১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
৩৫তম কিস্তির লিংক
___________________________________
অধ্যায় আট
পথের নিচে কোথাও থেকে কফির পোড়া গন্ধ এসে সড়কময় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিক্টরি কফি না, আসল কফি! অজান্তেই থমকালো উইনস্টন। দুই সেকেন্ডের মতো হবে, এরই মধ্যে সে তার শৈশবের প্রায় ভুলে যাওয়া এক জগতে ফিরে গেলো। ঠিক তখুনি কাছে কোথাও দরজা লাগানোর সপাট শব্দে গন্ধটা কেটে গেলো, যেনো ওটা গন্ধ না, ছিলো শব্দ।
ফুটপাত দিয়ে কয়েক কিলোমিটার হেঁটেছে সে। পায়ের ঘা ব্যাথায় টনটন করছে। গত তিন সপ্তাহে কমিউনিটি সেন্টারে সান্ধ্যকালীন কর্মসূচিতে এটি তার দ্বিতীয় অনুপস্থিতি। অপরিনামদর্শীর কাজ, কারণ উপস্থিতির বিষয়ে সতর্ক নজরদারী চলে। নীতিগতভাবে পার্টির সদস্যদের কোনও বাড়তি সময় থাকেনা, বিছানায় ছাড়া অন্য কোনও সময়ই একা হওয়ার সুযোগ নেই। ধরেই নেওয়া হয় কাজ, খাওয়া আর ঘুমের বাইরে সাধারণ কিছু বিনোদনমূলক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া চলবে; একাকীত্বের আভাস দেয় এমন কিছু করা, এমনকি একা একা হেঁটে যাওয়াও কিছুটা বিপদের। নিউস্পিকে একটা শব্দ আছে ‘ওউনলাইফ’- যার এরা মানে দিয়েছে খামখেয়ালিপনা। কিন্তু আজ বিকেলে মন্ত্রণালয় থেকে বের হলে এপ্রিলে মৃদুমন্দ হাওয়া তাকে আহ্বান জানালো। আকাশটা এত উষ্ণনীল এবছর আর একদিনও দেখা যায়নি। হঠাৎ তার মনে এলো সেন্টারে শোরগোলের সন্ধ্যার দৃশ্য, ফালতু ঘর্মাক্ত খেলা, বকবকানি, ভাষণ, জিনের মদিরায় তেলতেলে সৌহার্দ্যতার ক্যাচক্যাচানি, এসবই অসহ্য ঠেকলো তার কাছে। ভাবাবেগে আপ্লুত সে বাস-স্টপের উল্টোপথ ধরলো, পা বাড়ালোর গোলক ধাঁধার লন্ডন নগরীর পথে। প্রথমে দক্ষিণে সেখান থেকে পূবে এরপর আবারও উত্তরে। অজানা-অচেনা সড়কগুলোতে নিজেকে হারিয়ে ফেলে, পথ কোন দিকে যাচ্ছে, কোথায় গন্তব্য তা নিয়ে এতটুকু না ভেবে ঘুরে বেড়ালো।
‘আশা যদি কিছু থাকে,’ ডায়রিতে লিখেছিলো সে, ‘তা ওই প্রোলদের মধ্যেই প্রোথিত’, রহস্যাবৃত সত্য আর স্পষ্ট বোধগম্য অযৌক্তিকতা নিয়ে সে কথাগুলোই বার বার তার মাঝে ফিরে আসছিলো। সে তখন উত্তর-পূর্বদিকের একটা ধূসর-রঙা বস্তিতে। এক সময় এখানেই ছিলো সেন্ট প্যানক্র্যাস স্টেশন। পাথুরে একটি সড়ক ধরে হাঁটছিলো। দুপাশে সারি সারি দ্বি-তল বাড়ি, ফুটপাত লাগোয়া ভাঙাচোরা দরজাপথগুলো ইঁদুরের গর্তসদৃশ। এখানে সেখানে নোংরা ঘিনঘিনে কাদাপানি, পাথরগুলোও কাদায় জড়ানো। সবগুলো দরজাপথই অন্ধকার, নিচে সরু গলিপথ থেকেও দুই দিকে ছড়িয়ে শাখাপথ। বিষ্ময়কর সংখ্যায় মানুষের গিজগিজ- যৌবন ফুটিয়ে রেখে গাঢ় লিপস্টিক মাখা মেয়েদের ঘোরাঘুরি, তাদের সঙ্গে তরুণ-যুবকদের ঘেঁষাঘেঁষি, রূপ আর যৌবন উপচে দিয়ে নারীরা হেলেদুলে যেনো দেখাচ্ছে- নারীতো এমনই, বুড়ো হাবড়ারা চওড়া পা ফেলে এদিক সেদিক ঘুরছে, নোংরা নগ্নপায়ের শিশুরা কাদায় খেলছে, আর তাদের মায়েদের ক্রুদ্ধ চিৎকারে শিউরে শিউরে উঠছে। বাড়িগুলোর এক-চত’র্থাংশেরই জানালা ভাঙা, তাতে বোর্ড লাগানো। উইনস্টনের দিকে অধিকাংশেরই নজর নেই, তবে দু-একজন কৌতুহল নিয়ে তাকাচ্ছে বটে। দুই দৈত্যাকায় নারী তাদের ইষ্টকরঙা হাত অ্যাপ্রোনের ওপর ভাজ করে রেখে দরজাপথের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। কাছে দিয়ে যেতে যেতে সেই কথপোকথনের কিছুটা শুনতে পায় উইনস্টন:
‘“হ্যাঁ,” আমি তারে বলেছি, “ওগুলো সব খুব ভালো,” আমি বলেছি। “কিন্তু তুমি যদি আমার জায়গায় থাকতে, আমি যা করেছি তুমিও একই কাজ করতে। সমালোচনা করা সহজ,” আমি বলেছি, “কিন্তু আমার যে সমস্যা সে সমস্যার মধ্যে দিয়ে তুমি যাচ্ছো না। ”’
‘ঠিক’ বললো অন্যজন। ‘তুমি ঠিক বলেছো, এটাই ঠিক’
উচ্চস্বরের কথপোকথন হঠাৎই থেমে গেলো। সে যখন ওদের অতিক্রম করে যাচ্ছিলো তখন দুই নারীই বৈরী নিরবতায় তাকে দেখছিলো। এটি ঠিক বৈরীতার নয়, ঠিক এক ধরনের যুদ্ধংদেহী দৃষ্টি, কোনো অপরিচিত জন্তু দেখে নিমিষে শক্ত হয়ে যাওয়ার মতো। পার্টির নীল আলখেল্লা পরিহিত কারো এদিকটায় খুব একটা দেখা মেলে না। তাছাড়া, সুনির্দিষ্ট কোনো কাজ না থাকলে এসব এলাকায় বিচরণ খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। টহলদার পুলিশের নজরে পড়ে গেলে ওরা থামাবে। ‘তোমার কাগজপত্র দেখতে পারি, কমরেড? এখানে তোমার কি কাজ? কাজ কখন শেষ হয়েছে? এটা কি তোমার বাড়ি ফেরার পথ?’- এমন এমন সব প্রশ্ন চলতেই থাকবে। কোনও নিয়মিত পথে বাড়ি ফিরতে হবে এমন কোনো কথা নেই: কিন্তু থট পুলিশের মনোযোগ কাড়তে এটুকু কাজই যথেষ্ট।
৩৭তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময় ১৭৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (৩৬) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।