১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৩৪তম কিস্তি
___________________________________
চকোলেটের শেষ টুকরোটিও যখন হাতছাড়া হয়ে গেল মা বাহু দিয়েই শিশুটিরে জড়ালেন। এর কোনও মানে তো হয় না, এতে কিছুই পাল্টে যাবে না, চকোলেটও আসবে না, শিশুটির কিংবা তার নিজের জীবন রক্ষাও পাবে না, কিন্তু তিনি সেটাই করলেন। প্রকৃতিগতভাবেই তিনি এমন। নৌকোর সেই উদ্বাস্তু নারী তার বাহু দিয়ে শিশু ছেলেটিরে আগলে ধরেছিলেন, বুলেটের সামনে সে হাত ছিল কাগজের পাতার মতো ঠুনকো। পার্টি যে ভয়াবহ কাজটি নিশ্চিত করেছে তা হচ্ছে—আপনাকে এমনভাবে প্ররোচিত করেছে যাতে আপনার কাছে ইচ্ছা বা অনুভূতিগুলো স্রেফ মূল্যহীন হয়ে যায়। আর একই সাথে এই বাস্তব জগতে আপনার সকল শক্তিই ওরা ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। একবার পার্টির আগলে পড়েছেন তো, আপনি কী ভাবলেন কিংবা ভাবলেন না, আপনি কী করলেন বা করা থেকে বিরত থাকলেন তার মধ্যে বাস্তবিক অর্থেই আর কোনও ফারাক থাকল না।
আপনাকে নিয়ে বা আপনার ওপর যা কিছু হয়েছে তা নির্মূল করা হয়ে গেছে, এখন আপনাকে কিংবা আপনার কোনও কাজের কথা কেউ আর শুনতেও পাবে না। ইতিহাসের স্রোত থেকে আপনাকে পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়েছে। আর মাত্র দুই প্রজন্ম আগের মানুষের কাছে এসবের কোনও গুরুত্ব ছিল বলেই মনে হয় না। কারণ তারা ইতিহাস বদলে দিতে চায়নি। তারা ব্যক্তিগত বিশ্বাসবোধেই পরিচালিত হতো, যা নিয়ে তাদের কোনও প্রশ্নও ছিল না। তাদের কাছে ব্যক্তিগত সম্পর্কের মূল্য ছিল, একটি অসহায়ত্বের অভিব্যক্তি, একটি আলিঙ্গন, একটি কান্না, মৃত্যুপথযাত্রীর অন্তিম ইচ্ছা—এ সবকিছুই ছিল মূল্যবান। হঠাৎই তার মাথায় খেলে গেল, মূলত প্রোলরা এখনও সেই অবস্থায় রয়েছে। তারা কোনও পার্টির প্রতি বিশ্বস্ত নয়, কোনও দেশের প্রতি নয়, নয় কোনও আদর্শের প্রতিও, তারা মূলত একে অন্যের প্রতি বিশ্বস্ত।
জীবনে এই প্রথমবার প্রোলদের ব্যাপারে তার ঘৃণাবোধ কাজ করল না অথবা মনে হলো না, ওরা এক সুপ্ত শক্তি যারা একদিন জীবনের টানে উত্থিত হবে, আর বিশ্বকে নতুন করে গড়বে। বরং তার মনে হলো প্রোলরা মানুষ হয়েই থেকে যাবে। তারা ভেতরে ভেতরে কঠিন হয়ে উঠবে না। তারা আদিম অনুভূতিকেই মনের ভেতর ধারণ করে রাখবে, যা তার নিজের পক্ষে স্রেফ সচেতন প্রচেষ্টায় শেখা সম্ভব। এসব ভাবতে ভাবতেই প্রসঙ্গহীনভাবেই তার মনে পড়ে গেল কিভাবে সপ্তাহ কয়েক আগে সে ফুটপাতে পড়ে থাকা রক্তাক্ত একটি বিচ্ছিন্ন হাত স্রেফ বাঁধাকপির ডাঁটার মতো জ্ঞান করে এক লাথিতে নর্দমায় ফেলে দিয়েছিল।
‘প্রোলরাই প্রকৃত মানুষ’—উচ্চৈস্বরে বলল সে। ‘আমরা মানুষই না। ’
‘কেন নই?’—বলল জুলিয়া, ফের ঘুম ভেঙ্গেছে তার।
এক দণ্ড ভাবল সে। ‘তোমার কি কখনও মনে হয়েছে’—বলল সে, ‘আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো কাজটি হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব এই ডেরা ছেড়ে দেওয়া আর দুজন দুজনার সঙ্গে আর কখনও দেখাটি পর্যন্ত না করা?’
‘হ্যাঁ প্রিয়তম বেশ ক’বারই সে কথা ভেবেছি। তবে আমি কিন্তু তা মোটেই করতে যাচ্ছি না, কারণ ওটা করা আর না করা সমান কথা। ’
‘আমরা ভাগ্যবান’—বলল সে, ‘কিন্তু এই পরিস্থিতি বেশিদিন এমন থাকবে না। তুমি তরুণী, তোমাকে সাধারণ আর নিষ্পাপ মনে হয়। আমার মতো মানুষগুলো থেকে দূরে থাকতে পারলে আরও পঞ্চাশটি বছর অনায়াসে বাঁচতে পারবে। ’
‘আরে না। পুরো বিষয়টি আমি ভেবে রেখেছি। তুমি কী করবে, আমি কী করতে যাচ্ছি, তার সবকিছু। এত হতোদ্যম হয়ো না। বেঁচে আমরা থাকবই, ভালো করেই থাকব। ’
দ্বিতীয় খণ্ডের ৩৬তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১২১৭ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৩৫) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।