প্রভাতফেরির ঐ দিগন্তপ্রসারী ঢলে আমিও ছিলাম,
তোমাকে দেখলাম, দূর থেকে—
ভোরের বাতাসে উড়ন্ত সান্ধ্যভাষা মাথায় নিয়ে, নিয়ে বায়ান্ন
থেকে ভেসে আসা কিছু প্রতিধ্বনিময় জীবন্ত নিঃশ্বাসের রণন
চিন্তায়, দেখছিলাম মানুষের বিহ্বল ঢল, মুখ, সারল্য ও নিবেদন—
টিএসসির মোড় থেকে সারি সারি খালি পায়ের সকাল এসে বলে গেল
আমাকে দেখাবে গোপনে, শব্দ ভেঙে গেলে, কেমন ঝুর ঝুর করে,
শৃঙ্খল ভেঙে, ধ্বসে পড়ার শব্দই হতে থাকে—
তখনি, তোমাকে দেখলাম, দূর থেকে—
ঝাঁকড়া, না আঁচড়ানো চুল আজ নমিত, মুখে সেই কাঠিন্য নেই,
দীর্ঘসাড়িতে দাঁড়িয়ে টুকে নিচ্ছো একটা একটা মায়া, শব্দ, মুখ—
গোলাপ কাঁটায় হাতের তালুতে রক্ত ফুটে উঠল সামনের তরুণীর
তোমার—তার হাতে ছেলেবেলার মতন চুমুক দিতে ইচ্ছে হলো বুঝি!
ভাষাশহীদেরা নয়, তোমার মতন যারা কোনও উপযোগ নেই
জেনেও এখনও কবিতা লেখে রাত জেগে, অক্ষরে অক্ষরে খোঁজে
পল্লব, শব্দনামস্বরজ্যোতি— জোনাক-যোনির আলো খুঁজে পায়
পথপ্বার্শে ফোটা ফুলের টোলে, তাদের নিঃসহায় চৈতন্য ও টেবিলের
পাশে, কাঁধে হাত রেখে চুপচাপ দাঁড়াতে ইচ্ছে করে আজ
প্রভাতফেরি ছেড়ে গিয়ে—
ইচ্ছে করে বলি, শৈশবে হাত কেটে গেলে রক্ত চুষে খাওয়া স্মৃতি মনে পড়া
হে অ্যাডাল্টচাইল্ড, ভাষাসৈনিক ভাই, মুক্তিরো মন্দিরো সোপানতলে বলিদান হচ্ছে
তোমার প্রতিমুহূর্তের মরণ ও আত্মপ্রবঞ্চনা-খতিয়ান—
চির প্রলম্বিত হোক শহীদী তোমার—কবরের ঘাসে নতুন প্রগলভ সবুজের মত
তোমার হাতে ফোটা তরুণীর রক্তদাগ দানা বাঁধছে নতুন কবিতার খাতায়—
যে কবিতা এ পৃথিবীর কোনও ভাষা এখনও চাক্ষুস করেনি!
প্রভাতফেরির ঐ দিগন্তপ্রসারী ঢলে আমিও ছিলাম,
তোমাকে দেখলাম, কবি, দূর থেকে…
ভীড়ের মধ্যে কবিতা খুঁজছো…
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
খালি পায়ের সকাল | শিমুল সালাহ্উদ্দিন
মাতৃভাষা দিবস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।