরণে মেলানো। খুব হতে পারে, এই ইতিহাসের বইয়ের প্রতিটি শব্দ, এমনকি যা কিছু প্রশ্নাতীতভাবে গৃহীত তাও খাঁটি অলিক কল্পনা বৈ কিছু নয়। এমনও হতে পারে, জাস প্রাইমি নকটিস বলে কোনও আইন ছিলো না, পুঁজিপতি বলে কোনও সৃষ্টির অস্তিত্ব ছিলো না, ছিলো না টপ হ্যাট নামের কোনও পোশাক।
সবকিছুই ধোয়াশায় মিশে গেছে। অতীত মুছে ফেলা হয়েছে, ঘঁষে ফেলা অংশটির কথাও বিস্মৃত হয়েছে, মিথ্যাই আজ সত্যিতে পরিণত হয়েছে। গোটা জীবনে মাত্র একটিবার- মিথ্যায়নের সুনির্দিষ্ট, অভ্রান্ত নজীর তার হাতে পড়েছিলো। মাত্র ত্রিশ সেকেন্ড ওটি তার আঙুলের ফাঁকে আটকে ধরেও রেখেছিলো। সালটা ১৯৭৩ই হবে- ততদিনে ক্যাথরিনের সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তবে সত্যিকারের সংশ্লিষ্ট তারিখটি সাত বা আট বছর আগের।
ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে শুরু হয় গল্পটি, মহাশুদ্ধিকরণের সময়ে বিপ্লবের মূল হোতাদের যখন একবারে এবং চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হলো তখন। ১৯৭০ এর পর এদের একজনেরও অস্তিত্ব থাকলো না, বিগ ব্রাদার ছাড়া। বাদবাকিরা ততদিনে ষড়যন্ত্রকারী, প্রতিবিপ্লবী হিসেবে পরিচিত। গোল্ডস্টেইন পালালো, আর কোথায় গা-ঢাকা দিলো তা কেউ জানে না। অন্যদের মধ্যে কেউ কেউ স্রেফ গুম হয়ে গেলো, আর অধিকাংশেরই বিস্ময়কর গণবিচারে অপরাধের স্বীকারোক্তির পর মৃত্যুদ- কার্যকর হয়ে গেলো।
৩৩তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময় ১৭৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (৩২) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।