১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ১৯তম কিস্তি
___________________________________
এমনটাই। ভবিষ্যৎ এভাবেই নির্ধারিত। ৯৯’র পরে যেমন আসে ১০০ ঠিক তেমন নিশ্চয়তায় নির্ধারিত হয়ে আছে মৃত্যু। কারও পক্ষেই তা এড়িয়ে যাওয়ার নয়, কেউ কেউ চাইলে বড়জোর কিছুটা সময়ের জন্য স্থগিত করে রাখতে পারে। তবে কেউ যখন মৃত্যুর নিশ্চয়তা জেনেই যায় তখন আর এই বিরতিটা বাড়াতে চায় না, বরং যত তাড়াতাড়ি হয়ে যায় সেটাই কাম্য।
নিচের সিঁড়িতে দ্রুত বেয়ে ওঠা পায়ের শব্দ। আর তখনই কক্ষে জুলিয়ার সশব্দ উপস্থিতি। মোটা খাকি রঙের একটি টুলস-ব্যাগ হাতে, মন্ত্রণালয়ে মাঝে মধ্যেই ব্যাগটি ওর হাতে চোখে পড়েছে। একটু এগিয়ে গেল বাহুবন্দি করবে বলে, কিন্তু জুলিয়ার পক্ষ থেকে সমান সাড়া মিলল না, হতে পারে হাতের ব্যাগটিই তার কারণ।
‘আধা সেকেন্ড’—বলল সে। ‘আমি কী এনেছি একটু দেখাতে দাও। তুমি নিশ্চয়ই ওই ঘিনঘিনে ভিক্টরি কফি নিয়ে এসেছো। আমি ভেবেছিলাম তুমি এই কাজই করবে। ওগুলো তুমি এবার ছুঁড়ে ফেলতে পার, কারণ, আমাদের আর ওগুলোর দরকার হচ্ছে না। এগুলো দ্যাখো। ’
হাঁটু গেড়ে বসল জুলিয়া, ঝপ করে ব্যাগটি মেঝেতে রাখল, আর এর উপরের দিকে রাখা কতগুলো স্প্যানার আর স্ক্রু-ড্রাইভার তুলে আনলো। নিচে কতগুলো পরিষ্কার কাগজের প্যাকেট। প্রথম প্যাকেটটি উইনস্টনের দিকে এগিয়ে দিলে এক অদ্ভুত, অস্পষ্ট পরিচিত অনুভূতি বয়ে গেল তার ভেতর। ভেতরে ভারী বালুর মত ঝুরঝুরে কিছু একটা, যেখানেই চাপ পড়ছে, দেবে যাচ্ছে।
‘চিনি নিশ্চয়ই!’—বলল সে।
‘খাঁটি চিনি। স্যাকারিন, চিনি না। আর এখানে এক টুকরো রুটি... খাঁটি সাদা রুটি, আমাদের ওইসব ফালতু রুটি না... এই হলো ছোট এক পট জ্যাম... আর এটা হলো এক টিন দুধ... কিন্তু এটা দ্যাখো... এটা পেয়ে বেশ গর্বই বোধ করছি। বাইরে থেকে একটু পেঁচিয়ে নিতে হয়েছে, কারণ...’
কেন পেঁচিয়ে আনতে হয়েছে সে কারণটা তাকে বলার প্রয়োজন নেই। এর গন্ধ ততক্ষণে গোটা কামরা ভরিয়ে দিয়েছে। কী দারুণ গন্ধ, ছেলে বেলায় নাকে লাগা এমন গন্ধ তার জানা, কিন্তু সে স্মৃতি মাঝে মধ্যে তাকে ধরা দিয়েও হারিয়ে যায়। কোনও একটি পথ জুড়ে গন্ধ উড়ছে, কিন্তু দরজার শব্দে আবার তা উবে যাচ্ছে, অথবা কোনও এক ভিড়ের সড়কে রহস্যজনকভাবে এক লহমার জন্য চোখে পড়ে আবার দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে।
‘হুমমম... কফি’—বিড়বিড়িয়ে উঠল সে—‘আসল কফি। ’
‘এটা ইনার পার্টির কফি, এখানে পুরো এক কিলো’—বলল জুলিয়া।
‘পেলে কিভাবে?’
‘এখানে সবই ইনার পার্টির মালামাল। ওই শুয়োরদের কাছে নেই—এমন কিছু নেই, কিছুই না বুঝলে। ওয়েটার আর চাকর-বাকররা চুরি চামারি করে বেচে, ওইগুলোই জোগাড় করেছি। আর দ্যাখো—ছোট এক প্যাকেট চা-ও এনেছি। ’
পায়ের গোড়ালিতে চেপে জুলিয়ার পাশে বসে পড়ল উইনস্টন। প্যাকেটটির এক কোণা আস্তে করে ছিঁড়ে ফেলল।
‘আরে এও তো দেখছি আসল চা, ওইসব জামপাতার চা নয়। ’
‘আজকাল চায়ের বেশ যোগান। ওরা ভারত না যেন কোন দেশ দখল করে নিয়েছে’—অনিশ্চয়তার উচ্চারণ তার। ‘কিন্তু শোন প্রিয়তম। আমি বলছি, এখন উল্টো ঘুরে থাকবে তুমি। তিন মিনিটেও ফিরবে না। যাও বিছানার উল্টো দিকে গিয়ে বসো। কিন্তু জানালার কাছাকাছি যাবে না। আর আমি না বলা পর্যন্ত আমার দিকেও ফিরবে না। ’
মসলিনের পর্দার ভেতর দিয়ে বাইরে ভাবলেশহীন দৃষ্টি ফেলে বসে রইল উইনস্টন। নিচে নরম্যানের খাম্বাকায় সেই নারী তখনও বালতি থেকে কাপড় তুলছে আর শুকোতে দিচ্ছে। তখনই মুখে চেপে রাখা আরও দুটি ক্লিপ বের করে দুটি ডায়াপার ঝুলিয়ে দিল। আর মুখখানা মুক্ত হতেই গানের সুর বেরিয়ে এলো—
বলেছিল ওরা ঠিক হয়ে যাবে
বলেছিল একদিন সবই ভুলে যায়
কিন্তু সেই হাসি, সেই অশ্রুজল আজও
হৃদয়খানি মোর ভেঙ্গে দিয়ে যায়...
দ্বিতীয় খণ্ডের ২১তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৫
টিকে
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ২০) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।