১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
৩৪তম কিস্তির লিংক
___________________________________
এরপর পরিস্থিতি বার বার পাল্টেছে- দুই বার, তিন বার, সে জানেনা কতবার! হতে পারে স্বীকারোক্তি পুনর্লিখনের পর পুনর্লিখন হয়েছে, যতক্ষণ মূল ঘটনা ও তারিখ তার সামান্য গুরুত্বটুকুও হারিয়ে না ফেলেছে ততক্ষণ, ততবার লেখা হয়েছে। অতীত কেবল পাল্টেই দেওয়া হয়নি, বার বার পাল্টানো হয়েছে। মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে যা তাকে সবচেয়ে বিপর্যস্ত করে রাখে তা হচ্ছে সে কোনও দিন স্পষ্ট করে বুঝতে পারে না, কেনো ছলচাতুরির এই বিশাল যজ্ঞ। অতীত মিথ্যায়নের আপাত সুবিধা আছে, কিন্তু এর মূল অভিসন্ধী রহস্যে ভরা। ফের কলম তুলে নিলো সে, লিখলো:
আমি বুঝি কিভাবে; কিন্তু বুঝিই না কেনো।
সে নিজেই কি আসলে একটা পাগল? এই ভেবে তার ভয় হয়। অতীতেও বার বার হয়েছে। একজন পাগল স্রেফ একা। একটা সময় ছিলো, পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে এমন কথায় বিশ্বাস করাই ছিলো পাগলামি; এখন অতীত পাল্টানো যায় না, সে কথায় বিশ্বাস করা পাগলামি। হতে পারে সে একাই সেই বিশ্বাস ধারণ করে, আর যদি একাই হয়, তাহলে তো সে পাগলই। তবে এই পাগল হওয়ার ভাবনা তাকে খুব একটা ঝামেলায় রাখে না, বরং বড় আতঙ্কের বিষয় হয়ে ওঠে, তার এই ভাবনা যদি ভুল হয়ে বসে সেই ভয়!
শিশুদের ইতিহাস বইটি তুলে নিয়ে এর মুখচিত্রে ছাপা বিগ ব্রাদারের ছবিটির দিকে তাকালো সে। সম্মোহনী চোখ দুটো তার চোখের গভীরে প্রোথিত। মনে হবে কিছু একটা কঠিন চাপ সৃষ্টি করে খুলির ভেতরে ঢুকে পড়ছে, মস্তিষ্কে আঘাত হানছে, বিশ্বাসগুলো থেকে বের করে আনার চেষ্টা করছে, আর প্রায় এমন কাবু করে ফেলছে যেনো আপনি আপনার নিচের চেতনাকেও অস্বীকার করে বসেন। এরপর পার্টি একদিন ঘোষণা করে দেবে- দুই আর দুইয়ে পাঁচ হয়, আর আপনি তাই বিশ্বাস করবেন। এটা অবশ্যম্ভাবী, অতি শীঘ্র, নয়তো আরও পরে পার্টি একদিন এমন দাবিই করবে, তাদের অবস্থান থেকে এটাই হবে যৌক্তিক দাবি। অভিজ্ঞতার শক্তিই কেবল নয়, বিদ্যমান বাহ্যিক বাস্তবতাগুলোও কৌশলে তাদের দর্শণ দিয়ে অস্বীকার করা হচ্ছে। সকল নব্যতন্ত্রের সেরা তন্ত্র সাধারণ জ্ঞান। ভিন্নচিন্তার জন্য আপনাকে যে ওরা হত্যা করে সেটা ভয়ঙ্কর নয়, ভয়ঙ্কর হচ্ছে ওরা যা করে সেটাই ওরা সঠিক বলে জ্ঞান করে। তাহলে আমরা কিভাবেই জানবো, দুই আর দুইয়ে চার হয়? অথবা মধ্যাকর্ষণের শক্তি কিভাবে কাজ করে? অথবা অতীত অপরিবর্তনশীল? যদি অতীত আর বাহ্যিক পৃথিবী দুইয়েরই অস্তিত্ব থাকে কেবল মনে, আর সে মনটা যদি হয় নিয়ন্ত্রিত, তাহলে কী করেই হবে?
কিন্তু না! তার সাহসিকতা হঠাৎ করেই যেনো নিজের মতো করে জোর পায়। কোন যোগসূত্র ছাড়াই তার মনে ভেসে উঠলো ও’ব্রায়েনের মুখ। অতীতের চেয়ে অনেক বেশি নিশ্চয়তায় সে জানে, ও’ব্রায়েন তার পক্ষের কেউ নন। সে এই ডায়রি লিখছে ও’ব্রায়েনের জন্য- ও’ব্রায়েনের কাছে: এ যেনো অসমাপনীয় একটি চিঠি যা কেউ পড়বে না; কিন্তু তা এক বিশেষ ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে লেখা এবং সেই সত্য থেকেই এর রং নেওয়া।
পার্টি বলে দিয়েছে যে কোনও দলিল চোখে দেখে বা কানে শুনে ভুলে যেতে হবে। এটিই তাদের চূড়ান্ত ও সবচেয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ। তার হৃদয়টি যেনো তলিয়ে যায় যখন সে ভাবে কি ভয়ানক ক্ষমতার দাপটে সে কুক্ষিগত হয়ে আছে, কত সহজে পার্টির কোনো বুদ্ধিজীবী তাকে বিতর্কের মাঝে ছুঁড়ে দিতে পারে, ধোঁয়াটে যুক্তি খাড়া করতে পারে যার উত্তর দেওয়া দূরে থাক, অর্থই সে বুঝতে পারবে না। তার পরেও সত্যেই তার অবস্থান! ওরাই ভুল, সেই সঠিক। ষ্পষ্টতই যা প্রতীয়মান, যা ফালতু, যা সত্য তা সুরক্ষিত হবে। স্বতঃসিদ্ধ সত্যগুলো সত্য হবে! মাটির পৃথিবী বিদ্যমান, এর আইন পাল্টায় না। পাথর শক্ত, পানি ভেজা, উপর থেকে ফেললে কোনো বস্তু নিচেই পড়বে। ও’ব্রায়েনকে উদ্দেশ্য করেই যেনো কথাগুলো বলছে, এবং সে যেনো কোন স্বঃতসিদ্ধ বিষয় সামনে নিয়ে আসছে এমন একটি অনুভূতি নিয়ে সে লিখলো:
স্বাধীনতা হচ্ছে, দুইয়ে দুইয়ে চার হয়, এমন কথা বলার স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা যদি মেলে, বাকি সবই মিলবে।
৩৬তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময় ১৭২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (৩৫) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।